ডেস্ক রিপোর্ট: খাদ্য সংকটে থাকা হর্ন অব আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায় বীমা কর্মসূচি চালু করেছে বিশ্বব্যাংক। খরা ও বন্যার মতো প্রকৃতিক দুর্যোগে কৃষি উৎপাদনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সহায়তা করবে এ কর্মসূচি। সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এই জাতীয় কৃষি বীমার রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। এই কর্মসূচির একটি অংশে গৃহপালিত পশু বীমা ওপর জোর দেয়া হবে এবং অপর অংশে ভুট্টা ও গম বীমার ওপর জোর দেয়া হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এই কর্মসূচি কেনিয়ার প্রাকৃতিক দুর্যোগের আর্থিক বোঝা কমাতে সহযোগিতা করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। সরকারি হিসাব মতে, ২০০৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছে দুর্যোগকালিন ত্রাণ বিতরণে। সরকার আশা করছে, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের জন্য ভালো আর্থিক প্রতিরক্ষার ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন কমে আসবে।
কেনিয়ায় বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডিয়ারিটোউ গাই এক বিবৃতিতে বলেন, এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা বাড়ানো। যাতে করে কম বিনিয়োগে কম আয় এই দারিদ্র চক্র থেকে তারা বের হয়ে আসতে পারে। তিনি আরো বলেন, কেনিয়ার গরিবদের বেশিরভাগই কৃষক। এজন্য দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই বীমা প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেনিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শুষ্ক ও প্রায় বৃষ্টিহীন ভূমি এলাকায় পশুসম্পত্তি মৃত্যুহারের সর্বশ্রেষ্ঠ কারণ হচ্ছে খরা। কেনিয়া সরকার নতুন এই পশুসম্পদ বীমা কর্মর্সচির মাধ্যমে বেসরকারি বীমা কোম্পানির কাছ থেকে ঝুঁকিপ্রবণ পশুপালনকারি বা কৃষকদের পক্ষে খরা বীমা ক্রয় করবে। এই বীমা কর্মসূচিতে দেশে তৃণভূমির প্রাপ্যতা নির্ণয় করতে স্যাটেলাইট ডাটা ব্যবহার করা হয় এবং যখন এর প্রাপ্যতা হ্রাস পায় তখন পশুপালকদের অর্থ পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিশ্বব্যাংকের এই বীমা কর্মসূচি চলতি মাসে উত্তর কোরিয়ার বানগোমা, পূর্ব কেনিয়ার ইম্বু ও উত্তর-পশ্চিম কোরিয়ার নাকুরু এলাকায় শুরু করা হয়েছে। এছাড়া আগামী ২০২০ সাল নাগাদ ৩৩টি দেশে এই কর্মসূচি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে ২০১৫ সালের অক্টোবরে তুরকানা ও ওয়াজির এলাকার ৫ হাজার পশুপালকের জন্য কেনিয়া লাইভস্টক ইন্স্যুরেন্স প্রোগ্রামের যাত্রা শুরু হয়। প্রত্যাশা করা হচ্ছে আগামী ২০১৭ সাল নাগাদ দেশজুড়ে প্রকল্পটি ছড়িয়ে পড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশুসম্পদ উৎপাদকারিদের চ্যালেঞ্জ আর ভুট্টা ও গম উৎপাদনকারি এবং ঝুঁকি হ্রাসকারি ব্যাংকগুলোর কৃষকদেরকে ঋণ দেয়ার ক্ষুধা একই রকম।
বিশ্বব্যাংকের ডিজাস্টার রিস্ক ফিনান্সিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ওলিভিয়ার মাহুল বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ কৃষকদের সুবিধার জন্য সরকার ও বেসরকারি খাতের মধ্যে অংশীদারিত্ব সৃষ্টির বিষয়টি আন্তর্জাতিক অনুশীলনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই কর্মসূচি আফ্রিকায় কৃষি বীমা সম্প্রসারণের পথকে আরো সুগম করবে বলে মনে করেন মাহুল।