ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের সাড়ে তিন কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাড়ে ৩ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে পরবর্তী ৩ বছর ৮ মাসে কোম্পানি প্রিমিয়াম আয়ের বিপরীতে এ ভ্যাট ফাঁকি দেয়। কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তাদের আকর্ষিক পরিদর্শনে এ অনিয়ম ধরা পড়ে।
এ ঘটনায় ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির মামলা করা হয়েছে। একইসঙ্গে ফাকি দেয়া ভ্যাটের টাকা কেন পরিশোধ করা হবে না তা জানতে চেয়ে নোটিশ জারি করেছে কর কর্তৃপক্ষ। নোটিশে ১৫ দিনের সময় দেয়া হয়। তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। অন্যদিকে এনিবআর সূত্র জানায় কোম্পানির পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, বৃহৎ করদাতা ইউনিট, মূল্য সংযোজন কর, ঢাকার কর্মকর্তারা গত ২ নভেম্বর ২০১৫ তারিখ ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির হেড অফিস আকর্ষিক পরিদর্শন করেন। এসময় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা হয়। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটারে রক্ষিত তাদের ব্রাঞ্চ ওয়াইজ বিজনেস সামারি প্রিন্ট করে নিরীক্ষার জন্য ‘মূসক-৫’ এর মাধ্যমে আটক করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির ব্রাঞ্চ ওয়াইজ বিজনেস সামারিতে দেখা যায়, ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির মোট প্রিমিয়ামের পরিমাণ ২৪৪ কোটি ৯৭ লাখ ২ হাজার ৩৮২ টাকা। অব্যাহতি প্রাপ্ত প্রিমিয়িামের পরিমাণ ৮৩ কোটি ৪৬ লাখ ৯৮ হাজার ১২৪ টাকা।
বিজনেস সামারিতে প্রদর্শিত মোট প্রিমিয়াম ২৪৪ কোটি ৯৭ লাখ ২ হাজার ৩৮২ টাকা হতে দাখিলপত্রে প্রদর্শিত অব্যাহতি প্রাপ্ত প্রিমিয়াম ৮৩ কোটি ৪৬ লাখ ৯৮ হাজার ১২৪ টাকা বাদ দিলে মূসক আরোপযোগ্য প্রিমিয়ামের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬১ কোটি ৫০ লাখ ৪ হাজার ২৫৮ টাকা।
এই প্রিমিয়ামের ওপর ১৫% হারে মূসকের পরিমাণ ২৪ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার ৬৩৮.৭০ টাকা। কিন্তু দাখিলপত্র অনুযায়ি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ উক্ত সময়ে মূসক পরিশোধ করেছে ২০ কোটি ৬৭ লাখ ৯৩ হাজার ২৭৪.৫০ টাকা। অর্থাৎ ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৫৭ হাজার ৩৬৪.২০ টাকা মূসক বাবদ কম পরিশোধিত হয়েছে।
কর কর্তৃপক্ষের ওই নোটিশে ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের রাজস্ব ফাঁকির এ কার্যক্রমকে মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ এর ৬, ৩২ ও ৩৫ ধারা ও মূল্য সংযোজন কর বিধিমালা, ১৯৯১ এর বিধি ১৭, ২২, ২৩ ও ২৪ এর লঙ্ঘন এবং একই আনের ধারা ৩৭ এর উপ-ধারা (২) এ দফা (গ) ও দফা (ড) এ বর্ণিত অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কোম্পানির এডিশনাল এমডি ও সিএফও আবুদল হামিদ এফসিএ’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে তিনি জানান, সব ধরনের প্রিমিয়াম আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে হিসাব করে সাড়ে ৩ কোটি টাকা কর ফাঁকির হিসাব দিয়েছে এনবিআর। এ হিসাব সঠিক নয়। আমরা কোনো ভ্যাট ফাঁকি দেইনি। আমাদের অনেক কো-ইন্স্যুরেন্স আছে যেখানে ভ্যাট দেয়ার কথা লিডারের। তা আলাদা করে হিসাব করা হয়নি। আমরা এ বিষয়ে এনবিআর’র সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কোনো কথা শোনেনি।
এ বিষয়ে কর কমিশনার শাহনাজ পারভীনের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে বলেন, অনেক কোম্পানিরই ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। আমরা কোম্পানিগুলোকে সংশোধনের চেষ্টা করছি। তবে ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স সময় চেয়ে নোটিশের জবাব দিয়েছে বলে জানান তিনি।