বীমা নির্ভর হচ্ছে ভারতের স্বাস্থ্যসেবা, বাজেটে নয়া প্রকল্প

ডেস্ক রিপোর্ট: নানামুখী প্রচেষ্টার পরও মানসম্মত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ ভারতের সাধারণ জনগণ। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার তুলনায় দেশটিতে দ্রুতগতিতে বাড়ছে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবধান। এ অবস্থায় দেশের দারিদ্রপীড়িত জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বীমা খাতের ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে সরকার। অভাব-অনটনে ক্লিষ্ট এসব নাগরিকের প্রয়োজনীয় সুবিধা দিতে বীমা ভিত্তিক নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে ভারত। সর্বশেষ চলতি বছরের বাজেটে পরিবার প্রতি এক লাখ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা ‘জাতীয় জনসংখ্যা স্থিতিশীলতা’র দেয়া ২০১৫ সালের তথ্য মতে, দেশটির মোট জনসংখ্যা ১২৭ কোটি ৪২ লাখ ৩৯ হাজার ৭৬৯। এই বিপুল জনসংখ্যার মাত্র ২২.২ শতাংশ অর্থাৎ ২৮ কোটি ৮০ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যবীমা রয়েছে বলে জানিয়েছে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় বীমা ও পুনর্বীমা কোম্পানি সুইস রি। সে হিসাবে দেশটির ৭৭.৮ শতাংশ মানুষ এখনো স্বাস্থ্যবীমার আওতার বাইরে রয়েছে। একইসঙ্গে দেশটিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবধানও বাড়ছে দ্রুতগতিতে। বছর প্রতি এই ব্যবধান বৃদ্ধির হার ১২.৩ শতাংশ। আগামী ২০২০ সাল নাগাদ এই ব্যবধানের পরিমাণ দাঁড়াবে ২১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। অর্থাৎ ভারতীয় জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন সেই হিসাবে ২১৪ বিলিয়ন ডলার অর্থ সংকটে পরবে দেশটির সরকার। যা এশিয়ার বৃহৎ স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবধান বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সুইস রি’র প্রতিবেদন অনুসারে সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবীমার আওতায় এসেছে ভারতের ২১ কোটি ৪০ লাখ জনগণ। আর গ্রুপ বীমার মাধ্যমে এই সুবিধা গ্রহণ করছে ৪ কোটি ৮০ লাখ। বাকী ২ কোটি ৫০ লাখ ব্যক্তিগত বা সরকারি চাকরির সুবাদে স্বাস্থ্যবীমার আওতায় এসেছে। উচ্চ আয় বৃদ্ধি এবং বৃহৎ জনসংখ্যার কারণে ভবিষ্যতে সরকার ও সমাজকে স্বাস্থ্যসেবার ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে আরও খরচ করতে হবে বলে ওই প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ভারত সরকার দেশের গরিব জনগণের জন্য “প্রধানমন্ত্রী ঔষধী যোজনা” নামে একটি নয়া স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্প চালুর ঘোষণা দিয়েছে। এর আওতায় প্রত্যেক পরিবারকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবীমার সুবিধা দেয়া হবে। পরিবারের ৬০-র বেশি বয়সের সদস্যদের জন্য আরও ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্যাকেজ দেয়া হবে। পাশাপাশি নায্য দামে সঠিক গুণমানের ওষুধ মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে দেশব্যাপী ৩ হাজার দোকান খোলার কথা জানানো হয়েছে। জাতীয় ডায়ালিসিস পরিষেবা প্রকল্পে প্রত্যেকটি জেলা হাসপাতালে সুলভে ডায়ালিসিসের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। বর্তমানে ভারতে প্রতি বছর কিডনির রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ২০ হাজার করে বাড়ছে। এর ফলে বছরে প্রায় ৩ কোটি ৪ লাখ বার ডায়ালিসিসের প্রয়োজন হচ্ছে। বাজেট বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছেন, কোনও ব্যক্তির গুরুতর অসুস্থতার জন্য দরিদ্র ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের চাপে পড়ে যায়। চিকিৎসার জন্য ওই পরিবারগুলির আর্থিক চাপ প্রচণ্ড বেড়ে যায়। এ কথা মাথায় রেখে সরকার নয়া স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্প চালু করবে বলে তিনি জানান। একইসঙ্গে নায্য দামে সঠিক গুণমানের ওষুধ মানুষের হাতে পৌঁছে দেয়া একটা চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে এ জন্য প্রধানমন্ত্রী ঔষধী যোজনার কথাও জানিয়েছেন জেটলি। ম্যাক্স বুপা হেল্থ ইন্স্যুরেন্সের সিইও ও এমডি আশীষ মেহরোত্রা বলেন, স্বাস্থ্যবীমার গতি ত্বরান্বিত করতে এই বছরের বাজেট সরকারের দৃঢ় সিদ্ধান্তকে আরো এগিয়ে নেবে এবং সমাজের সব স্তরের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া নিশ্চিত করবে। গ্রামীণ খাত ও জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তাকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের এই বাজেটে ‘ক্রিটিক্যাল পিলার্স’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি বিপিএল তালিকাভুক্ত জনসাধারণের জন্য সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার।