চরম অব্যবস্থাপনায় শুরু বীমা মেলা

Insurance fair-1 নিজস্ব প্রতিবেদক: চরম অব্যবস্থাপনা আর বিশৃঙ্খলার মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে বীমা মেলার প্রথম দিন। ‘নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য বীমা’ এই স্লোগান নিয়ে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এই মেলার আয়োজন করেছে। আইডিআরএ বলছে, বীমা বিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়াতে দেশে প্রথমবারের মতো বীমা মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তবে জনসচেতনা বাড়ানোর উদ্যোগে যে মেলার আয়োজন করা হয়েছে তার পুরোটা জুড়েই রয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা। আর এ অব্যবস্থাপনার ছাপ পাওয়া যায় মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকেই। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্র্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। উদ্বোধনী অংশে সম্মানীত অতিথি, বিশেষ অতিথি ও সভাপতির বক্তব্যের পর অতিথিদের সম্মান জানানোর জন্য ক্রেস্ট দেয়া হয়। আশ্চার্যজনকভাবে এই অংশে আয়োজক কমিটির নিয়োগ দেয়া ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট’র কর্মী মাইকে ঘোষণা দেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদকে ক্রেস্ট দিবেন অর্থমন্ত্রী। এ ঘোষণার পর অর্থমন্ত্রীর মুখে বিরক্তের ছাপ দেখা যায়। বিষয়টি বুঝতে পেরে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের হাতে অর্থমন্ত্রীর বদলে ক্রেস্ট তুলে দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে নবনিযুক্ত সচিব মো. ইউনুসুর রহমান। তবে এখানেই বিভ্রান্তিকর ঘোষণার সমাপ্তি হয়নি। একের পর এক আসতে থাকে বিভ্রান্তিকর ঘোষণা। প্রতিটি ঘোষণাতে বলা হয় ক্রেস্ট তুলে দিচ্ছে আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ। তবে বাস্তবে দেখা যায় আইডিআরএ’র সদস্য অথবা তৃতীয় কেউ ক্রেস্ট তুলে দিচ্ছেন। এমনকি যাকে ক্রেস্ট দেয়ার ঘোষণা আসছে তাকে না দিয়ে অন্য কাউকে ক্রেস্ট দেয়া হচ্ছে। Insurance fairউদ্বোধনী অনুষ্ঠানের এমন চিত্রে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ আইডিআরএ চেয়ারম্যান। অনুষ্ঠানে পরে চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ আইডিআরএ’র একজন কর্মকর্তা এ প্রতিবেদকের সামনে বলেন এর আগে কখনো এমন বিশৃঙ্খল মেলার আয়োজন দেখেননি। তিনি অভিযোগ করেন, আইডিআরএ সদস্য কুদ্দুস খান এককভাবে মেলার আয়োজন করেছেন, এ জন্য এমন বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে। মেলা প্রাঙ্গণে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়, আইডিআরএ’র সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকেও। তিনি চেয়ারম্যানের পিএস জাহিদের সামনে উচ্চ সরে বলে উঠেন, কুদ্দুস সাহেব সব একা করবে। করুক! এমেন বিশৃঙ্খলা কখনো দেখা যায় না। আমি একজন সদস্য হয়েও বার বার আসন ছেড়ে মঞ্চে উঠে গেছি। প্রটোকল অনুযায়ী আমার তো উঠে যাওয়ার কথা না। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরেও মেলা প্রাঙ্গণ জুড়ে দেখা যায় চরম বিশৃঙ্খলা। এমন কি একটি স্টল থেকে অন্য একটি স্টলে যেতেও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে দর্শনার্থী ও স্টল বরাদ্দ নেয়াদের। একটি স্টল থেকে অন্য একটি স্টলে যাওয়ার জন্য খুবই চাপা রাস্তা রাখা হয়েছে।এ রাস্তাটি এতোটাই চাপা যে, একসঙ্গে দু’জন যাওয়া খুবই কষ্টকর। এতে নারীদেরকে খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে দেখা গেছে। মেলার এমন বিশৃঙ্খলাতায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে একটি বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, এটা কোন মেলা আয়োজন করা হলো। কর্তৃপক্ষ মেলা আয়োজন করেছে, আর আমরা টাকা খরচ করে মেলায় স্টল নিয়েছি। কিন্তু মেলার যে বিশৃঙ্খল অবস্থা তাতে বীমার প্রতি মানুষ সচেতন না হয়ে উল্টো নেতিবাচক ধারণা নিয়ে যাবে। এতে বীমার প্রতি মানুষের আস্থা আরও কমে যাবে। Insurance fair-2এদিকে মেলায় বীমা দাবির চেক নিতে এসেও হয়রানীর শিকার হতে হয়েছে গ্রহকদের । সকালে অর্থমন্ত্রী চেকতুলে দিবেন এই কথা হলে গ্রাহকদের মেলা প্রাঙ্গণে আনা হয়। কিন্তু অর্থমন্ত্রী গ্রাহকদের হাতে চেক তুলে না দিয়েই চলে যান। এরপর গ্রাহকরা কিভাবে চেক পাবেন সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে বিকালে কিছু গ্রাহকদের চেক দেয়া হলেও, চেক নিতে আসা অধিকাংশ গ্রাহককে চেক দেয় হয়নি। তাদেরকে চেকের জন্য দ্বিতীয় দিন আসতে বলা হয়েছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বীমা দাবির চেক হস্তান্তর না করায় এবং কোন ব্যক্তিকে চেক বিতরণের জন্য নির্দিষ্ট না করে দেয়ায় এখন কে এসব চেক বিতরণ করবে এ নিয়ে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। বীমা মেলায় অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে লটারির কুপন বিতরণেও।দর্শনার্থীদের মাঝে কুপন বিতরণের কথা থাকলেও বেশিরভাগ কুপন আয়োজক সংস্থার লোকজনকে পূরণ করে বাক্সে ফেলতে দেখা গেছে। অভিযোগ উঠেছে, লটারির পুরস্কারগুলো নিজেদের মধ্যে রাখতেই তারা এমনটি করছেন।অর্থমন্ত্রী স্টল পরিদর্শন করে বের হওয়ার কিছু পরেই কুপন বিতরণ শেষ হয়ে যায় বলে জানা গেছে। মেলায় অংশগ্রহণের কারণ জানত চাইলে ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স’র মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জামিরুল রেজা এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা জনসচেতনা সৃষ্টির অংশ হিসেবে মেলায় অংশগ্রহণ করছি। মেলার মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রডাক্টগুলো দর্শনার্থীদের কাছে তুলে ধরছি। তবে মেলা উপলক্ষে বীমা গ্রাহকদের বাড়তি কোন সুবিধা দেয়ার সুযোগ নেই। কারণ বীম কোম্পানিগুলোকে ব্যবসা করতে হয় আইনী ধরাবাধার মধ্য দিয়ে। ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের উপদেষ্টা মাহফুজুল বারী চৌধুরী বলেন, মেলায় গ্রাহকদের বাড়তি কোন সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। কারণ আইন অনুযায়ী বীমা কোম্পানির গ্রাহকদের বাড়তি সুবিধা দেয়ার সুযোগ নেই। মেলায় মূলত আমরা আমাদের প্রডাক্টগুলো দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরছি। এর মাধ্যমে বীমার প্রতি মানুষের সচেতনা বাড়বে বলে আশা করছি।