৪ কোটি টাকা বাকী ব্যবসা করেও দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের এমডি

৪ কোটি টাকা বাকি ব্যবসা করার অভিযোগ থাকার পরও দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি) পদে নিয়োগ পেয়েছেন কাজী মোকাররাম দাস্তগীর। প্রতিষ্ঠানটির এক অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনে (সূত্র: ডিজিআইসি/এইচও/অডিট-০১/২০১৪) তার বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৩২ লাখ ৬৩ হাজার টাকার অনিয়ম বেরিয়ে এসেছে। সূত্র জানায়, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডে শুরু থেকেই চাকরি করে আসছেন কাজী মোকাররাম দাস্তগীর। বর্তমানে তিনি কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রিন্সিপাল শাখার প্রধান। কতিপয় পরিচালকের সঙ্গে রয়েছে তার বিশেষ সখ্যতা। এ সখ্যতার কারণে বাকী ব্যবসা করে তিনি শুধু পারই পেয়ে যাচ্ছেন না, কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী হিসেবে নিয়োগও পেতে যাচ্ছেন। সূত্র মতে, এ বছরের মার্চ এপ্রিল মাসে প্রধান কার্যালয় থেকে দু’জন কর্মকর্তাকে প্রিন্সিপাল শাখাটিতে তদন্ত করতে পাঠানো হয়। তদন্ত  শেষে ওই দু’জন কর্মকর্তা গত ৬ এপ্রিল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে (সূত্র:ডিজিআইসি/এইচও/ অডিট-০১/২০১৪)। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০০০ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রিন্সিপাল শাখায় মোট প্রিমিয়াম বাকী রয়েছে ৪ কোটি ৩২ লাখ ৬৩ হাজার টাকার। এর মধ্যে ২০১১ সালেই প্রিন্সিপাল শাখায় বাকী ব্যবসা করা হয়েছে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার। উল্লেখ্য এর আগে ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি বকেয়া এ প্রিমিয়ামের টাকা আদায়ে মোকাররাম দাস্তগীরকে চিঠি দেয়া হয়। এ চিঠির সূত্র ধরে আইডিআরএর কাছে অভিযোগ করা হলে, আইডিআরএর একটি তদন্ত দল কোম্পানিতে তদন্ত করে। অথচ অদৃশ কারণে আইডিআরএর তদন্ত দলের তদন্ত প্রতিবেদনে বাকী ব্যবসার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। আইডিআরএর তদন্ত দলকে বিশেষভাবে সন্তুুষ্ট করায় প্রিমিয়াম বাকী নেই এমন প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ২০১৩ সালের ওই প্রতিবেদন অনুসারে বাকীর পরিমাণ ছিল  ৪ কোটি ৪১ লাখ ১১ হাজার টাকা। উল্লেখ্য, প্রিমিয়ামের এ টাকা বাকী রাখা না হলে ভ্যাট ও স্টাম বাবদ সরকারের রাজস্ব আয় হতো প্রায় ৯০ লাখ টাকার ওপরে । অন্যদিকে বাকী ব্যবসার বিষয়ে কোম্পানিটি আইডিআরকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আসছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বাকী ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্য জানতে চিঠি দেয়া হলে, আইডিআরএকে জানানো হয় কোম্পানিতে কোনো বকেয়া নেই। আইডিআর থেকে  ২০১১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাকী সংক্রান্ত এ তথ্য জানতে চাওয়া হয়।  আরো উল্লেখ্য, মোকাররাম দাস্তগীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তা তদন্তে একাধিকবার আবেদন করা হলেও অদৃশ্য কারণে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সরকারে এ সংস্থাটি থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্লেখ্য মোকারাম দাস্তগীরের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ করা হয় ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি। আর এ বিষয়ে সর্বশেষ অভিযোগ করা হয় ২০১২ সালের ১৪ জানুয়ারি। সূত্র জানিয়েছে, ২০১১ সালের প্রথম পাঁচ মাসেই মোকাররাম দাস্তগীর প্রায় আড়াই কোটি টাকার প্রিমিয়াম বাকী রাখেন। এই পাঁচ মাস তিনি আইডিআর থেকে কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে দায়িত্ব পালনের অনুমোদন পান। তবে তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করেন ছয় মাস। প্রতি বছরই কোম্পানির পক্ষ থেকে বাকি আদায়ে জন্য সতর্ক করে চিঠি দেয়া হলেও বাকি আদায়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ওই শাখার প্রধান মোকাররাম দাস্তগীর। অন্যদিকে অদৃশ্য কারণে কোম্পানির পরিচালনা পরিষদ বিপুল অংকের প্রিমিয়ামের টাকা বাকি রাখার পরও তাকেই এমডি করতে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। দেশ জেনারেলের প্রধান কার্যালয়ের ওই তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে আরো জানা গেছে, প্রিন্সিপাল শাখায় মার্কেটিং বিভাগে মোট ৬২ জন কর্মকর্তা কর্মচারি নিয়োগ দেন মোকাররাম দাস্তগীর। এর মধ্যে হাজিরা খাতায় নাম পাওয়া গেছে ১৪ জন কর্মকর্তার। যার মধ্যে নিয়মিত অফিস করেন তিন চারজন। এর মধ্যে মোকারাম দাস্তগীরের বেতন পান এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রতি মাসে তার প্রিমিয়াম আয়ের টার্গেট ৭ লাখ টাকা। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, শাখাটিতে ধিরে ধিরে ব্যবসা কমে যাচ্ছে। অধিকাংশ কর্মকর্তাই ব্যবসা না থাকার জন্য কোম্পানি ছেড়ে চলে গেছে। প্রকাশিত: ২২-৯-২০১৪