নিজস্ব প্রতিবেদক: লাখ টাকা অনুদান দিয়েও দেশের প্রথম বীমা মেলায় অংশ নিতে পারছে না ২৯টি বীমা কোম্পানি। স্টল বরাদ্দের জন্য পৃথকভাবে টাকা না দিতে পারা এর কারণ বলে জানা গেছে। অথচ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে কোন ফি না নিয়েও এমন মেলার আয়োজন করার আর্থিক সামর্থ্য রাখে এই মেলায় আয়োজক বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। আগামীকাল বুধবার থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৩ দিনব্যাপী এ বীমা মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সব বীমা কোম্পানিকেই মেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া উচিত। বিভিন্ন খাত থেকে আইডিআরএ’র আয় কম নয়। এমন অবস্থায় স্টলের জন্য টাকা নেয়ার পরও আবার অনুদান নেয়া কতটা যৌক্তিক তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, অনেক কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। অন্যদিকে খরচ কমানোর জন্য আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে চাপ রয়েছে। এমন অবস্থায় আইডিআরএ দেশের প্রথম এই বীমা মেলা নিজস্ব খরচেই করতে পারত। আর টাকা নিলেও তা অনুদান বা স্টল বরাদ্দের মূল্য হিসেবে যে কোনো একটা বিষয়ে নিতে পারত। দু’টো নেয়ার কোনো যুক্তি নেই।
সংশ্লিষ্টদের মতে, যে সংস্থা নিজের অফিসের শান-সওকাতের জন্য কোটি টাকা ব্যয় করতে পারে অথচ তারা বীমা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এক টাকাও খরচ করতে পারে না, এমন অবস্থা হলে যে কোনো সংস্থার সচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক বলে তারা মনে করেন।
সূত্র মতে, মেলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরই সরকারি-বেসরকারি সকল বীমা কোম্পানিকে ১ লাখ টাকা করে অনুদান দেয়ার জন্য চিঠি দেয় আইডিআরএ। এ চিঠি দেয়া হয় গত ৯ ফেব্রয়ারি। চিঠিতে স্বাক্ষর করেন আইডিআরএর সদস্য ও বীমা মেলা- ২০১৬ আয়োজক কমিটির সভাপতি মো. কুদ্দস খান। চিঠিতে পে-অর্ডার বা চেকের মাধ্যমে ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বীমা মেলার একাউন্টে এ টাকা জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এরপরই সব কোম্পানি অনুদান বাবদ টাকা পরিশোধ করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেলায় ৪৮টি বীমা কোম্পানি অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে লাইফ বীমা কোম্পানি ২৮টি ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানি ২০টি। বাকি ২টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একাডেমী অব লার্নিং ও অপর একটি প্রতিষ্ঠানকে।
জানা গেছে, আইডিআরএ স্টলের মূল্য নির্ধারণ করে ৫০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে ৮টি স্টল বরাদ্দ হয় ২ লাখ টাকা করে। ৫টি স্টল বরাদ্দ হয় ১ লাখ টাকায়। বাকি সকল স্টলই ৫০ হাজার টাকায়। তবে আইডিআরএ’র নিজস্ব স্টলসহ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন ও ইন্স্যুরেন্স একাডেমির জন্য স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বিনা পয়সায়।
সূত্র মতে, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০’ এ আইডিআরএর কার্যাবলী বিষয়ে ১৫ ধারার ঘ উপধারায় বীমা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেমিনার, সভা, ওয়ার্কশপ ইত্যাদির আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। যদিও গত ৫ বছরেও এ ধরণের কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি আইডিআরএ।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি ব্যাংকিং মেলা হয়ে যাওয়ার পরই বীমা মেলার বিষয়টি আলোচনায় আসে। পরে বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগ নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। মূলত অর্থ মন্ত্রণালয়ের চাপে পড়েই আইডিআরএ এ ধরনের মেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেয়।
তবে এসব বিষয় নিয় কথা বলতে রাজি হননি কেউই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মূখ্য নির্বাহী বলেন, অতিরিক্ত খরচ বাচাতেই স্টল ভাড়ার জন্য তারা পৃথকভাবে ব্যয় করতে পারেনি। তবে আইডিআরএ নিয়ন্ত্রক সংস্থা, তাদের অনুরোধও হুকুম। ফলে অনুদান চেয়ে চিঠি দিলেও সে টাকা না দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ প্রতিটি কোম্পানিরই দুর্বলতা রয়েছে। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ক্ষেপে যাবে তা কেউ চাইবে না।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে অপর এক মূখ্য নির্বাহী বলেন, এটা এক ধরনের চাঁদাবাজি। বীমার সচেতনতার জন্য মেলার আয়োজন। এ মেলায় সব কোম্পানির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা উচিত ছিল।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আইডিআরএ গঠন করা হয়েছে বীমা খাতের উন্নয়নের জন্য। জরিমানা করা ও হুমকি-ধামকি দেয়া ছাড়া আইডিআরএ’র কোনো অর্জন আছে বলে তো মনে হয় না।
এ বিষয়ে আইডিআরএ’র সদস্য ও মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি কুদ্দুস খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।