প্রিমিয়াম জমার পদ্ধতি সহজ করলে গ্রাহক বাড়বে: গোলাম কিবরিয়া
বাংলাদেশের ক্ষুদ্রবীমার সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে বিশেষ আয়োজন করেছে দেশের প্রথম এবং একমাত্র বীমা ভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। বিশেষ আয়োজনের এ পর্বে থাকছে ক্ষুদ্রবীমার ওপর মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের অভিমত। রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. গোলাম কিবরিয়া’র এই অভিমত নিয়েছেন আবদুর রহমান। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য অভিমতটি তুলে ধরা হলো:
রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, ক্ষুদ্রবীমার সুবিধা হলো এর মাধ্যমে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের সবাইকে যুক্ত করা যায়। দেশের সবাই একশ’ বা দুইশ’ বা পাঁচশ’ টাকা পর্যন্ত কিস্তি দিয়ে এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। মূলত সবাইকে বীমার আওতায় আনতে ডেল্টা লাইফ গণ গ্রামীণ বীমা নামে প্রথম ক্ষুদ্রবীমা চালু করে। প্রথম দিকে পঞ্চাশ টাকা থেকে শুরু করে বর্তমানে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক কিস্তিকে ক্ষুদ্রবীমা ধরা হয়।
তবে ক্ষুদ্রবীমার সমস্যা হলো প্রতি মাসেই কিস্তি দিতে হয়। এই মাসিক কিস্তি দিতে গিয়ে অনেক পলিসি ল্যাপস হয়ে যায়। দশ বছরের একটি পলিসিতে গ্রাহককে একশ’ বিশটি কিস্তি দিতে হয়। এর কারণে তাদের সমস্যা হয় এবং অনেকে কিস্তি দেয়া বন্ধ করে দেয়।তবে ক্ষুদ্রবীমা কোম্পানির ‘ক্যাশ ফ্লৌ’র জন্য ভালো। প্রিমিয়াম বাড়ানোর জন্যও এটি একটি সম্ভাবনাময় মাধ্যম। প্রিমিয়াম জমার সহজ মাধ্যম থাকলে গ্রাহক বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন গোলাম কিবরিয়া।
তিনি আরো বলেন, বীমা কোম্পানির সঙ্গে গ্রাহকের যোগাযোগ সহজ হলে পলিসি ল্যাপস হওয়া কমে যায় এবং গ্রাহক আগ্রহী হয়। কিস্তির টাকা জমা দেয়ার পর গ্রাহক যখন নিশ্চিত হতে পারবে তখন তাদের আস্থা বাড়বে। প্রিমিয়াম জমার পর স্বয়ংক্রিয় বার্তার মাধ্যমে গ্রাহককে বিষয়টি নিশ্চিত করা যেতে পারে। রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বর্তমানে বিকাশসহ ব্যাংকের বিএফ-১০ ও জিএম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রিমিয়াম জমা নিচ্ছে। এতে করে কিস্তি জমা দিতে গ্রাহকের কষ্ট কম হচ্ছে এবং তারা নিশ্চিন্ত হতে পারছে।
রূপালী লাইফের সিইও বলেন, কিছু প্রতিষ্ঠান হয়তো ক্ষুদ্রবীমার গ্রাহককে ঠিকমতো মুনাফা দিতে পারছে না। তবে রূপালী লাইফ তার গ্রাহকদের ভালো মুনাফা দিচ্ছে। প্রতি বছরই এই লভ্যাংশ ঘোষণা করা হচ্ছে। ল্যাপস পলিসির সংখ্যা কমিয়ে চালু পলিসির সংখ্যা বাড়াতে পারলে আরো ভালো মুনাফা দেয়া সম্ভব হবে। সম্ভবনাময় এই ক্ষুদ্রবীমায় বর্তমানে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা আছে উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে বীমা খাত হবে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ খাত। ব্যাপক সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান হবে এই খাতে। তবে এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বীমা ব্যবসার ক্ষেত্রে গ্রাহক, বীমাকর্মী ও মালিক সবার স্বার্থ রক্ষা করতে হয়। রূপালী লাইফে খরচের নির্ধারিত সীমার কম ব্যয় করা হচ্ছে। এখানে মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স ও ম্যাক্রো ইন্স্যুরেন্সকে আলাদা করে দেখা হয় না। সবই প্রিমিয়াম হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে বর্তমানে বীমা খাতের অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্র কিছুটা সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। তাই আগের মতো লভ্যাংশ দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। আগে ব্যাংকগুলো ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ লাভ দিত এখন তার পরিমাণ ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
রূপালী লাইফের সিইও গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমি মনে করি ক্ষুদ্রবীমা ক্যাশ ফ্লৌ’র জন্য ভালো। তাছাড়া ক্ষুদ্রবীমার ক্ষেত্রে গ্রাহককে একবারে টাকা দিতে হয়। একারণে বিনিয়োগ করতে সুবিধা হয়। কিন্তু ক্ষুদ্রবীমা পলিসি যখন ল্যাপস হয় তখন তা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তবে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে ক্ষুদ্রবীমা পরিচালনা করতে পারলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় রূপালী লাইফে ক্ষুদ্রবীমার পলিসি ল্যাপসের হার কম বলেও জানান তিনি।
বীমা কোম্পানির মাঠকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে গোলাম কিবরিয়া বলেন, মাঠকর্মীদের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। এর কোন বিকল্প নেই। মাঠকর্মীরা বীমা সম্পর্কে যত ভালো জানবে কাজও তারা তত ভালো করতে পারবে। রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বীমা প্রতিনিধিদের প্রতিমাসে বিশেষ প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সারা বছরই তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কোম্পানির নিজস্ব ট্রেইনিং ইউনিট রয়েছে যার মাধ্যমে বীমা প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের বীমা খাত বিশেষ করে ক্ষুদ্রবীমার অবস্থান তুলে ধরে রূপালী লাইফের সিইও বলেন, ভারত ক্ষুদ্রবীমাকে একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে ধরে নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তাদের বিপুল সংখ্যক জনগণ ক্ষুদ্রবীমার সঙ্গে জড়িত। ফিলিপাইনেও ক্ষুদ্রবীমার অবস্থা অনেক ভালো। তবে আশার আলো হলো- আমরা এগিয়ে আসছি। সরকারও এগিয়ে আসছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশেও ক্ষুদ্রবীমা এগিয়ে যাবে।
বিদেশী ক্ষুদ্রবীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের সম্পর্কের বিষয়ে গোলাম কিবরিয়া বলেন, ক্ষুদ্রবীমা পরিচালনার জন্য বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আমাদের তেমন কোন যোগাযোগ হয়নি। ক্ষুদ্রবীমার বিষয়ে আমাদের দেশের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নির্দেশনা ও পরামর্শ নিয়ে কাজ করছি। দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অবস্থান প্রায় একই রকম।
ক্ষুদ্রবীমার ওপর আন্তর্জাতিক কোন সম্মেলনে যোগদান করেছেন কিনা এবং এ বিষয়ে একাডেমিক কোন শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ আছে কিনা এমন প্রশ্নে গোলাম কিবরিয়া বলেন, বেশ কয়েকটি দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ হয়েছে। তবে ক্ষুদ্রবীমার ওপর শুধুমাত্র মালয়েশিয়ার একটি অনুষ্ঠানে যোগদান করা হয়েছিল। ক্ষুদ্রবীমা পরিচালনায় অভিজ্ঞতা থাকলেও এ বিষয়ে একাডেমিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ হয়নি বলেও জানান তিনি।
ক্ষুদ্রবীমার উন্নয়নে কোম্পানি এবং ব্যক্তিগত পরিকল্পনার বিষয়ে গোলাম কিবরিয়া বলেন, নিয়মের মধ্যে থেকেই আমরা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ গ্রাহককে সক্রিয় রাখার চেষ্টা করছি। গ্রাহকের সুবিধার্থে আমরা প্রিমিয়াম জমা নেয়ার জন্য সহজ উপায় অবলম্বনের চেষ্টা করছি। এজন্য বিকাশ ছাড়াও ব্যাংকের বিএফ-১০ ও জিএম অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছি। প্রিমিয়াম জমা দেয়ার আরো সহজ মাধ্যম বের করার চেষ্টা করছি। যাতে গ্রাহক খুব সহজে প্রিমিয়াম জমা দিতে পারে এবং অর্থের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারে।