ক্ষুদ্রবীমাকে আলাদা উইং করে পরিচালনা করতে হবে: চৌধুরী মো. ওয়াসিউদ্দীন
বাংলাদেশের ক্ষুদ্রবীমার সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে বিশেষ আয়োজন করেছে দেশের প্রথম এবং একমাত্র বীমা ভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। বিশেষ আয়োজনের এ পর্বে থাকছে ক্ষুদ্রবীমার ওপর মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের অভিমত। পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) চৌধুরী মো. ওয়াসিউদ্দীন’র এই অভিমত নিয়েছেন আবদুর রহমান। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য অভিমতটি তুলে ধরা হলো:
পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মো. ওয়াসিউদ্দীন বলেন, ক্ষুদ্রবীমা বলতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে বোঝাবে। অর্থাৎ দশ হাজার টাকার প্রিমিয়াম হলে সেটাকে খণ্ড খণ্ড করে মাসিক ভিত্তিতে সংগ্রহ করা হবে। যাতে একজন দিনমজুর বা পরিবহন শ্রমিকের জন্যও এই প্রিমিয়াম পরিশোধ করা সহজসাধ্য হয়।
ব্যাংকের ডিপিএস এর মতো হবে ক্ষুদ্রবীমা। তবে ক্ষুদ্রবীমা যা পারবে ব্যাংক তা পারবে না। অর্থাৎ ব্যাংক যেখানে শুধু মুনাফা দিবে সেখানে ক্ষুদ্রবীমা গ্রাহককে যেমন মুনাফা দিবে তেমনি তার ঝুঁকিও বহন করবে। এটাই হলো ক্ষুদ্রবীমার মূল বৈশিষ্ট্য। তাই ব্যাংকের ডিপিএস এর চেয়ে ক্ষুদ্রবীমা লাভজনক। যদিও ব্যাংকের তুলনায় ক্ষুদ্রবীমা কম মুনাফা দেয়।
ক্ষুদ্রবীমার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বিবেচনা করে পলিসি প্রণয়ন করতে হবে। যাতে করে দিনমজুর আর পরিবহন শ্রমিক থেকে শুরু করে দেশের সব সেক্টরের মানুষ বীমার আওতায় আসতে পারে। তাহলে মানুষ পারিবারিক ও সামাজিকভাবে এগিয়ে যাবে। এতে করে দেশের অর্থনীতিও সার্বিকভাবে অগ্রগতি লাভ করবে।
ওয়াসিউদ্দীন আরো বলেন, বীমা আইনে ক্ষুদ্রবীমার কোন বিধান নেই। কোন নির্দেশনাও নেই। এ কারণে মনে করা হচ্ছে ক্ষুদ্রবীমা বাদ দেয়া হচ্ছে। আসলে ক্ষুদ্রবীমাকে একক বীমায় পরিণত করা হচ্ছে। কমিশন কম থাকায় প্রতিনিধিরা আগ্রহ হারাচ্ছে। তবে এনজিও’গুলো ঠিকই লাভ করছে। ক্ষুদ্রঋণে মধ্যসত্বভোগি আছে। তারা লোন দিচ্ছে কিন্তু ক্ষুদ্রবীমা তা করে না। তাই ক্ষুদ্রবীমার অগ্রগতির জন্য সরকারকে জোর দিতে হবে।
ক্ষুদ্রবীমায় ব্যয় বেশি- একথা সত্য। তবে ব্যাংক মুনাফা দিতে পারলে ক্ষুদ্রবীমাও পারবে। এজন্য সঠিক পরিকল্পনা ও আরো এনালাইসিস প্রয়োজন। প্রয়োজনে ব্যাংকের সঙ্গে আইডিয়া শেয়ার করতে হবে। ক্ষুদ্রবীমাকে আলাদা উইং করে পরিচালনা করতে হবে। ম্যাক্রো ইন্স্যুরেন্স থেকে মাইক্রো ইন্স্যুরেন্সের সবই আলাদা।
মাঠকর্মীদের প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরতে পদ্মা লাইফের ভারপ্রাপ্ত সিইও বলেন, ক্ষুদ্রবীমার বিষয়ে তাদের পূর্ণাঙ্গ ধারণা নেই। তাই তারা গ্রাহকদের ভুল ধারণা দিচ্ছে। এজন্য শিক্ষিতদের বীমা প্রতিনিধি বানাতে হবে। বীমা কর্মী হতে হলে এসএসসি পাশ বাধ্যতামূলক। প্রতিনিধিদের যেমন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন তেমনি তাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা পরিচালকদেরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।
জীবন বীমা কোম্পানির মোট ব্যবসা বা গ্রস প্রিমিয়ামের ৩০ শতাংশ ক্ষুদ্রবীমার প্রিমিয়াম হওয়ার বিষয়ে মনিটরিং নেই। তাই কোম্পানিগুলো এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয় না। এমন অনেক কোম্পানি আছে যাদের গ্রস প্রিমিয়ামের ১০ শতাংশও ক্ষুদ্রবীমার নয়। মূলত এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ জোর দিচ্ছে না বলে কোম্পানিগুলোও গুরুত্ব দেয় না।
বহির্বিশ্বের তুলনায় ক্ষুদ্রবীমার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান খুব একটা ভালো না। তবে কিছু কোম্পানি আছে যারা এটা নিয়ে বেশি কাজ করছে। ক্ষুদ্রবীমাকে এগিয়ে নিতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। ক্ষুদ্রবীমার জন্য সরকারকে ছাড় দিতে হবে। প্রয়োজনে ভারত বা ফিলিপাইনের মতো বাংলাদেশেও ইনসেনটিভ দিতে হবে।
আন্তর্জাতিক বা বিদেশি ক্ষুদ্রবীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের সম্পর্কের বিষয়ে চৌধুরী মো. ওয়াসিউদ্দীন বলেন, ক্ষুদ্রবীমা পরিচালনার জন্য আমরা ভারতের কোম্পানিগুলোকে মডেল হিসেবে নিয়ে কাজ করছি। তাদের সঙ্গে আইডিয়া শেয়ারের চেষ্টা করছি।
ক্ষুদ্রবীমার ওপর আন্তর্জাতিক কোন সম্মেলনে যোগদান করেছেন কিনা এবং এ বিষয়ে একাডেমিক কোন শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ আছে কিনা এমন প্রশ্নে ওয়াসিউদ্দীন বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানের অফার এসেছে। তবে অংশ নেয়া হয়ে ওঠেনি।
বাংলাদেশেও ক্ষুদ্রবীমার বিষয়ে প্রশিক্ষণের ভালো কোন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তাছাড়া সেরকম কোন পরিবেশ-পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি। তাই ব্যক্তিগতভাবে তেমন কোন প্রশিক্ষণ বা একাডেমিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ হয়নি। তবে ইন্টারনেটের বদৌলতে এ বিষয়ে জানার ভাল সুযোগ হয়েছে। আমার কাছে ক্ষুদ্রবীমা নিয়ে অনেক তথ্য আছে যেখান থেকে আমি এ বিষয়ে জানতে পারি।
কারো যদি জানার আগ্রহ থাকে তাকে বাইরে যেতেই হবে এমন নয়, ঘরে বসেও অনেক শেখার সুযোগ আছে। তবে ক্ষুদ্রবীমার বিষয়ে আমাদের আরো ভালো প্রশিক্ষণ থাকা প্রয়োজন। একজন মাঠকর্মী থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদেরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে। কারণ, ওপর থেকে ভালো নির্দেশনা আসলে কর্মীরাও ভালো কাজ করতে পারবে।
ক্ষুদ্রবীমার উন্নয়নে কোম্পানি এবং ব্যক্তিগত পরিকল্পনার বিষয়ে ওয়াসিউদ্দীন বলেন, আমরা ক্ষুদ্রবীমার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছি। আগে এর গুরুত্ব বুঝতে না পারায় অনাগ্রহ দেখিয়েছি। এখন আমরা ক্ষুদ্রবীমার ওপর কার্যক্রম আরো জোরদার করতে যাচ্ছি।
এজন্য ক্ষুদ্রবীমাকে আলাদা উইং করে পরিচালনা করা হবে। এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। মাঠকর্মী থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের সবাইকে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। দেশজুরে কোম্পানির বিশাল নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে ক্ষুদ্রবীমাকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হবে। আশাকরি আমরা সফল হবো।