ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার ঝুঁকি। হুমকির মুখে পড়েছে প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো। এ অবস্থায় সাইবার হামলা বা ঝুঁকি মোকাবেলায় এবং আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সাইবার বীমার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন ব্যবসায়িরা। একারণে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে সাইবার বীমার চাহিদা।
আলিয়াঞ্জ গ্লোবাল করপোরেট অ্যান্ড স্পেশালিস্ট (এজিসিএস) নামে একটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ‘বাণিজ্যিক ঝুঁকি’র ওপর তাদের পঞ্চম বার্ষিক জরিপ প্রকাশ করেছে। ওই জরিপে সাইবার ঝুঁকিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বড় ধরণের হুমকি হিসেবে দেখানো হয়েছে। যা চতুর্থ বছরের মতো শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। একইসঙ্গে এই ঝুঁকি ক্রমবর্ধমান বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
“আলিয়াঞ্জ রিস্ক ব্যারোমিটার- ২০১৬” শীর্ষ ওই জরিপে বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ৮০০ জন রিস্ক ম্যানেজার বা ঝুঁকি ব্যবস্থাপক ও বীমা বিশেষজ্ঞ অংশ নেন। জরিপেরে ফলাফলে দেখা গেছে, তারা সবাই নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সাইবার ঘটনাগুলোকে গুরুতর নতুন হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছেন।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপক ও বীমা বিশেষজ্ঞরা প্রথমবার বাজার উন্নয়নের জন্য শীর্ষ তিনটি করপোরেট ঝুঁকির র্যাংকিং করেছেন। প্রথম অবস্থানে রয়েছে বিপণী ব্যবস্থাপনা ব্যহতকরণসহ ব্যবসায়িক প্রতিবন্ধকতা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাজার উন্নয়ন (প্রাণোচ্ছলতা, প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি, বাজারের নিষ্ক্রিয়তা) ।
আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সাইবার ঘটনা। এরমধ্যে রয়েছে সাইবার অপরাধ, তথ্য নষ্ট, তথ্য প্রযুক্তির ব্যর্থতা ইত্যাদি। এছাড়া চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন- ঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প ইত্যাদি এবং আইন ও বিধিমালায় পরিবর্তন (আর্থিক অনুমোদন ও দেশীয় শিল্পের জন্য সংরক্ষণ নীতি) ।
জরিপের তথ্য অনুসারে, সাইবার ঝুঁকি বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। তবে এর সবই ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য প্রধান হুমকি হিসেবে দেখা দিতে পারে। কোম্পানিগুলো ক্রমবর্ধমান নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রথম ও তৃতীয় পক্ষের ক্ষতি, ব্যবসায় বিঘ্ন এবং নিয়ন্ত্রণের প্রভাব।
এজিসিএস এর প্রতিবেদনে তথ্য বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে যে, আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী শুধুমাত্র সাইবার অপরাধের কারণে প্রতিবছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৪৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হচ্ছে। ২০১৬ সালে সাইবার হামলার ঘটনা আরো বড় আকারের হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। পরবর্তী ১০ বছরেও সাইবার ঘটনাগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দীর্ঘ মেয়াদী ঝুঁকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে সাইবার হামলা চালিয়ে গত কয়েক বছরে বিপুল পরিমাণ তথ্য ফাঁস ও নষ্টের ঘটনায় ক্রমেই গুরুত্ব বাড়ছে সাইবার ইন্স্যুরেন্সের। ইন্টারনেট ভিত্তিক ঝুঁকি বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো ও কার্যক্রম সম্পর্কিত ঝুঁকি থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যকে রক্ষা করতে বিশ্বব্যাপী দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এই সাইবার ইন্স্যুরেন্স। তথ্যভাণ্ডারের সুরক্ষায় সাইবার ইন্স্যুরেন্স কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সে বিষয়টি অনুধাবন করতে শুরু করেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তিরা। এ কারণেই তারা তথ্যের সুরক্ষায় সাইবার ইন্স্যুরেন্সের আশ্রয় নিচ্ছেন।
১৯৯০ সালের মাঝামাঝি সময়ে মূলত সাইবার ইন্স্যুরেন্স প্রথমবারের মতো বাজারে ছাড়া শুরু হয়। ২০১০ সালের দিকে বিষয়টি আরো বেশি গুরুত্ব পেতে শুরু করে এবং ব্যাপকভাবে আলোচনায় উঠে আসে। তবে এসময় খুব অল্প কিছু কোম্পানি ছিল যারা সাইবার ইন্স্যুরেন্স পলিসি প্রস্তাব করতো।
বিশ্বব্যাপী পরিচালিত “পিডব্লিউসি গ্লোবাল স্টেট অব ইনফরমেশন সিকিউরিটি সার্ভে ২০১৬” শীর্ষক জরিপে বলা হয়েছে, বীমা খাতের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত অগ্রগতি লাভ করছে সাইবার ইন্স্যুরেন্স। আশা করা হচ্ছে, আগামী ২০২০ সাল নাগাদ সাইবার ইন্স্যুরেন্সের বর্তমান বাজার ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭.৫ বিলয়নে পৌঁছতে পারে।
বর্তমানে অর্ধশতাধিক কোম্পানি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে এবং ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের বীমা কাভারেজ রয়েছে। গত বছর থেকে সাইবার ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম এবং অন্যান্য ফি বৃদ্ধি পাচ্ছে।তবে কভারেজের পরিমাণ ১০০ মিলিয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করছে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো। উত্তর আমেরিকার একটি কোম্পানি একক বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম, আন্ডাররাইটিংয়ের পরিমাণ ৭৫০ ডলার থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত গ্রহণ করছে।