অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ বীমা শিল্প কঠিন পরিস্থিতির মূখে পড়তে যাচ্ছে। এ শিল্পের চলমান‘মসৃন বাজার’শেষ পর্যন্ত বৈরী হয়ে ওঠছে।এমন পূর্বাভাস দিয়েছে একচ্যুরিয়্যাল কনসালটেন্ট ফিনিটি।
ফিনিটির এ বছরের পেন্ডুলাম প্রতিবেদনে এমন আশংকা তুলে ধরা হয়েছে।ডয়েসে ব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে এ প্রতিবেদন তৈরী করে ফিনিটি।
বীমা ব্যবসার নগন্য বৃদ্ধি এবং প্রিমিয়াম হার হ্রাস মিলে বীমা ব্যবসার অর্জনের মার্জিনকে সংকুচিত করবে।বিনিয়োগ থেকে আয়ও কমে যাবে।
অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ বীমা শিল্পকে এক নতুন বাস্তবতাকে মানিয়ে নিতে হবে, এমন পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরেই।এ বছরের প্রতিবেদনে সত্যিকার অর্থেই শেষ বাঁশি বাজানো হয়েছে।
চলমান বীমা ব্যাবসায় অর্জনের মার্জিন ২০১৩ সালের ১৪.৬% থেকে বেড়ে গত বছর দাঁড়িয়েছে ১৪.৯%। কিন্তু বৃদ্ধির এ হার নিচে নেমে এ বছর ১৩.৬% এবং ২০১৭ সালে ১৩.২% হবে বলে আশংকা করছে ফিনিটি।
ফিনিটির প্রধান এবং প্রতিবেদনের সহ-লেখক অ্যান্ডি কোহেন বলেন, যখন এ প্রতিবেদনের প্রতিপাদ্য সময় শুরু হতেই আমরা সত্যিকার কমতে থাকা দেখবো।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ার বীমাকারীদের জন্য বর্তমানে সর্বোচ ব্যবসা অর্জনের সুযোগে এসেছে।এ সময়কে ভাগ্যগুনে পাওয়া অতিরিক্ত সময় আখ্যায়িত করে এর এ থেকে সুবিধা আদায় করে নিতে পারে বলে মন্তব্য করেছে ফিনিটি।
বীমা ব্যবসার পরিমান ২০১৩ সালের ১৪.৬% থেকে বেড়ে গত বছর ১৪.৯% এ ওঠে। ব্যবসা বৃদ্ধির এ পূর্বাভাস আগেই দিয়েছিল ফিনিটি। কিন্তু এ পরিমান এ বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে ১৩.৬% এবং ২০১৭ সাল নাগাদ ১৩.২% নেমে যাবে বলে আশংকা করছে ফিনিটি।
বীমাকারীরা এখন তীব্র স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটছে। এ স্রোত ইক্যুইটি অর্জনে গত এক দশকের ১৫% থেকে দীর্ঘদিন চলে আসা ১১-১২% নামিয়ে আনবে আমাদের ধারণা, রিপোর্টে এমন মন্তব্য করেছে ফিনিটি।
কোহেন বলেন, প্রায় দুই বছর আগেই আমরা বীমাখাতে নিন্মমূখিতার পূর্বাভাস দেয়া শুরু করি।গত বছরটা ভালই গেছে। কিন্তু আমরা দেখছি প্রবৃদ্ধি এবং মার্জিন এ পতন। এমন একটা অবস্থা আশঙ্কা করছি আমরা।
গত বছর সামগ্রিক নথিভুক্ত প্রিমিয়াম (গ্রোস রিটেন প্রিমিয়াম-জিডব্লিওপি) মাত্র ১% বেড়েছে।এ বছর ১.৭% এবং আগামী বছর ২.৪% বাড়বে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বীমাদাবির স্ফিতি বিবেচনা করলে প্রকৃত প্রিমিয়াম হারের পরিবর্তন এ বছর-২%, আগামী বছর-১.৬% এবং ২০১৭ সালে-১.৫% হবে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
গাড়িবীমার জিডব্লিওপি বীমাখাতের অর্জিত মোট প্রিমিয়ামের ২২%।গত বছর গাড়িবীমার জিডব্লিও’র প্রবৃদ্ধি ১% তেই ঠেকে থাকে।এটা ছিল এক দশকের মধ্যে সর্বনিন্ম।আবাসন এবং অন্যান্যখাত কিছুটা ভাল অবস্থানে থাকলেও আগের বছরের তুলনায় ছিল নিন্মমূখী।
বাণিজ্যিক খাতও দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে।
ফিনিটির বিশ্বাস, ব্যক্তিগত বীমাখাতে নিন্মমূখী পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে একগুচ্ছ প্রতিবন্ধকতা কার্যকর থাকবে।
বীমাখাতে গাড়িবীমার অংশ যদিও খুব কম তারপরও এটা বড় হতে পারতো।
যুবকদের ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রমেই কমে যাচ্ছে, রাস্তায় গাড়ি চালানোর ঝুঁকি কমিয়ে দিচ্ছে টেলিমেটিকস। এছাড়াও চালকবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামছে।
আবাসন বীমাখাতেও প্রতিবন্ধকতা দেখা যাচ্ছে।মানুষের বাড়ি কেনার সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে আবাসন বীমাখাতে মন্থরতা দেখা দিচ্ছে।এ ধরণের ছোটখাট কিছু লক্ষণ একসাথে মিলে একসময় নিন্ম প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করবে।
ফিনিটির ধারণা, কোম্পানিগুলোর বীমা দাবির খরচ কমানোর প্রতি গুরুত্ব দেয়ার এটাই উপযুক্ত সময়।তবে এ খরচ কমাতে হবে গ্রাহকদের না চটিয়ে। কিন্তু কিভাবে এ কাজটা করা যায় সেটাই হচ্ছে চ্যালঞ্জে। তবে এটা করতে হবে।
কেননা বীমা দাবি পরিশোধই বীমাকারীর সবচেয়ে বড় ব্যয়ের খাত।প্রিমিয়ামের ৬০% থেকে ৮০% ব্যয় হয় বীমা দাবি পরিশোধ করায়।
কোহেন বলেন, বীমা ব্যবসার শীর্ষ রেখা উপরে ওঠছে না এবং প্রিমিয়াম হারও বাড়ছে না। এ সব বিবেচনায় নিয়েই আমরা বলছি বীমাকারীদের বীমাদাবির প্রতি নজর দেয়ার এটাই সঠিক সময়।
এমনকি ছোটখাট কোন উন্নয়নও লাভ অর্জনে অর্থবহ অবদান রাখতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বীমাদাবি সংস্কার কর্মসূচি বীমা খাতকে শক্ত অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে পারে বলে ফিনিটির প্রত্যাশা।
সাধারণ বীমাকারীদের সামনে কঠিন সময় আসছে বললেও আতঙ্কিত হওয়ার মতো নয় বলে জানিয়েছে ফিনিটি।কোহেন বলেন, পরিস্থিতিটা কঠিন হয়ে ওঠছে তবে তা ধ্বংসাত্মক কিছু হয়ে ওঠবে না।বীমাকারীদের তীব্র স্রোতের বিরুদ্ধে সাতার কাটতে হবে তবে ভরাডুবি হবে এমন কিছু দেখছি না।