উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে লাভজনক হবে ক্ষুদ্রবীমা: মনিরুল আলম

বাংলাদেশের ক্ষুদ্রবীমার সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে বিশেষ আয়োজন করেছে দেশের প্রথম এবং একমাত্র বীমা ভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। বিশেষ আয়োজনের এ পর্বে ক্ষুদ্রবীমার ওপর অভিমত দিয়েছেন গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম এম মনিরুল আলম। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য অভিমতটি তুলে ধরা হলো: গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম মনিরুল আলম বলেন, বাংলাদেশেই প্রথম ক্ষুদ্রবীমা চালু করা হয়। ডেল্টা লাইফের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চেয়ারম্যান ও একচ্যুয়ারি সাফাত আহমেদ চৌধুরী ক্ষুদ্রবীমার প্রবক্তা। তার কাছেই আমরা কাজ শিখেছি। বিশ্বব্যাপী আজ যে ক্ষুদ্রবীমার জোয়ার দেখা যাচ্ছে তা মূলত বাংলাদেশের কনসেপ্ট থেকেই নেয়া। প্রিমিয়াম সংগ্রহে নানা ধরনের চ্যানেল ব্যবহারের মাধ্যমে অন্যান্য দেশগুলো ক্ষুদ্রবীমাকে কিভাবে জনপ্রিয় করে তুলতে সক্ষম হয়েছে সেদিকে আমাদের দৃষ্টিপাত করতে হবে। মনিরুল আলম আরো বলেন, ক্ষুদ্রবীমাকে শুধু সেবামূলক মনে করার কোনো কারণ নেই। অলাভজনক মনে করারও কোনো কারণ নেই। সঠিকভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করে গ্রাহকের মাঝে আস্থা সৃষ্টি করতে পারলে প্রতিটি গ্রামেই হাজারের ওপর পলিসি করা সম্ভব এবং তা খুব অল্প খরচে। ফলে ক্ষুদ্রবীমাও লাভজনক হতে পারে। কিন্তু তা নির্ভর করবে কিভাবে তা পরিচালনা করা হচ্ছে। মাঠকর্মীরা গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রিমিয়াম কালেকশন করে স্থানীয় অফিসের মাধ্যমে প্রাপ্তির রসিদ ইস্যু ও ব্যাংকে সেই প্রিমিয়াম জমা করলে খরচ বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তাই গ্রাহক যাতে সহজেই প্রিমিয়ামের টাকা কোম্পানীতে সরাসরি জমা প্রদান করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। গার্ডিয়ান লাইফের এই মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ২০১২ সালের পূর্বে আমাদের দেশের বীমা কোম্পানীগুলোতে ক্ষুদ্র বীমা ব্যবসায়ে বীমাকর্মী ও সংগঠকদের নির্ধারিত বেতন-ভাতা এবং নতুন ও নবায়ন ব্যবসার বিপরীতে ইনসেন্টিভ প্রদান করা হতো যা বছর শেষে সমন্বয় করা হতো। তার মতে, বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত কমিশন সিডিউলে সকল ধরণের বীমা ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রথম বর্ষ ও নবায়নের জন্য একই হারে কমিশন প্রদানের নির্দেশনা দেন। এতে ক্ষুদ্রবীমার মাঠকর্মীদের আয়ের ওপর একটা বিরুপ প্রভাব পড়েছে এবং মাঠকর্মীদের আয় হ্রাস পাওয়ায় তারা অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়ছে। ফলে ক্ষুদ্রবীমার মাধ্যমে কোম্পানীর আয় ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ার কারণে ব্যয় বাড়ছে। আর ব্যয় কমাতে গিয়ে বেশিরভাগ কোম্পানীকেই ক্ষুদ্রবীমার অফিস বন্ধসহ কর্মী ছাঁটাই করতে হচ্ছে। এতে এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, গ্রাহক প্রিমিয়ামের টাকা জমা দিতে অফিস খুঁজে পাচ্ছে না। এমনকি যে বীমাকর্মী এতদিন প্রিমিয়ামের টাকা নিয়ে গেছে তাকেও খুঁজে পাচ্ছে না। ফলে শতশত গ্রাহক অনিশ্চয়তায় পড়েছে। পলিসি তামাদি হয়ে যাচ্ছে। গ্রামে গঞ্জে বীমা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা প্রকট আকার ধারণ করছে। এ পরিস্থিতি নিরসনে আমাদের খুব শিখগিরই একটা কিছু করা দরকার। আর সেটা করতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বীমা কোম্পানি ও অন্যান্য সংস্থাগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায়।অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চিত্র ভিন্ন। তারা প্রিমিয়াম সংগ্রহে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। মাঠকর্মীরা এক ধরণের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করছে। যার মাধ্যমে কোম্পানির একাউন্টে সরাসরি প্রিমিয়াম জমা হচ্ছে। অন্যদিকে গ্রাহকরা তাদের প্রিমিয়াম জমার রশিদ তাৎক্ষণিকভাবে পেয়ে যাচ্ছে। মনিরুল আলম আরো বলেন, আমরা গার্ডিয়ান লাইফে এরইমধ্যে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছি। গ্রাহক তার প্রিমিয়ামের টাকা শুরু থেকেই নিজেই জমা দিচ্ছে অনলাইন ব্যাংক হিসাবে এবং বিকাশ-এর মাধ্যমে। অন্যদিকে গ্রাহক নিজে টাকা জমা দিলেও কর্মীরা মাস শেষে তার কমিশনের টাকা ঠিকই পাচ্ছে। এ ব্যবস্থাটিতে গ্রাহকের টাকার আত্মাসাতের কোনো সুযোগ নেই। আমরা এই পদ্ধতিতে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আমরা আশা করছি প্রিমিয়াম সংগ্রহের এই পদ্ধতিতে দ্রুততম সময়ে গ্রাহকদের মাঝে জীবন বীমার প্রতি সাধারণ মানুষের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী দূর করার ক্ষেত্রে আমরা সফলতা লাভ করবো। গার্ডিয়ান লাইফের এই মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, দেশে এখন মোবাইল কোম্পানিগুলো ফ্রি বীমা সুবিধা দিচ্ছে। এখানে একটি নিরব বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে। খুব অল্প সময়ে নানা পেশার প্রায় ১ কোটি  মানুষকে বীমা সুবিধার আওতায় আনা গেছে। মোবাইল কোম্পানিগুলো যে বীমা সুবিধা দিচ্ছে তা থেকে বছরে গড়ে প্রিমিয়াম অর্জিত হচ্ছে প্রায় ১৫ কোটি। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বীমাগ্রাহকদের পরিবারের মাঝে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দাবী পরিশোধ করা হচ্ছে। এই মোবাইল ব্যবহারকারিদের বীমা সুবিধার আওতায় আনার বিষয়টি ক্ষুদ্রবীমারই একটি বিকল্প ধারণা। ক্ষুদ্রবীমার উন্নয়নের স্বার্থে উন্নত টেকনোলজি ও বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল ব্যবহার করে বিশ্বের অন্যা  দেশ কিভাবে ক্ষুদ্রবীমার প্রসার ও উন্নতি সাধন করেছে এ বিষয়ে বিশদভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করতে হবে এবং  আমাদের দেশের ক্ষুদ্র বীমার ইতিহাসটা ভালো করে উপলব্ধি করতে হবে। ক্ষুদ্রবীমায় প্রিমিয়াম সংগ্রহে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। এতে যেমন খরচ কমে যাবে তেমনি গ্রাহকের আস্থাও বাড়বে। সেই সঙ্গে বাড়বে গ্রাহক সংখ্যা। ফলে ক্ষুদ্রবীমা জনপ্রিয় ও লাভজনক হয়ে উঠবে। গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিইও মনিরুল আলম তপন বলেন, আমি ক্ষুদ্রবীমার কাজ শিখেছি সাফাত আহমেদ চৌধুরীর কাছে হাতে কলমে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে কিভাবে ক্ষুদ্রবীমা পরিচালনা হচ্ছে সে বিষয় অভিজ্ঞতা নেয়ার চেয়ে আমাদের দেশে ক্ষুদ্র বীমার ইতিহাসটা ভালো করে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। কেননা ক্ষুদ্রবীমার প্রবক্তা বাংলাদেশ ও সাফাত আহমেদ চৌধুরী। তবে হ্যা, টেকনোলজি বা ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলগুলোকে অন্যান্য দেশ কিভাবে কাজে লাগাচ্ছে সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নেয়া যেতে পারে।