শেষ হলো তিন দিনের বীমা মেলা

Insurance Fair- 2532016নিজস্ব প্রতিবেদক: বীমা পণ্য সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে তথ্য প্রদান ছাড়াও বীমা দাবি পরিশোধ, সেমিনার, র‌্যাফেল ড্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানান আয়োজনের মধ্যদিয়ে শেষ হলো বীমা মেলা। তিন দিনব্যাপী এই মেলার শেষ দিন ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তারপরও দর্শনার্থীদের তেমন সমাগম দেখা যায়নি দেশের প্রথম এই বীমা মেলায়। ‘নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য বীমা’ এই স্লোগানকে সামনে নিয়ে গত বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই মেলার আয়োজন করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । তিন দিনের এই মেলায় দেশের সরকারি ও বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি বীমা সংশ্লিষ্ট ৫০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। বীমা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা জানিয়েছে, দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বীমা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এই মেলা আয়োজন করা। তবে প্রচার-প্রচারণার অভাবে মেলায় দর্শনার্থীদের সমাগম হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বীমা কোম্পানিগুলোর কর্তাব্যক্তিরা। এ কারণে মেলার শেষ দিনে সাপ্তাহিক ছুটি থাকার পরও আশানুরূপ সাধারণ দর্শকের দেখা মেলেনি। এদিকে দেশের প্রথম এই বীমা মেলার শুরু থেকেই ব্যবস্থাপনা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বীমা কোম্পানিগুলোর কর্তাব্যক্তিরা। তারা বলছেন, লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে যে উদ্দেশ্যে মেলায় অংশ নিয়েছেন তা সফল হওয়া নিয়ে তারা সন্দিহান। তবে বীমা মেলায় নতুন পলিসি বিক্রিতে কোম্পানিগুলোর তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পাপিয়া সেনগুপ্ত বলেন, মেলায় আমরা গ্রাহকদের শুধুমাত্র বীমা পণ্য সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করেছি। বীমা সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে বা আমাদের কোন পলিসি সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে আমরা তার উত্তর দিয়েছি। আমরা এখানে কোন পলিসি বিক্রি করিনি। কোম্পানির পরিচয়টা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতেই আমরা মেলায় অংশ নিয়েছি। মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানির ট্রেইনার মো. রেজাউল ওমর জানান, বলেন, বীমা আইন অনুযায়ী মেলায় গ্রাহকদের বিশেষ কোন সুযোগ-সুবিধা দেয়ার সুযোগ নেই। তারপরও বেশ কিছু নতুন পলিসি বিক্রি হয়েছে। তবে পলিসি বিক্রির চেয়ে কোম্পানির পণ্য সম্পর্কে গ্রাহকদের ধারণা প্রদান করাই তাদের উদ্দেশ্যে। মেলায় নয়, অফিসেই তারা পলিসি বিক্রি করছেন বলে জানান রেজাউল ওমর। Insurance Fair-25032016-1তবে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসভিপি) সামিরা ইউনুস জানান, বীমা মেলায় তাদের কোম্পানি ভালো সাড়া পেয়েছে। তিন দিনে তারা ৮৫৬টি নতুন পলিসি বিক্রি করতে পেরেছেন। চাপের কারণে মেলার শেষ বেলায় এসে তারা পলিসি বিক্রি বন্ধ রাখেন। তিন দিনে তারা মোট ২৭০টি বীমা দাবি পরিশোধ করেছেন বলে জানান সাবিনা ইউনুস। মার্কেন্টাইল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপক মো. মহিউদ্দিন জানান, বীমা মেলার তিন দিনে তারা আড়াই শতাধিক নতুন পলিসি বিক্রি করেছেন। তবে মেলায় তারা কোন দাবি পরিশোধ করেননি। পলিসি বিক্রির চেয়ে তারা সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের পণ্য সম্পর্কে তথ্য সরবরাহে গুরুত্ব দিয়েছেন। ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ এর ডেপুটি ম্যানেজার (অবলিখন বিভাগ) শামসুল আলম জানান, বীমা মেলায় তারা কোম্পানির পণ্য সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচয় তুলে ধরেছেন। দর্শনার্থীরা তাদের কোম্পানির পণ্যগুলোকে জানার চেষ্টা করেছে। মূলত এটাই ছিল বীমা মেলায় তাদের অংশ নেয়ার উদ্দেশ্য। বীমা মেলায় অংশ নেয়া আলফা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, জনসচেতনতার এই মেলায় তারাও ভালো সাড়া পেয়েছেন। তিন দিনে তারা দুই শতাধিক নতুন পলিসি বিক্রি করেছেন। নিজেদের বীমা পণ্যগুলো সাধারণ মানুষের কাছে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছেন।তারা আশা করছেন, আগামীতে আরো ভালো সাড়া পাবেন। উল্লেখ্য, তিন দিনের এই বীমা মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। বুধবার সকাল ১০টায় মেলার উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। বেলা সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বীমা দাবির চেক হস্তান্তর করা হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় র‌্যাফেল ড্র। সন্ধ্যা ৬টায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া বীমা খাতে চাকরির সুযোগ সংক্রান্ত তথ্যও প্রদান করা হয়েছে এদিন। মেলার দ্বিতীয় দিন ২৪ মার্চ বৃহস্পতিবার ও তৃতীয় দিন ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় বীমা বিষয়ে সেমিনার। এতে শুধুমাত্র আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশ নেন। এছাড়া প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনেও বীমা দাবির চেক হস্তান্তর করা হয়। আয়োজন করা হয় র‌্যাফেল ড্র, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বেকারদের জন্য বীমা খাতে চাকরির সুযোগ সংক্রান্ত তথ্যও প্রদান করা হয়েছে এই মেলায়।