খরচ বেশি হওয়ায় ক্ষুদ্রবীমা থেকে সরে আসছি: শাহ আলম

বাংলাদেশের ক্ষুদ্রবীমার সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে বিশেষ আয়োজন করেছে দেশের প্রথম এবং একমাত্র বীমা ভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। বিশেষ আয়োজনের এ পর্বে থাকছে ক্ষুদ্রবীমার ওপর মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের অভিমত। প্রাইম ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ শাহ আলম, এফসিএ’র এই অভিমত নিয়েছেন আবদুর রহমান। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য অভিমতটি তুলে ধরা হলো: প্রাইম ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ আলম ক্ষুদ্রবীমার বিষয়ে বলেন, গরীব মানুষের উন্নয়নের জন্য এম শেফাক আহমেদ এটা প্রথম চালু করেছিলেন। কিন্তু বীমা কর্মীরা মাসে মাসে গ্রাহকের বাড়ি থেকে টাকা এনে যে পার্সেন্টেজ পায় তা খুবই কম। যা দিয়ে তাদের পোষায় না। ক্ষুদ্রবীমায় বীমা কর্মীদের লাভ কম, কষ্ট বেশি। তাই বীমা কর্মীরা সরে যাচ্ছে। আবার বীমা কর্মীদের সবার চরিত্র সমান নয়। অনেকে আছে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা তুলে এনে খরচ করে ফেলে, জমা দেয় না। তাই ক্ষুদ্রবীমায় ঘাটতির পরিমাণ বেশি। এজন্য টাকা ক্যাশিয়ারের কাছে জমা দিতে হবে, কালেক্টরের কাছে নয়। এতে করে যথাযথভাবে টাকা জমা হবে। শাহ আলম বলেন, একজন প্রতিনিধি একবার গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা তুলে এনে ক্যাশিয়ারের কাছে জমা দেয়। আবার সেই জমার রশিদ গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে হয়। এতে করে তাদের পরিশ্রম ও খরচ বেশি হয়। কিন্তু আমরা তো তাদেরকে ১০% এর বেশি দিতে পারি না। খরচ বেশি হওয়ায় আমরা ক্ষুদ্রবীমা থেকে সরে আসছি। তিনি আরো বলেন, একক বীমা ও ক্ষুদ্রবীমা প্রায় একই। তবে কিস্তির পরিমাণে পার্থক্য আছে। এক্ষেত্রে কালেক্টর বা বীমা প্রতিনিধি গ্রাহকের বাড়িতে গিয়ে টাকা তুলে আনে। ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে ক্ষুদ্রবীমা চালু করা হয়েছে। কিন্তু দুশ্চরিত্রের লোকদের কারণে বদনাম হচ্ছে।  ক্ষুদ্রবীমায় সম্মানের চেয়ে বদনাম বেশি বলে উল্লেখ করেন তিনি। ক্ষুদ্রবীমার গ্রাহক কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ক্ষুদ্রবীমার প্রতিনিধিদের যে পরিশ্রম হয় সে অনুপাতে টাকা পায় না বলে তাদের পোষায় না। তাছাড়া গ্রাহকরা সহজে বীমা করতে চায় না। তাদেরকে অনেক বুঝিয়ে বীমা করাতে হয়। তাই কালেক্টররা চলে যাচ্ছে। তবে ক্ষুদ্রবীমার গ্রাহকরা এখন বেশি প্রিমিয়াম দিয়ে অর্থাৎ দুই/ আড়াই হাজার টাকা দিয়ে বীমা করছে। বীমা দাবিতে কোম্পানিগুলো কেন মুনাফা দিতে পারছে না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা গ্রাহকদের লাভ দিচ্ছি। অন্য কোম্পানিগুলো কি করছে তা জানি না। মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে থাকাকালেও আমরা গ্রাহকদের মুনাফা দিয়েছি। লাইফ কোম্পানির মোট ব্যবসার (গ্রস প্রিমিয়াম) ৩০ শতাংশ ক্ষুদ্রবীমার প্রিমিয়াম হওয়া বাধ্যতামূলক নয় বলেও জানান শাহ আলম। বীমা কর্মীদের প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই উল্লেখ করে প্রাইম ইসলামি লাইফের এই মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ট্রেইনিং ইন্সটিটিউট আছে। যেখানে সারা বছরই কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এমনকি নীতি-নৈতিকতা ও শরীয়াহ বিষয়েও আমাদের বীমা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। অন্যান্য দেশগুলো কিভাবে ক্ষুদ্রবীমা নিয়ে কাজ করছে এবং আমরা তাদের তুলনায় কোন অবস্থানে আছি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি অন্যদেশগুলোর অবস্থা জানি না। তবে ভারতে এলআইসি দীর্ঘ দিন ধরে একচ্ছত্রভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে। তাই তাদের অবস্থা ভালো। তাছাড়া প্রকৃতিগতভাবেই হিন্দুদের সঞ্চয় প্রবণতা বেশি। কিন্তু মুসলমানদের সঞ্চয় প্রবণতা কম। ক্ষুদ্রবীমার ওপর নিজের কোন একাডেমিক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ নেই উল্লেখ করে শাহ আলম, এফসিএ বলেন, ক্ষুদ্রবীমার ওপর পড়ালেখার দরকার নেই। কারণ, একক বীমা আর ক্ষুদ্রবীমা প্রায় একই। শুধু মানুষের অবস্থা বুঝে কথা বলতে পারলেই হলো। অল্প শিক্ষিতদের সঙ্গে কথা বলার সময় বেশি শিক্ষিত’র ভাব দেখালে ফল আরো উল্টো হয়। তিনি আরো বলেন, ব্যক্তিগতভাবে ফিন্যান্সের লোক হলেও দীর্ঘ দিন ধরে বীমা নিয়ে কাজ করতে করতে তার অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে। ১৯৯৯ সালে ন্যাশনাল লাইফের সিএফও’র মধ্য দিয়ে তার বীমা জগতে পদার্পন। তবে উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে তিনি আগ্রহের সঙ্গে অংশ নেন বলেও জানান প্রাইম ইসলামি লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আলম। ক্ষুদ্রবীমা নিয়ে কোম্পানি এবং নিজের পরিকল্পনার বিষয়ে মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ক্ষুদ্রবীমার উন্নয়নের কোন সুযোগ নেই। কারণ, কালেক্টর বা বীমা প্রতিনিধিদের হিসাব মতে এতে খরচ বেশি। ১০ টাকার প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতে গিয়ে ১৫ টাকা খরচ হয়। এই খরচ কমানোর কোন সুযোগ নেই। বর্তমানে ক্ষুদ্রবীমার গ্রাহকরা “ছোট একক বীমা” গ্রহণ করছে। তবে ক্ষুদ্রবীমা থেকে সরে যাচ্ছে অর্থ বিলুপ্ত নয় বরং ধরণ পরিবর্তন হচ্ছে।