হিন্দি নামেই এলআইসি’র পণ্য বাংলাদেশে!

নিজস্ব প্রতিবেদক: হিন্দি নামেই বাংলাদেশের বাজারে বীমা পণ্য ছাড়তে যাচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানি লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (এলআইসি) অব বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটি এরইমধ্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে ৫টি পণ্যের অনুমোদন নিয়েছে। এর মধ্যে ২টি পণ্যের নামকরণ করা হয়েছে হিন্দিতে। পণ্যগুলো হলো- এলআইসি’স জীবন রক্ষক (LIC'S JEEVAN RAKSHAK) ও এলআইসি’স নিউ জীবন আনন্দ (LIC'S NEW JEEVAN ANAND)। বাকি তিনটি পণ্য হলো- এলআইসি’স সিঙ্গেল প্রিমিয়াম এনডোমেন্ট প্ল্যান, এলআইসি’স নিউ মানি ব্যাক প্ল্যান-২০ ইয়ার্স, এলআইসি’স নিউ মানি ব্যাক প্ল্যান-২৫ ইয়ার্স। বীমা খাতের মাঠ কর্মীরা বলছেন, বাংলাদেশের বীমা বাজারে ভারতীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা পাওয়ার এটি প্রথম ধাপ। বর্তমানে বাংলাদেশে ভারতীয় ভোগ্য পণ্যের আধিপত্য ও হিন্দি সিনেমা, হিন্দি গান, ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের আধিপত্য ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান। বীমা খাতে হিন্দি নাম করণে পলিসি বিক্রি শুরু করা হলে বীমা বাজারে তার বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। তাদের মতে, দেশীয় বীমা কোম্পানিগুলো গ্রাম অঞ্চলেই ব্যবসার প্রসার বেশি। এ কোম্পানিগুলোতে শহুরে শিক্ষিত শ্রেণীর পলিসি বিক্রির হার খুব বেশি না। এছাড়া মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে ইসলামী বীমার প্রতি দেশের সাধারণ মানুষ বেশি আকৃষ্ট হয়। ফলে “জীবন রক্ষক” বা “জীবন আনন্দ” নামে বীমা পলিসি মুসলমানরা সহজভাবে গ্রহণ নাও করতে পারে। অন্যদিকে এদেশের এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ভারত বিদ্বেষী মনোভাব রয়েছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের। ফলে পণ্যের এ ধরণের নাম করণ বীমা বাজারে বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, বাংলাদেশে ভারতীয় প্রভাব অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তরুণ ও নতুনরা ভারতীয় সিনেমা-গানে আকৃষ্ট। ভারতীয় সিরিয়াল দেখা হচ্ছে ঘরে ঘরে। ফলে বীমা বাজারে নতুন এ পণ্যগুলো সাধারণ মানুষ বিশেষ করে তরুণদের আরো বেশি আকৃষ্ট করতে পারে। অর্থনীতিবিদ ও তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মীর্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এটা খুব বড় কোনো সমস্যা না। কোম্পানিটি নতুন তাই তাদের নতুন নাম দিয়েই পণ্য বাজারজাত করছে। আর শব্দগুলো আমাদের কাছে অপরিচিত নয়। তাই এর কোনো বিরুপ প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না। বীমা বিশেষজ্ঞ কাজী মোরতুজা আলী বলেন, আমরা ঘরে ঘরে ভারতীয় সিরিয়াল দেখছি। তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এলআইসি ভারতে যেসব নামে পণ্য বিক্রি করে সেসব পণ্যই বাংলাদেশে বাজারজাত করতে যাচ্ছে। বিশ্বায়নের যুগে এটা কোনো সমস্যা না।  বীমা বাজারেও এর কোনো বিরুপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করি না। এলআইসি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অরুপ দাস গুপ্ত বলেন, এখনো কোনো পণ্যই আমরা বাজারে ছাড়িনি। সবেমাত্র ৫টি পণ্যের অনুমোদন নেয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, পণ্যের নামগুলো বাংলা নামেই। এটা হিন্দি বা ভারতীয়করণ কিনা সেভাবেও ভাবা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতে কোম্পানিটি একই নাম ব্যবহার করে পণ্য বাজারজাত করে দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসা করে আসছে। বাংলাদেশে বাজারজাত করতে যাওয়া উল্লেখিত পাঁচটি পণ্য ছাড়াও ভারতে বাজারজাতকৃত অন্যান্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে- এলআইসি’স জীবন প্রগতি, এলআইসি’স জীবন শিখর, এলআইসি’স জীবন লাভ, এলআইসি’স নিউ এনডোমেন্ট প্ল্যান, এলআইসি’স জীবন লক্ষ্য, এলআইসি’র জীবন তরুণ ইত্যাদি। তবে এসব পণ্যের সবই এককবীমা। অন্যদিকে দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশে জীবন বীমা ব্যবসা করে আসছে আরেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান মেটলাইফ আলিকো। তবে প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ বিদেশি মালিকানাধীন হলেও বাংলাদেশে বাজারজাতকৃত তাদের সব পণ্যের নাম দিয়েছে দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পণ্যের মতোই। মেটলাইফ আলিকোর পণ্যের তালিকায় রয়েছে- তাকাফুল ডিপিএস, সিঙ্গেল ডিপোজিট প্রোটেকশন স্কিম (এসডিপিএস), লাইফলাইন পেনশন প্ল্যান, এডুকেশন প্রোটেকশন প্ল্যান (ইপিপি) প্লাস, থ্রি পেমেন্ট প্ল্যান (৩পিপি) প্লাস ইত্যাদি। বাংলাদেশি জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর পণ্যের নামের মধ্যে রয়েছে- এনডোমেন্ট ইন্স্যুরেন্স প্ল্যান, ইসলামি এনডোমেন্ট প্ল্যান, চাইল্ড প্রোটেকশন প্ল্যান, ইসলামী মানি ব্যাক প্ল্যান, হজ বীমা, জয়েন্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মানি ব্যাক টার্ম অ্যাসুরেন্স, পেনশন ইন্স্যুরেন্স, সিঙ্গেল পেমেন্ট ইনস্যুরেন্স, থ্রি/ফোর/ফাইফ পেমেন্ট এনডোমেন্ট, ইসলামি তাকাফুল, ফ্যামিলি সেভিংস অ্যান্ড ইনকাম, কাপল অ্যাসুরেন্স প্লান, এন্টিসিপেটেড এনডোমেন্ট ইন্স্যুরেন্স প্ল্যান ইত্যাদি। ভারতের শীর্ষস্থানীয় এই জীবন বীমা কোম্পানি গত বছরের ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে ব্যবসার অনুমতি লাভ করেছে। ভারতের এই বীমা কোম্পানি বাংলাদেশে ‘লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (এলআইসি) অব বাংলাদেশ’ নামে বীমা ব্যবসা করবে। দেশে এটিই প্রথম দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকার কোম্পানি। বাংলাদেশ থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে উদ্যোক্তা হিসেবে থাকছে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড (এমটিবিএল) ও ওয়েস্টিন গ্রুপের অ্যাসেট মেনেজমেন্টে কোম্পানি এসিএমএল। আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা অংশের ৫০ শতাংশ থাকবে এলআইসির দখলে। উদ্যোক্তা অংশের বাকি ১০ শতাংশের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এসিএমএ’র উদ্যোক্তা হিসেবে কোম্পানিটির ৭ শতাংশ শেয়ার ধারণ করবে। আর এমটিবিএল উদ্যোক্তা হিসেবে শেয়ার ধারণ করবে ৩ শতাংশ। এছাড়া কোম্পানির বাকি ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিক হবেন সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা। এ জন্য বাংলাদেশের বীমা আইন অনুযায়ী ৩ বছরের মধ্যে কোম্পানিটিকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে।