ডেস্ক রিপোর্ট: অনাবৃষ্টি বা খরায় ক্ষতিগ্রস্ত আফ্রিকার কৃষকদের রক্ষায় মোবাইল ইন্স্যুরেন্স চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে চাষীদের খুব সহজে এবং অল্প খরচে কৃষি বীমা সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। কেনিয়া, ইথিওপিয়া, কঙ্গো, রুয়ান্ডা, তানজানিয়া ও উগান্ডায় এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে। তবে অফ্রিকার অন্যান্য দেশেও এই বীমা প্রকল্পের চাহিদা বাড়ছে।
বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে আফ্রিকা অঞ্চলের মানুষদের বড় একটি অংশ কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। তবে আফ্রিকা ও মধ্য-প্রাচ্যের এই চাষীদের মাত্র ৬ শতাংশের কৃষি বীমা আছে। নতুন এই মোবাইল ইন্স্যুরেন্স প্রকল্প কেনিয়ার প্রান্তিক শ্রেণীর চাষীদের খরাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিপরীতে কৃষি উৎপাদন নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে ।
পশ্চিমা দেশগুলোতে গত কয়েক দশকে ‘ইন্স্যুরেন্স ম্যান’ বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছিল। দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খরচ ও বেকারত্বের বিপরীতে বীমা সুবিধার দিতে ওই কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধিরা সপ্তাহ ভিত্তিতে ক্ষুদ্র অংকের প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতো। আর একুশ শতকের জন্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেই মডেল গ্রহণ করছে কেনিয়া।
চরম আবহাওয়ার ঘটনার বিপরীতে কৃষকরা এক একরের মতো অল্প জমিও বীমার আওতায় আনতে পারে। এর জন্য কৃষককে নিবন্ধিত বীমা কোম্পানিকে সার ও বীজ কেনার ওপর ৫ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। আর বীমা কোম্পানিটি মোবাইফর ফোনের টেক্সট মেসেজের বা খুদে বার্তার মাধ্যমে কৃষকের সঙ্গে এসব বিষয়ে যোগাযোগ করে।
২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো কেনিয়ায় স্বল্প পরিসরে এই বীমা পণ্য চালু করা হয়। তবে ক্রমেই এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে এই বীমা দাবির জন্য কোন ফরম ব্যবহার করা হয় না। স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দাবির বিষয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পরে মোবাইল মানি আকারে দাবির অর্থ বিতরণ করা হয়।এই পদ্ধতি বীমা ব্যবসা পরিচালনার খরচ কমিয়েছে এবং কৃষকের ভুল দাবির সম্ভাবনাও দূর করেছে।
বর্তমানে কেনিয়ার বীমা বাজারে শীর্ষে অবস্থান করছে ‘সাফারিকম’। তবে ইউএপি ইন্স্যুরেন্স এবছর কঙ্গো, রুয়ান্ডা, তানজানিয়া ও উগান্ডায় এই পলিসি চালু করেছে। এই ধরণের বীমার উদ্দেশ্য হলো- ভালো ও খারাপ যেকোন আবহাওয়ার বছরে প্রান্তিক চাষীদের সহযোগিতা করা।
খারাপ আবহাওয়ার কারণে ফসল উৎপাদনে ব্যর্থ হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদানের মাধ্যমে এই বীমা প্রকল্প কৃষককে তার জমিতে আরো বেশি বিনিয়োগ করতে সাহস যোগায়। রোগ-বালাই ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণসহ অনেক কারণেই ফসল উৎপাদনের চেষ্টা বিফলে যেতে পারে। তবে খরা বা অনাবৃষ্টি হচ্ছে এই অঞ্চলের সাধারণ সমস্যা।
মোবাইল ইন্স্যুরেন্স আফ্রিকার কৃষকদের বীমা করার একমাত্র উদ্ভাবনী উপায় নয়। ইথিওপিয়ার ১৫ মিলিয়ন ক্ষুদ্র চাষীকেও বীমার আওতায় আনার জন্য মার্চের শুরুতে পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। ইথিওপিয়দের একটি দল, ডাচ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কৃষকদের বীজ, সার ও কীটনাশকসহ সব ধরণের কৃষি উপকরণের মূল্যের ওপর ১০ শতাংশ প্রিমিয়াম প্রদান করতে বলছে।
ইথিওপিয়ার প্রান্তিক চাষীরা প্রতি মৌসুমে গড়ে ২ হাজার ৫শ’ থেকে ৩ হাজার বির বা ১১৫ থেকে ১৪০ মার্কিন ডলার কৃষি কাজে ব্যয় করে। এই বীমা পলিসি গ্রহণের পর প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে যদি ফসল বিনষ্ট হয় তাহলে ইথিওপিয়ান ইন্স্যুরেন্স করপোরেশনের কাছ থেকে কৃষকরা নতুন করে ফসল লাগানোর জন্য ক্রয়মূল্য পাবে।
ইথিওপিয়ায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করার বেশি সুযোগ নেই। কারণ, দেশটির সরকার এখনো টেলিকম খাতের ওপর নিয়ন্ত্রণ রেখেছে। এর ফলে আফ্রিকার অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞ বেসরকারি কোম্পানি পরিচালিত মোবাইল ফোনের উন্নয়নের সুবিধা গ্রহণ করতে পারেনি। ইথিওপিয়ার শুধুমাত্র ৩৪ শতাংশ কৃষকের হ্যান্ডসেট আছে। আর কৃষকদের বড় অংশই আধুনিক কোন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের সুযোগ পায় না।
এদিক থেকে ইথিওপিয়া এখনো সুযোগ-সুবিধার বাইরে রয়েছে এবং প্রতিবেশি দেশের অনেক কৃষকের মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। সুতরাং কেনিয়ায় প্রযুক্তিগত পরীক্ষণের সুফল থেকে ইথিওপিয়ার কৃষকরা সুবিধা গ্রহণ অব্যাহত রাখতে ভাল অবস্থানে রয়েছে। অর্থাৎ একসময় ইথিওপিয়ার চাষীরাও এই সুবিধা পাবে। (সূত্র:বিবিসি)