আইডিআরএ'কে বৃদ্ধাঙ্গুলি: ২১০ কোটি টাকা খেয়ে ফেলেছে ফারইস্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক: বীমা গ্রাহক (পলিসিহোল্ডার) ও শেয়ারহোল্ডারের ২১০ কোটি টাকা খেয়ে ফেলেছে বেসরকারি বীমা কোম্পানি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ। ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের খাতে হিসাব দেখিয়ে ৫ বছরে এ টাকা লোপাট করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৮৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা গ্রাহকের ও ২১ কোটি ৯ লাখ টাকা শেয়ারহোল্ডারের। অফিস ভাড়া, পরিবহন, কমিশন, বেতন ভাতা, ক্রয় ও আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের খাতে এই অতিরিক্ত খরচ প্রদর্শন করেছে ফারইস্ট লাইফ। তবে অভিযোগ উঠেছে, ক্রয়ের ক্ষেত্রে দাম বেশি দেখানো ও ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কোম্পানিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি অংশ। যাদের সঙ্গে কোম্পানির প্রভাবশালী পরিচালকেদের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। মূলত প্রভাবশালী পরিচালকদের মদদেই এভাবে অবৈধ ব্যয় দেখিয়ে অর্থ লোপাট করা হয়। এদিকে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের খাত দেখিয়ে গ্রাহকের টাকা লোপাটের এ অপকর্ম বন্ধে আইডিআরএ’র নির্দেশনাও মানছে না কোম্পানিটি। সর্বশেষ হিসাব বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে অবৈধভাবে ব্যয়ের নামে ৩৮ কোটি টাকা খেয়ে ফেলেছে কোম্পানিটি। যার মধ্যে গ্রাহকের টাকা রয়েছে ৩৪ কোটি ২১ লাখ। বাকি ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা শেয়ারহোল্ডারের। অবৈধ ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের বিষয়ে ২০১৪ সালে আইডিআরএ’র কার্যালয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ওই শুনানিতে ফারইস্ট লাইফ কর্তৃপক্ষকে আগের ৪ বছরের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় পরবর্তী ৫ বছরে সমন্বয় করার নির্দেশ দেয় আইডিআরএ। এক্ষেত্রে নির্ধারিত সীমার চেয়ে কম খরচের নির্দেশ দেয়া হয়। অথচ এখনো নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি খরচ করে যাচ্ছে কোম্পানিটি। তবে ২০১৪ সালের তুলনায় অবৈধ এ ব্যয় ২০১৫ সালে ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা কমেছে। ২০১৪ সালের শুনানিতে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের বিষয়ে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জনবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার ও গাড়ি কেনা ও গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান। তবে তার এ উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়ন করেছে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা যায়নি। সূত্র মতে, ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটি অবৈধভাবে ব্যয়ের নামে গ্রাহক ও শেয়ার হোল্ডারের ২১০ কোটি ৮২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এর মধ্যে ২০১১ সালে ছিল ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, ২০১২ সালে ৩৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, ২০১৩ সালে ৪৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ৪৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা ও ২০১৫ সালে ৩৮ কোটি ২ লাখ টাকা। জীবন বীমার ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সীমা নির্ধারিত হয় ১৯৫৮ সালের বীমা বিধির ৩৯ ধারা অনুসারে। এ ধারা অনুযায়ী, ব্যবসা করার অনুমতি পাওয়ার পর প্রথম তিন বছর কোম্পানি প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের সাড়ে ৯৭ শতাংশ এবং নবায়ন প্রিমিয়াম আয়ের সাড়ে ২২ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবে। পরবর্তী তিন বছরে অর্থাৎ চার বছর থেকে ছয় বছর পর্যন্ত ব্যয়ের এ হার হবে সাড়ে ৯৬ শতাংশ ও ২০ শতাংশ। সাত বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত তা ৯৫ শতাংশ ও ১৯ শতাংশ। আর ব্যবসায়িক কার্যক্রম ১০ বছরের বেশি সময় পার করলে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা হবে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের ৯০ শতাংশ এবং নবায়ন প্রিমিয়াম আয়ের ১৯ শতাংশ। তবে কোনো কোম্পানির প্রিমিয়াম আয় ১০ কোটি বা তার বেশি হলে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের ৯০ শতাংশ এবং নবয়ান প্রিমিয়াম আয়ের ১৫ শতাংশের বেশি খরচ করতে পারবে না। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৫ সালে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ২৭৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ব্যয় করে ৩১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।একই ভাবে ২০১৪ সালে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ২১২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। কিন্তু বছরটিতে ব্যয় দেখানো হয় ২৫৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা ১৭৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি ব্যয় করে ২২৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এছাড়া ২০১২ সালে ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা ১৮৪ কোটি টাকা থাকলেও ব্যয় করা হয় ২২২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ২০১১ সালে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ২২২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। কিন্তু ব্যয় করা হয় ২৬০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। আর ২০১০ সালে ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ২৩৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। তবে বছরটিতে ব্যয় করা হয় ২৫২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অবৈধ ব্যয়ের বিষয়ে ফারইস্ট লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. হেমায়েত উল্লাহ বলেন, ব্যবস্থাপনা ব্যয় একদিনেই কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। এর জন্য ৫ থেকে ৭ বছর সময় প্রয়োজন। আইডিআরএ আমাদেরকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা তাদেরকেও জানিয়েছি, ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমানোর জন্য আমরা চেষ্টা করছি। ধীরে ধীরে কমে আসবে। এরইমধ্যে আমাদের ব্যবস্থাপনা ব্যয় আগের তুলনায় কমে এসেছে। ২০১৪ সালে যেখানে ছিল ৩৮ কোটিরও বেশি, সেখানে ২০১৫ সালে এসে ৩৫ কোটির কাছে চলে এসেছে বলে দাবি করেন।