সরকারি ভর্তুকি পেলে ক্ষুদ্রবীমা এগিয়ে যাবে: আমজাদ হোসাইন

বাংলাদেশের ক্ষুদ্রবীমার সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে বিশেষ আয়োজন করেছে দেশের প্রথম এবং একমাত্র বীমা ভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। বিশেষ আয়োজনের এ পর্বে ক্ষুদ্রবীমার ওপর অভিমত দিয়েছেন জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এর মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (প্রস্তাবিত) আমজাদ হোসাইন খান চৌধুরি। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য অভিমতটি তুলে ধরা হলো: জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডেরে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আমজাদ হোসাইন খান চৌধুরি বলেন, ইন্ড্রাস্ট্রি ইন্স্যুরেন্স বা শিল্পবীমা নামে বিশ্বে পরিচিত ক্ষুদ্রবীমার অনুকরণ করেই বাংলাদেশে ক্ষুদ্রবীমার কার্যক্রম চলছে। যার জনক ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ক্ষুদ্রবীমার প্রথম দিকে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স এ খাতে ভর্তুকি দিত, যা এখন বন্ধ রয়েছে। এ কারণে বর্তমানে ক্ষুদ্রবীমার গ্রাহক সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তবে দেশব্যাপী এর জনপ্রিয়তার একটু কমতি নেই। ক্ষুদ্রবীমার প্রিমিয়াম সংগ্রহে সময় ও পরিশ্রম বেশি হওয়ায় কোম্পানিগুলোরও আগ্রহ কম। এই খাতের প্রিমিয়াম প্রতি মাসে আদায় করতে হয়। আদায়ের এই প্রক্রিয়া খুবই জটিল ও ব্যয়বহুল। এটাও ক্ষুদ্রবীমার গ্রাহক কমার অন্যতম কারণ। ক্ষুদ্রবীমার প্রিমিয়াম সম্পর্কে তিনি বলেন, আগে ক্ষুদ্রবীমা পলিসির মাসিক প্রিমিয়ার ছিল ২৭ টাকা থেকে ৮৭০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে তা বেড়ে ৩০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হারে নেয়া হচ্ছে। প্রিমিয়াম আদায়ের এই প্রক্রিয়া ও সময়সীমা পরিবর্তন করলে ক্ষুদ্রবীমা আরো বেশি জনপ্রিয়তা পাবে। ক্ষুদ্রবীমার আওতায় কারা আসতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে জেনিথ ইসলামী লাইফের এই মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, সমাজের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে চাকরিজীবী পর্যন্ত সবাই এই বীমা করতে পারে। ক্ষুদ্রবীমা করার ক্ষেত্রে কোন বাধা-ধরা নিয়ম নেই। তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ক্ষুদ্রবীমার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। কারণ, দেশের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামীণ সমাজের জনগোষ্ঠি। তাছাড়া এখন সব শ্রেণীর মানুষের কাছে টাকা-পয়সা আছে। ইচ্ছা করলে সবাই ক্ষুদ্রবীমার আওতায় আসতে পারে। এজেন্টদের প্রসঙ্গে কর্মকর্তা আমজাদ হোসাইন বলেন, বেশিরভাগ বীমা প্রতিনিধিদের কোন প্রশিক্ষণ বা এ বিষয়ে সম্পর্কে তেমন কোন অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান নেই। এতে বীমা খাতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আগে মাঠকর্মীদের প্রশিক্ষণ না থাকায় বীমা খাতে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর পাওয়া গেছে। তবে আস্তে আস্তে তা কাটিয়ে উঠছে। বর্তমানে এজেন্টদের প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষুদ্রবীমার কোম্পানি তাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে বীমা খাতকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছে। ব্যবস্থাপনা ব্যয় সম্পর্কে তিনি বলেন, কোম্পানির জন্য ক্ষুদ্রবীমা লাভজনক প্রকল্প নয়। তারপরেও কোম্পানিগুলো ক্ষুদ্রবীমা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এবং কাজ করতে চায়। কিন্তু এক্ষেত্রে বাধা অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়। প্রকৃত অর্থে ক্ষুদ্রবীমার উন্নতি চাইলে এখাতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। তিনি বলেন, ক্ষুদ্রবীমায় যদি সরকার মাত্র ৫ শতাংশ ভর্তুকি দেয় তাহলে দেশের ক্ষুদ্রবীমা অনেক এগিয়ে যাবে। একইসঙ্গে ব্যাপক জনগোষ্ঠিকে ক্ষুদ্রবীমা প্রকল্পের আওতায় আনা যাবে। এমনকি মোট বীমার ২৫ শতাংশ ক্ষুদ্রবীমার আওতায় আনা সম্ভব। যা বর্তমানে হাজারে ৪ জন বিদ্যমান আছে। তিনি আরো বলেন, ক্ষুদ্রবীমার পরিসরে সরকারের সহায়তার কোন বিকল্প নেই। জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ক্ষুদ্রবীমা প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের কোম্পানিতে ক্ষুদ্রবীমার কোন প্রকল্প নেই। কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে ক্ষুদ্রবীমা প্রকল্প করার অনুমতি দেয়নি। তাই নতুন কোম্পানি বলে ক্ষুদ্রবীমা নিয়ে আমাদের আপাতত কোন পরিকল্পনা নেই। ক্ষুদ্রবীমায় ব্যবস্থাপনা ব্যয়, সময় ও শ্রম বেশি হওয়ায় কোম্পানি এই প্রকল্পে যেতে যাচ্ছে না। তবে সরকার যদি আমাদেরকে অনুমতি দেয় তাহলে ক্ষুদ্রবীমা নিয়ে কাজ করতে আমাদের কোন অনিচ্ছা বা অনিহা থাকবে না। আমরা প্রাণপ্রণ চেষ্টা করব ক্ষুদ্রবীমা প্রকল্প দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে। তিনি আরো বলেন, আমি জেনিথ লাইফে নতুন জয়েন্ট করেছি। এর আগে ডেল্টা লাইফে কাজ করেছি। সেখানে কর্মরত অবস্থায় শুধুমাত্র ময়মনসিংহ এলাকা থেকেই প্রতি মাসে ৩ কোটি টাকা মাসিক প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতাম। ক্ষুদ্রবীমার ওপর আন্তর্জাতিক কোন সেমিনারে অংশ নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জেনিথ লাইফের সিইও আমজাদ হোসাইন বলেন, ক্ষুদ্রবীমা সম্পর্কে বাস্তবিক অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে আন্তর্জাতিক কোন সেমিনারে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ হয়নি। শুধুমাত্র দেশের ভেতরে অনুষ্ঠিত কয়েকটি সেমিনারে অংশ গ্রহণ করেছি। এরমধ্যে ড. মোসলেহ উদ্দিন আহাম্মেদের উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে অংশ গ্রহণ করেছিলাম। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আরো কয়েকটি সেমিনারে অংশ নেয়ার সুযোগ হয়েছে।