‘হাসিনাতো বলেই খালাস’!

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘হাসিনাতো বলেই খালাস’ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে এমন তাচ্ছিল্য মন্তব্য করেছিলেন সাধারণ বীমা করপোরেশনের (এসবিসি) জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) শামীমা আক্তার। তার এমন মন্তব্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এসবিসি। সেই শামীমা আক্তারকেই সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে চলতি দায়িত্ব (সিসি) দেয়া হয়েছে। গত ডিসেম্বর থেকে তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীকে তাচ্ছিল্য করায় ২০১৫ সালের ৬ জুলাই মো. আরিফুল ইসলাম ভূইয়া (টিপু) নামের এক বীমা গ্রাহক শামীমা আক্তারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবর করা এ অভিযোগের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর পিএস, মূখ্য সচিব, অর্থমন্ত্রীর একান্ত সচিব, সাধারণ বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়। এ অভিযোগপত্রে টিপু বলেন, জিএম শামীমা আক্তার তার বীমা দাবির টাকা আটকে রেখে দীর্ঘ দিন ধরে হয়রানি করছে। এমনকি দাবির টাকা না দিতে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তাচ্ছিল্য মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি জামায়াতের অবরোধের সময় তার একটি মালবোঝাই ট্রাক অবরোধকারিদের ধাওয়ায় দুর্ঘটনার শিকার হয়। নোয়াখালির সেনবাগে ঘটা এ দুর্ঘটনায় ট্রাকটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর বীমা দাবির টাকার জন্য সাধারণ বীমা করপোরেশনে আবেদন করলে দাবির টাকা না দিয়ে ফাইলটি দীর্ঘদিন আটকে রাখে জিএম শামীমা আক্তার। এই পরিস্থিতিতে টিপু জিএম শামীমা আক্তারকে অনুরোধ করে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী অঙ্গিকার করেছিলেন যাদের অবরোধে পরিবহন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ দ্রুত পরিশোধ করার জন্য।” এ কথা শুনে শামীমা আক্তার প্রধানমন্ত্রীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলেন, ‘হাসিনাতো বলেই খালাস’। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও কিছু অশোভন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন যা প্রকাশ করা সম্ভব না, বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (টিপু) । এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ১২ জুলাই করপোরেশনের ৫৪৫তম বোর্ড সভায় শামীমা আক্তারকে শোকজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই বছরের ১৪ জুলাই তাকে শোকজ করা হয়। এই শোকজ পত্রে বলা হয়, “প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এমন অশোভনীয় মন্তব্য করা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।” সেই সঙ্গে ওই শোকজপত্রে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে শামীমা আক্তারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই শামীমা আক্তারকে এ শোকজ করা হলেও আজ পর্যন্ত বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি। এ পরিস্থিতিতেই গত ডিসেম্বরে সাধারণ বীমা করপোরেশনের পরিচালনা পর্ষদ তাকে প্রতিষ্ঠানটির এমডি পদে চলতি দায়িত্ব প্রদান করে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান ড. সোহরাব হোসেনের হস্তক্ষেপেই তাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ড. সোহরাব হোসেন। তিনি বলেন, শামীমা আক্তার প্রধানমন্ত্রীকে তাচ্ছিল্য করে কথা বলেছেন এমন অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি জানি বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তবে আমি শামীমা আক্তারকে চলতি দায়িত্বে এমডি পদে বসিয়েছি এমন অভিযোগ ঠিক না। বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে যোগযোগ করা হলে শামীমা আক্তার বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিষয়টি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। কিছুদিন অপেক্ষা করেন তারপর সবকিছু জানতে পারবেন। শোকোজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল এটি সত্য। তবে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় আমি এখন এ বিষয় কোন মন্তব্য করবো না। বীমা গ্রাহক আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (টিপু) বলেন, বীমা দাবির টাকা পরিশোধ না করে শামীমা আক্তার দীর্ঘদিন আমাকে হয়রানি করেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী উদ্দেশ্য করেও অশোভন মন্তব্য করেন। এ জন্য আমি লিখিতভাবে অভিযোগ করি। কিন্তু দুঃখ্যের বিষয় এখন পর্যন্ত আমার বীমা দাবির টাকা পরিশোধ করা হয়নি।