নতুন ১৩ কোম্পানির অবৈধ ব্যয়ের শীর্ষে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে নতুন জীবন বীমা ব্যবসা শুরু করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২০১৫ সালে অবৈধ ব্যয়ের শীর্ষে রয়েছে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। প্রতিষ্ঠানটি ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের নামে বীমা আইন লঙ্ঘন করে ৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা অবৈধভাবে খরচ করেছে। এ টাকার ৯০ শতাংশ বীমা পলিসি গ্রাহকদের অংশ।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নতুন ব্যবসা শুরু করা প্রতিটি বীমা কোম্পানি ২০১৫ সালে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের খাতে অতিরিক্ত টাকা খরচ করেছে। বছরটিতে নতুন ১৩টি কোম্পানি সম্মিলিতভাবে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে ৪৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। যা আগের বছরের তুলনায় ২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বেশি। ২০১৪ সলে এই কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করে ৪২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ২০১৫ সালে ব্যবস্থাপনা ব্যয় হিসেবে খরচ করেছে ১৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির এ ব্যয় মোট প্রিমিয়াম আয়ের থেকেও বেশি। বছরটিতে ট্রাস্ট লাইফ প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় করেছে ১৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আর নবায়ন প্রিমিয়াম বাবদ আয় হয়েছে ৯১ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির মোট প্রিমিয়াম আয় হয়েছে ১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। যা কোম্পানিটির শুধু ব্যবস্থাপনা ব্যয় খাতে যে খরচ হয়েছে তার থেকে ৩২ লাখ টাকা কম।
একই চিত্র পাওয়া গেছে প্রতিষ্ঠানটির ২০১৪ সালের আয় ব্যয়ের তথ্যে। বছরটিতে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ প্রিমিয়াম আয় করে ১১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবস্থাপনা ব্যয় খাতে খরচ করে ১৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ আয়ের থেকে ব্যয় বেশি হয় ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আর বছরটিতে কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ব্যয় করে ৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
২০১৫ সলে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে প্রটেক্টিভ লাইফ। প্রতিষ্ঠানটি আইন লঙ্ঘন করে ব্যয় করেছে ৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। আগের বছর ২০১৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি অবৈধ ব্যবস্থাপনা ব্যয়ে শীর্ষে ছিল। ওই বছর আইন লঙ্ঘন করে কোম্পানিটি অতিরিক্ত ব্যয় করে ৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
দু’টি বছরেই (২০১৫ ও ২০১৪ সাল) এই জীবন বীমা কোম্পানিটি যে আয় করেছে ব্যয় করেছে তার থেকে বেশি। ২০১৫ সালে প্রটেক্টিভ লাইফ প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় করেছে ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। আর নবায়ন প্রিমিয়াম আয় হয়েছে ৩৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট প্রিমিয়াম আয় হয়েছে ৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যবস্থাপনা ব্যয় হিসেবেই খরচ হয়েছে ৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের বছর ২০১৪ সলে প্রতিষ্ঠানটির প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় ছিল ৬ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং নবায়ন প্রিমিয়াম আয় ছিল ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট প্রিমিয়াম আয় হয় ৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যবস্থাপনা ব্যয় হয় ১০ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
এছাড়া অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২০১৫ সালে এনআরবি গ্লোবাল ২ কোটি ৮৮ লাখ, আলফা লাইফ ২ কোটি ৬৬ লাখ, বেস্ট লাইফ ৪ কোটি ৪৩ লাখ, চাটার্ড লাইফ ৩ কোটি ৬৯ লাখ, ডায়মন্ড লাইফ ২ কোটি ৪১ লাখ, স্বদেশ লাইফ ২ কোটি ৯১ লাখ, সোনালী লাইফ ২ কোটি ১৬ লাখ, জেনিথ ইসলামী লাইফ ৫ কোটি ৬ লাখ, যমুনা লাইফ ৩ কোটি ৮২ লাখ, মার্কেন্টাইল লাইফ ৩ কোটি ৯ লাখ এবং গার্ডিয়াল লাইফ ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের খাতে অবৈধভাবে ব্যয় করেছে।
জীবন বীমা কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের কারণে গ্রাহকের স্বার্থের ক্ষতি হয়। ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হন গ্রাহকরা। এদিকে গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষায় বীমা আইনে কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। এবিষয়ে বীমা আইন ২০১০’র ৯৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোন বীমাকারী তাহার বীমা ব্যবসা এইরূপে পরিচালনা করিতেছে যাহাতে বীমা পলিসি গ্রাহকদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হইতে পারে এবং প্রয়োজনীয় সলভেন্সি মার্জিন রাখিতে সমর্থ হইতেছে না তবে বীমাকারীকে তাহার বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ প্রদান করিয়া কর্তৃপক্ষ উহার পরিচালনা পর্ষদকে সাসপেন্ড করিতে পারিবে এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণাধীন বীমাকারীর কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার জন্য একজন প্রশাসক নিযুক্ত করিবে।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য জুবের আহমেদ ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে বলেন, পুরনো বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় আগের তুলনায় কমে এসেছে। তবে নতুন কোম্পানিগুলোর অবস্থা একেবারেই খারাপ। এসব কোম্পানির ব্যয়ের অবস্থা নিয়ে আইডিআরএ’র অনেক অভিযোগ আছে। তবে এখনি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে না। নতুন কোম্পানি হিসেবে তাদের কিছুটা ছাড় দেয়া হবে। তাই বলে একেবারেই ছাড় দেয়া হবে এমনটাও না। এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর নির্বাহীদের সঙ্গে বসা হয়েছে। খুব শিগগিরই কোম্পানির পরিচালনা পরিষদের সঙ্গে বসা হবে। এরপরও যদি খরচ না কমায় তাহলে আমরা কঠোর হতে বাধ্য হবো।