মোবাইল ফোন বীমা: চুরি বা নষ্ট হলে মূল্য ফেরত

Mobile User BDআবদুর রহমান: প্রযুক্তির অগ্রগতিতে প্রত্যাহিক জীবনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ। তবে এরই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এসবের চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। এছাড়া নানাভাবেই নষ্ট হয়ে যায় মূল্যবান মোবাইল ফোন। আর এই চুরি ও নষ্ট হয়ে যাওয়ার লোকসান পোষাতে দেশের নন-লাইফ বীমা কোম্পানিতে রয়েছে বীমা করার সুবিধা। মোবাইল ফোনের ক্রয়মুল্যের উপর ২% প্রিমিয়াম দিয়ে এই বীমা করা যায়। আর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ফেরত পাওয়া যায় মোবাইল বা ল্যাপটপের পূরো মূল্যই। অথচ সচেতনতার অভাবে অধিকাংশ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারি এই বীমা সুবিধা গ্রহণ করেন না। তাছাড়া অদক্ষতার কারণে কোম্পানিগুলোও এই বীমা করতে আগ্রহ দেখায় না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপের বীমায় ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বিপুল পরিমাণ গ্রাহকের এই খাতে মোটা অংকের প্রিমিয়াম আয়ের সুযোগ রয়েছে বীমা কোম্পানিগুলোর। এর জন্য প্রয়োজন গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পলিসি বিক্রিতে কোম্পানিগুলোর দক্ষতা আরো বাড়ানো। তবে বীমা নির্বাহীরা অভিযোগ করেন, অনেক গ্রাহক ভূয়া ক্লেইম করেন বলে তারা এই বীমায় বেশি আগ্রহী হন না। জানা গেছে, চুরি, অগ্নিকাণ্ড, বিস্ফোরণ ও অন্যান্য দুর্ঘটনায় মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই বীমা পলিসির আওতায় তার ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। অর্থাৎ উল্লেখিত কারণে কোন মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ সম্পূর্ণভাবে লোকসান হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পুরো মূল্যই পরিশোধ করা হয়। এই বীমা পলিসি গ্রহণের জন্য মোবাইল ফোনের ক্রয়মূল্যের ওপর ২% ও ল্যাপটপের ক্রয়মূল্যের ওপর ১.৫০% হারে প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হয়। প্রতি বছর এই নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রিমিয়াম দিয়ে বীমা পলিসিটি নবায়ন করা যায়। এছাড়া সরকার নির্ধারিত নিয়মে প্রিমিয়ামের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট দিতে হয়। অর্থাৎ বীমা গ্রহীতার মোবাইল ফোনের ক্রয়মূল্য যদি ৫০ হাজার টাকা হয়, তাহলে এর জন্য তাকে প্রিমিয়াম দিতে হবে (ভ্যাটসহ) এক হাজার একশ’ পঞ্চাশ টাকা। অল রিস্ক পলিসি’র আওতায়ও এই মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ বীমা সুবিধা প্রদান করে থাকে কোনো কোনো কোম্পানিগুলো। মোবাইল বা ল্যাপটপের বীমা করা হয় কয়েকভাবে। কিছু কোম্পানি রয়েছে যারা এককভাবে মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপের বীমা করে থাকে। অর্থাৎ যে কোনো ব্যক্তি এ সুবিধা নিতে পারে। আবার কিছু কোম্পানি আছে যারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই সুবিধা দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তার মোবাইল বা ল্যাপটপ বীমার আওতায় আনা হয়। অনেক মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক ও আমদানিকারক রয়েছে যারা তাদের উৎপাদিত ফোনের ওয়ারেন্টির পাশাপাশি গ্রাহককে বীমা সুবিধা দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে মোবাইল গ্রাহক নয়, প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান ওই মোবাইলের বীমার প্রিমিয়াম পরিশোধ করে। মোবাইলে সেটের দাম ও মানের ওপর এর প্রিমিয়াম হার নির্ভর করে। বীমাকারিরা জানান, ছিনতাই বা জোর করে মোবাইল কেড়ে নেয়া হলে তার ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। তবে পকেটমেরে নিলে তার ক্ষতিপুরণ দেয় হয় না। আবার কোনভাবে পড়ে মোবাইল ফোন নষ্ট হলে তার ক্ষতি পূরণ দেয়া হয়। তবে ইচ্ছা করে ভাঙলে তার ক্ষতিপূরণ নেই। মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপের বীমা সুবিধা সঠিকভাবে পেতে হলে পলিসিতে উল্লেখিত শর্তগুলো অবশ্যই মানতে হবে। বিশেষ করে মোবাইলের সম্ভাব্য সব ধরণের ক্ষতি থেকে রক্ষায় সচেতন থাকতে হবে। এছাড়া মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপের অবৈধ হস্তান্তর করা যাবে না। ২০১৩ সালে রিয়াল্টো টেকনোলজিস বাংলাদেশ লিমিটেডের সঙ্গে প্রথম সেলুলার ফোন কন্টিজেন্সি বীমা পলিসি চুক্তি স্বাক্ষর করে গ্রীন ডেল্টা। চুক্তি অনুযায়ী রিয়াল্টো টেকনোলজির মাধ্যমে বিক্রিত সকল 'প্রেস্টিজিও' ব্র্যান্ডের স্মার্ট ফোন এবং ট্যাবলেট পিসি গ্রীন ডেল্টার বীমার আওতায় পড়ে। গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের ডেপুটি সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শুভাশিষ বড়ুয়া জানান, এই পলিসির আওতায় মোবাইল বা ট্যাবলেট পিসি’র স্ক্রিন প্রোটেকশন ছাড়াও অফিস থেকে চুরি ও আগুণে পুড়ে গেলে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। পাশাপাশি গ্রাহককে পিপলস পার্সোনাল এক্সিডেন্ট পলিসি সুবিধা দেয়া হয়। কোম্পানি এক বছরের গ্যারান্টি দিলেও গ্রাহক চাইলে নির্ধারিত প্রিমিয়াম দিয়ে বীমা কাভারেজের সময় বাড়াতে পারে। পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কিউএএফএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, মোবাইল ফোন বর্তমানে সবার হাতে হাতে দেখতে পাওয়া যায়। আর ল্যাপটপের সংখ্যাও কম নয়। মূল্যবান এসব সম্পদ রক্ষায় বীমা খাত ভালো অবদান রাখতে পারে। তবে এজন্য প্রয়োজন সবার দৃষ্টিভঙ্গীতে পরিবর্তন আনা। নিয়মের বেড়াজালে বন্দি না রেখে দক্ষ জনশক্তিকে এগিয়ে আসার সুযোগ করে দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, অনেক সময় গ্রাহক তার মোবাইল ফোনটি বাসায় বা অন্য কোথায় লুকিয়ে রেখে বীমা দাবি করে। এ ধরণের জালিয়াতির কারণে বীমা কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের দাবিতে সহজে আস্থা রাখতে পারে না। যার কারণে প্রকৃত দাবিদারও অনেক সময় ভোগান্তিতে পড়ে যায়। আর বীমা কোম্পানিগুলোও এতে আগ্রহ হারায়। গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফারজানা চৌধুরী বলেন, মোবাইল ফোন বীমা একটি সম্ভাবনাময় খাত। বর্তমানে ট্র্যাকিং ডিভাইস থাকায় আমরা মোবাইল ইন্স্যুরেন্স পলিসি চালু করেছি। এর কারণে ক্লেইম পরিশোধ নিয়ে কোন সমস্যা হয় না।তবে আমরা এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ বীমা সুবিধা দিচ্ছি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পরিসংখ্যান মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেশে মোট মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১৩ কোটি ১৯ লাখ ৫৬ হাজার। আর ফেব্রুয়ারিতে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৫৫ লাখ ১২ হাজার। আগামী পাঁচ বছর মোবাইল ফোন বীমার বিশ্ব বাজার ১০ শতাংশ হারে (সিএজিআর) বৃদ্ধি পাবে বলে কাস্টম মার্কেট ইনসাইট এর ‘মোবাইল ফোন ইন্স্যুরেন্স ইকোসিস্টেম: ২০১৫-২০২০- অপারচুনিটিস, চ্যালেঞ্জেস, স্ট্যাটেজিস অ্যান্ড ফোরকাস্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রত্যাশা করা হয়। সেখানে আরো বলা হয়, ২০২০ সাল নাগাদ মোবাইল ফোন বীমা বাজারের অর্থের পরিমাণ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে।