সৌদি আরবে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা, লোকসানে বীমা খাত

ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদনকারি দেশ সৌদি আরবে ক্রমেই সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছর এই দুর্ঘটনার সংখ্যা ১.১ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে লোকসান গুণতে হচ্ছে দেশটির বীমা ব্যবসায়ীদের। রিয়াদ ভিত্তিক নাজম ইন্স্যুরেন্স সার্ভিসের পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে সম্প্রতি বীমা কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, ২০১১ সালে রাজ্যজুড়ে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছিল ৩ লাখ ৬ হাজার। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এই দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ। সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, গত বছর রাজ্যজুড়ে ৯ লাখ ৬২ হাজারেরও বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর বিপরীতে বিগত পাঁচ বছরে মোটর বীমা দাবি বাবদ কোম্পানিগুলোকে সম্মিলিতভাবে মোট ২৫ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল বা ৬.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র গত তিন বছরেই কোম্পানিগুলোকে মোটর বীমা দাবি পরিশোধ করতে হয়েছে ২০ বিলিয়ন রিয়ালেরও বেশি। এই বিপুল পরিমাণ বীমা দাবি পরিশোধ করতে গিয়ে কোম্পানিগুলোকে প্রতিবছর ৯৩ শতাংশের বেশি লোকসান গুণতে হচ্ছে। এছাড়া বছরজুড়ে বিক্রয় ও বিপণন এবং সাধারণ ও প্রশাসনিক ব্যয় বাবদ খরচ হয় মোট বিক্রির ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। অর্থাৎ সব মিলিয়ে বীমা কোম্পানিগুলোর ক্ষতির অনুপাত একশ’ শতাংশেরও বেশি। এদিকে রাজ্যজুড়ে প্রতিবছর দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশটির বীমা ব্যবসায়িরা। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে বীমা কোম্পানিগুলোর নির্বাহী কমিটির মুখপাত্র আদেল আব্দুল আজিজ আল-ইসসা এক বিবৃতিতে রাজ্যের সড়ক নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহবান জানিয়েছেন। বীমা ব্যবসায়িরা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির প্রবণতা বীমা খাতের জন্য একটি খারাপ সংবাদ। এ কারণে এরইমধ্যে খুচরা যন্ত্রাংশে উচ্চমূল্য আঘাত হেনেছে। প্রায় পাঁচ বছর আগে ১ লাখ রিয়াল রক্তপণ থেকে বেড়ে ৩ লাখ রিয়ালে দাঁড়িয়েছে। জালিয়াতির ঘটনাও বেড়েছে। লাল আলো চলমান অথবা মাদকদ্রব্য বা ওষুধের প্রভাব থাকা অবস্থায় গাড়ি চালানো দুর্ঘটনার কারণ বলে তারা মনে করছেন। বীমা কোম্পানিগুলোর নির্বাহী কমিটির মুখপাত্র আদেল আব্দুল আজিজ বলেছেন, উল্লেখিত খরচের পরিমাণ সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত খরচ নয়। কারণ, সৌদি আরবের রাস্তায় চলমান মোট গাড়ির মাত্র ৪৫ শতাংশের বীমা করা আছে। যদিও এই রাজ্যে থার্ড পার্টি অটো ইন্স্যুরেন্স করা বাধ্যতামূলক তথাপি যারা এই ধরণের বীমা কিনতে ব্যর্থ তাদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ দুর্বল। উল্লেখ্য, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গত বছরের প্রতিবেদন অনুসারে, সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুর দিক দিয়ে সৌদি আরব বিশ্বের মধ্যে ২৩তম অবস্থানে রয়েছে এবং আরব দেশগুলোর মধ্যে এর অবস্থান দ্বিতীয়। ডব্লিউএইচও’র হিসাব মতে, এই রাজ্যে গড়ে প্রতিদিন ১৭ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করেন।