আইন সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে বাতি করতে হলো ননলাইফ বীমা খাতের সার্কুলার ২৪। এমনটাই মনে করছেন বীমা সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, আইডিআরএর সদস্য জুবের আহমেদ খান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে(প্রজ্ঞাপন নং-৩৯)সূত্র: জিএডি ১০০৩/২০১১ সারক নং ৬৭৩তাং ১৫-৫-২০১৪) ২৪ নং প্রজ্ঞাপনটির সকল আদেশ বাতিল করা হয়। এতে বলা হয়, ননলাইফ বীমা কোম্পানিগুলো ২০১১ সালে ২৪ নং প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকেই প্রিমিয়াম হারে বিশেষ সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ যে তারিখ থেকে বিশেষ সুবিধা বাতিল করা হয়েছিল ওই তারিখ থেকে তা আবারো চালু করা হলো। ২০১১ সালের ১৮ আগষ্ট ২৪নং প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়েছিল ।
বীমা আইন ২০১০ এর ১৭ ধারা অনুসারে, প্রিমিয়ামের নতুন মূল্যহার ধার্য করা, অথবা পরিবর্তন, সংশোধন, বাতিল বা জারি করতে হলে আইডিআরকে আগে সেন্ট্রাল রেটিং কমিটি গঠন করতে হবে। প্রিমিয়াম মূল্যহার সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত সেন্ট্রাল রেটিং কমিটির এখতিয়ারভুক্ত। কিন্তু সেন্ট্রাল রেটিং কমিটি গঠন না করেই এ সার্কুলারটি জারি করে আইডিআরএ।
সূত্র মতে, ২০১১ সালে ২৭ জানুয়ারি এম. শেফাক আহমেদ একচ্যুয়ারি সহ আরো ৩ সদস্য নিয়োগের মধ্য দিয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গঠিত হয়। কর্তৃপক্ষ গঠনের পর ওই বছরেরই আগস্ট মাসে ননলাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম আয়ের পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব বাড়াতে বিশেষ মূল্যহার তুলে দেয়া হয়।
আইডিআর ২৪ নম্বর সার্কুলার জারি হওয়ার পর ২০১১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট দায়ের করে বীমা গ্রাহক আবুল খায়ের মিল্ক প্রোডাক্ট লিমিটেড। শুনানি শেষে হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করে আদেশ দেন। অপর একটি রিট করেন পিএইচপি গ্রুপের ব্যবস্থপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন চৌধুরী। এ রিটের শুনানি শেষে ২০১১ সালের ২৮ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করেন।
এ অবস্থায় বীমা আইন ২০১০ অনুসারে সেন্ট্রাল রেটিং কমিটি গঠিত না হওয়ায় ননলাইফ বীমা খাতে প্রিমিয়াম নির্ধারণকারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। প্রিমিয়াম হার নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণকারি কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকায় এ সুযোগটি কাজে লাগায় কো্ম্পানিগুলো। অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে ননলাইফ বীমা খাত।আইডিআরএর কাছে রেট চেয়ে আবেদন করেই ব্যবসা করতে থাকে। রেটটি যাচাইয়ে আইডিআরএর কোনো সুযোগ না থাকার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের খেয়াল খুশিমতো প্রিমিয়াম নির্ধারণ করে কোম্পানিগুলো।এতে কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম আয়ে ও রাজস্ব আয়ে বিরুপ প্রভাব পড়ে। এ অবস্থা চলে আসছে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে। তবে এমন অবস্থার জন্য আইডিআরএর খামখেয়ালীপনা ও আইন সম্পর্কে অজ্ঞতাকেই দায়ি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে গত বছরের জানুয়ারিতে সেন্ট্রাল রেটিং কমিটি প্রবিধান পাস করে সরকার। একই সঙ্গে ওই বছরের এপ্রিল মাসে রেটিং কমিটি গঠনও করা হয়। কিন্তু বিশেষ মূল্যহার সংক্রান্ত ২৪ নং সার্লারের ওপর আদালতের মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় রেটিং কার্যক্রম শুরু করতে পারে না নবগঠিত সিআরসি।
পরবর্তীতে জটিলতা নিরসনে আইন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ চায় বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সরকারি এ সংস্থা। এর প্রেক্ষিতে আইডিআরএর আইন উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার শামীম খালেদ আহমেদ এক মতামতে জানান, নতুন বীমা আই্ন ২০১০ অনুসারে সেন্ট্রাল রেটিং কমিটি গঠন না করা পর্যন্ত মূল্যহার সংশোধন সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ায় এখতিয়ার আইডিআরএর নেই। ফলে ২৪ নং প্রজ্ঞাপনটি আইন সম্মত ছিল না। এ অবস্থায় ২৪ নং প্রজ্ঞাপনটি বাতিলেরর পরামর্শ দেন তিনি। এ পরামর্শ অনুসারের ২৪ নং সার্কুলারটি বাতিল করা হয় বলে সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য বীমা আইন ২০১০ এর ১৬০ ধারার ২ উপধারা (ছ) তে বলা হয়েছে, প্রণীত কোন বিধি বা প্রবিধান, এই আইনের বিধানাবলীর সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে এবং রহিত বা সংশোধিত না হওয়া পর্যন্ত, বলবৎ থাকিবে এবং এই আইনের অধীন প্রণীত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে৷
প্রকাশিত:২০১৪-১০-২০