৬০ টাকায় লাখ টাকার বীমা সুবিধা

আবদুর রহমান: বছরে ৬০ টাকা প্রিমিয়ামের বিনিময়ে এক লাখ টাকার বীমা সুবিধা পাওয়া যায়। দেশের সরকারি ও বেসরকারি নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো এ সুবিধা দিচ্ছে। পিপলস পার্সোনাল এক্সিডেন্ট (পিপিএ) নামের এই বীমা পলিসি এককভাবে অথবা দলগতভাবে গ্রহণ করা যায়। দীর্ঘ দিন ধরে এই পলিসি বাজারে চালু থাকলেও প্রচার-প্রচারণার অভাবে অনেকটা আড়ালেই রয়ে গেছে। ফলে অল্প খরচের এই বীমা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। তবে কোম্পানিগুলোর কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, বীমা সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা আর অনাগ্রহ এর মূল কারণ। নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, ‘পিপলস পার্সোনাল এক্সিডেন্ট ইন্স্যুরেন্স পলিসি’র প্রিমিয়াম ও ক্ষতিপূরণের সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে। বছরে ৬০ টাকা প্রিমিয়াম অর্থাৎ ভ্যাটসহ ৬৯ টাকা প্রিমিয়াম জমা দিয়ে যে কেউ এই পলিসি গ্রহণ করতে পারেন। অবশ্য কিছু কোম্পানিতে এই পলিসির প্রিমিয়ামের পরিমাণ ভ্যাটসহ ৭৪ টাকা। তবে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ সব কোম্পানিতে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নির্ধারিত। এক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কারণে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ভিন্নভিন্ন। কোম্পানিগুলোর দেয়া তথ্য মতে, পিপলস পার্সোনাল এক্সিডেন্ট পলিসি গ্রহীতা যদি দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ৬ মাসের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন তবে তিনি সম্পূর্ণ বীমা অংক পাবেন। আবার দুর্ঘটনার ফলে ৬ মাসের মধ্যে বীমা গ্রহীতার দু’টি চোখ অথবা দু’টি পা অথবা দু’টি হাত অথবা একটি হাত ও একটি চোখ অথবা একটি হাত ও একটি পা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বীমার পুরো টাকাই পাবেন। অন্যদিকে দুর্ঘটনার ৬ মাসের মধ্যে যদি বীমা গ্রহীতার একটি চোখ বা একটি পা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে তিনি বীমা অংকের ৫০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ পাবেন। এছাড়া দুর্ঘটনার কারণে ১২ মাসের মধ্যে পিপলস পার্সোনাল এক্সিডেন্ট পলিসি গ্রহীতা স্থায়ী ও সম্পূর্ণভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়লেও তিনি ক্ষতিপূরণ হিসেবে বীমার পুরো টাকা পাবেন। দেশের সরকারি ও বেসরকারি যেকোন প্রতিষ্ঠান থেকে এই পলিসির সুবিধা নিতে পারেন। সাধারণ বীমা করপোরেশনে এই পলিসির প্রিমিয়াম দিতে হয় ভ্যাটসহ ৬৯ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শাখায় ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রচুর এই পলিসি করা হয়ে থাকে। তবে বেসরকারি নন-লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা জানান, খরচ বেশি হওয়ায় তারা এই পলিসি বিক্রি তারা খুব একটা আগ্রহ দেখান না। ব্যক্তিগতভাবে পলিসি গ্রহণ করার চেয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই এই পলিসি করতে তারা বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রগতি ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মনিরুল ইসলাম বলেন, পিপলস পার্সোনাল এক্সিডেন্ট বীমা পলিসি গরীব জনগণ বা শ্রমিকদের জন্য করপোরেট সোসাল রেসপন্স হিসেবে এটা চালু করা হয়েছে। বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক ইত্যাদি পেশার মানুষের জন্য অল্প খরচে এই সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে এটা শুধুমাত্র এক্সিডেন্ট বা দুর্ঘটনাজনিত হতাহতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এই পলিসির ঝুঁকি ও প্রিমিয়াম নির্ধারিত। ভ্যাটসহ ৭৪ টাকায় এক লাখ টাকার বীমা সুবিধা দেয়া হয়। আবার প্রতিবছর নবায়ন করতে হয়। প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদী খানম ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে বলেন, বীমা সম্পর্কে অসচেতনতার কারণে মানুষ বড় একটা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পিপলস পার্সোনাল এক্সিডেন্ট পলিসির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে নামমাত্র প্রিমিয়ামে অর্থাৎ মাত্র ৬০ টাকায় (ভ্যাটসহ ৭৪ টাকা) বছরজুড়ে লাখ টাকার বীমা সুবিধা দেয়া হয়। কিছু শিল্প-কারখানার মালিক তাদের শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এই বীমা সুবিধা গ্রহণ করেছে। তবে অনেক শিল্প-কারখানার মালিক রয়েছে যারা শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে না। এ কারণে পিপলস পার্সোনাল এক্সিডেন্ট বীমার গ্রাহক কম। তাই আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। তবেই সম্ভব সবাইকে এই বীমা সুবিধার আওতায় আনা। অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. আনোয়ার হোসাইন ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে জানান, পিপলস পার্সোনাল এক্সিডেন্ট ইন্স্যুরেন্সে মানুষের আগ্রহ নেই। আগে আমাদের কোম্পানি এই পণ্য বিক্রি করতো। তবে বিক্রি কম হওয়া সেটা বন্ধ করা হয়েছে। মূলত মানুষের সচেতনতার অভাবে স্বল্প খরচের এই বীমা পলিসি বাজারে চলে না। তবে সরকার যদি এগিয়ে আসে এবং প্রচারণা বাড়ায় তাহলে পিপলস পার্সোনাল এক্সিডেন্ট ইন্স্যুরেন্স ভালো সাড়া ফেলবে। রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) খালেদ মামুন বলেন, অল্প পরিসরে এই পলিসি বিক্রিতে খরচ বেশি হয়। ফলে বেসরকারি কোম্পানিগুলো এতে খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। তবে ব্যাপকহারে এই পলিসি বিক্রি করা হলে প্রিমিয়াম আয়ের বড় একটি খাত হিসেবে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে। এতে কোম্পানিগুলো যেমন লাভবান হবে তেমনি সাধারণ মানুষও উপকৃত হবে। গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের এসএভিপি মাহমুদ জানান, গ্রুপ পিপলস পার্সোনাল এক্সিডেন্ট বা জিপিপিএ বীমার প্রিমিয়াম বছরে মাত্র ৬০ টাকা। আর এর বিপরীতে এক লাখ টাকা দাবি পরিশোধ করা হয়। তবে ৬০ টাকায় লাখ টাকার বীমা সুবিধা দেয়া হলেও সচেতনতার অভাবে মানুষ এটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাছাড়া প্রচার-প্রচারণার অভাবে এই সুবিধা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণাও কম।কোম্পানির পক্ষ থেকে এই পলিসি সম্পর্কে মানুষকে জানানোর চেষ্টা করা হয়। তবে আগ্রহ না থাকায় এর বিক্রি কম। সরকারের পক্ষ থেকে যদি গাড়ি বীমার মতো গ্রুপ পিপলস পার্সোনাল এক্সিডেন্ট পলিসি গ্রহণে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা তাহলে এটা বেশ ভালো চলতো। এশিয়া ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক তাবরেস হোসাইন বলেন, পিপলস পার্সোনাল এক্সিডেন্ট ইন্স্যুরেন্স এর ক্ষেত্রে ৭৪ টাকা প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বিপরীতে এক লাখ টাকা দাবি পরিশোধ করা হয়।