বীমা প্রতিনিধিগণ কোম্পানির বেতনভূক কর্মচারী নয়। তাদের কাজ হল শুধু জনসাধারণের মধ্যে বীমাপত্র বিক্রয় করা। বীমাপত্র বিক্রয়ের মাধ্যমে গ্রাহকগণের অর্থাৎ বীমাগ্রহীতাদের নিকট হতে যে প্রিমিয়াম সংগৃহীত হয় তার উপর একটি নির্ধারিত হারে তারা কমিশন পান। তাই বীমা প্রতিনিধি বীমা কোম্পানির কোনো প্রকার ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না, কিংবা কোম্পানিও বীমা প্রতিনিধিকে তার নিম্নতম কোনো কাজে নিয়োগ করতে পারে না।
১৯৩৮ সালের বীমা আইন অনুযায়ী যে ব্যক্তি বীমা কোম্পানির প্রতিনিধি হয়ে কাজ করার অনুমতিপত্র অর্থাৎ লাইসেন্স পান তাকেই বীমা প্রতিনিধি বলা হয়। সাবালক সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী ফৌজদারি অপরাধে দন্ডিত নন এবং জাল জুয়াচুরি ইত্যাদি হতে মুক্ত যে কোনো ব্যক্তিকে বীমা প্রতিনিধি নিযুক্ত হওয়ার জন্য একটা নির্দিষ্ট ফি সহ বীমা নিয়ন্ত্রকের নিকট আবেদন করতে হয় এবং প্রথম তিন বৎসরের জন্য বীমা প্রতিনিধিকে অনুমতি পত্র দেয়া হয়। নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর সেই অনুমতি নবায়ন করতে হয়। কোনো ব্যক্তি একবার বীমা প্রতিনিধির অনুমতি পত্র পেলে উক্ত ব্যক্তি সব বা যে কোনো বীমা কোম্পানির বীমা প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করতে পারে। প্রত্যেক বীমা কোম্পানির জন্য পৃথক পৃথক অনুমতি পত্র নিতে হয় না। বীমা প্রতিনিধির অনুমতিপত্র ব্যতীত বীমা ব্যবসা করা বেআইনি এবং আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ।</p>
বীমা প্রতিনিধির প্রকারভেদ:
বীমার প্রতিনিধি সাধারণতঃ চার প্রকারের হতে পারে। যেমন:
১. সাধারণ প্রতিনিধি প্রথা
২. শাখা কার্যালয়
৩. প্রত্যক্ষভাবে বিবরণকারী প্রতিনিধি প্রথা
৪. বিশেষ প্রতিনিধি প্রথা।
এ চার প্রকার প্রতিনিধি প্রথার বিশদ পরিচয় নিম্নে প্রদান করা হলো:
সাধারণ প্রতিনিধি প্রথা:
এ প্রকার প্রতিনিধি প্রথা বীমা ব্যবসার ক্ষেত্রে অতি পুরাতন ব্যবস্থা। এ প্রথা অনুযায়ী কোম্পানি একজন সাধারণ প্রতিনিধি নিয়োগ করে একটি বিশেষ অঞ্চলে কাজ করার জন্য তার উপর দায়িত্ব প্রদান করে। এভাবে নিযুক্ত সাধারণ প্রতিনিধি কয়েকজন সাব এজেন্ট নিযুক্ত করে। সাব এজেন্টগণ সাধারণ প্রতিনিধিদের কাছে দায়ী থাকে। এ শ্রেণীর সাব এজেন্টদের সাথে সাধারণ প্রতিনিধিকে চুক্তি করতে হয় এবং চুক্তি অনুযায়ী তারা কমিশন পান। সাধারণ প্রতিনিধি তার নিজের সংগৃহীত ব্যবসায়ের জন্য কোম্পানির কাছ হতে সরাসরিভাবে কমিশন পান এবং সাব এজেন্টদের সংগৃহীত কাজের জন্য পান অতিরিক্ত কমিশন। কোম্পানির দিক হতে আদায়কৃত কমিশন হতে সাধারণ প্রতিনিধি তার অফিস পরিচালনার সকল প্রয়োজনীয় ব্যয় বহন করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাধারণ প্রতিনিধি তার এজেন্সির মাধ্যমে সংগৃহীত ব্যবসার লভ্যাংশ পেয়ে থাকেন।
শাখা অফিস:
বীমা কোম্পানি বিভিন্ন স্থানে শাখা অফিস স্থাপন করে থাকে। প্রত্যেক শাখা অফিসের ব্যবস্থাপনার জন্য একজন বেতনভোগী ব্যবস্থাপক বা ম্যানেজার নিযুক্ত করা হয়। শাখা অফিসের এ ব্যবস্থাপক ব্যবসা সংগ্রহের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ করেন। যদি কোনো শাখা অফিসের কাজ বিশেষভাবে ভালো হয়, তা হলে উক্ত শাখার ম্যানেজারকে তাঁর বেতনের অতিরিক্ত অধিবৃত্তি বা বোনাস প্রদান করা হয়।
সরাসরি রিপোর্ট দানকারী প্রতিনিধি:
এ পদ্ধতিতে কোন বিশেষ অঞ্চলের জন্য প্রধান কার্যালয় হতে সরাসরি প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এই শ্রেণীর প্রত্যেক প্রতিনিধির উপর বিশেষ বিশেষ অঞ্চলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণভার অর্পিত হয়। সাধারণ প্রতিনিধি প্রথার সাথে এ ব্যবস্থার পার্থক্য এই যে, সাধারণ প্রতিনিধি সাব-এজেন্টদের মাধ্যমে বীমা সংগ্রহ করে। কিন্তু সরাসরি রিপোর্ট দানকারী প্রতিনিধি প্রথায় নিয়োজিত প্রতিনিধিগণ প্রত্যক্ষভাবে প্রধান কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকে; এ ক্ষেত্রে কোনো মধ্যস্থতার অস্তিত্ব নেই।
বিশেষ প্রতিনিধি প্রথা:
বিশেষ প্রতিনিধিগণ কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এ শ্রেণীর প্রতিনিধিগণকে কোম্পানি প্রত্যক্ষভাবে বীমা বিক্রয়ের জন্য নিয়োগ করে না। সমগ্র দেশে ভ্রমন করে উপযুক্ত স্থানে এজেন্সি সংগঠনই এই শ্রেণীর বিশেষ প্রতিনিধিদের কাজ।
এই প্রতিনিধিদের মক্কেল কারা?
এ প্রশ্নের জবাব সোজা। সমাজের প্রতিষ্ঠিত, শিক্ষিত, সুস্থ, সচেতন ও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তিরাই একজন বীমা প্রতিনিধির মক্কেল। একজন উকিল ও চিকিৎসকের ন্যায় তাকে তার মক্কেলের প্রতীক্ষায় চেয়ে থাকতে হয় না। তার দ্বার অবারিত, তার ক্ষেত্র সীমাহীন। দেশ ও সমাজের সমৃদ্ধিই তার কামনা।
একজন বীমা প্রতিনিধির জীবন বীমা ব্যবসায় থেকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার এবং উচ্চাকাঙ্খা বাস্তবায়নের সুযোগ সবচেয়ে বেশী। আর এ জন্যই পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষিত ছেলেদের ন্যায় আমাদের দেশের ছেলেরাও জীবন বীমাকে জীবিকা নির্বাহের একটি প্রধান ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করছে। জীবন বীমা ব্যবসার মাধ্যমে যেমন প্রত্যক্ষভাবে মানুষের সেবা করা যায়, অন্য কোন ব্যবসাতে তেমন সুযোগ নেই। আর এ জন্যই পৃথিবীতে বীমা শিল্পকেই একমাত্র সেবা প্রদানকারী শিল্প বলে গণ্য করা হয়ে থাকে। ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষের জীবনে আশার আলো বিকিরণ করেন জীবন বীমার প্রতিনিধিগণ। তার কাজের বিনিময়ে প্রযোজ্য অসহায় ব্যক্তির পঙ্গুত্ব বা বার্ধক্য অবস্থায় এককালীন অর্থ বা মাসিক পেনশন প্রদান, এতিম ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার খরচ যোগান, অসহায় বিধবার হাতে অর্থ প্রাপ্তি এসবের কি ইন্দ্রিয়াতীত মূল্য কম? প্রত্যেকটি জীবন বীমা কর্মী দেশ ও সমাজ সেবক হিসাবে আজ বিভিন্ন দেশে স্বীকৃত ও সম্মানিত। আর এ জন্যই জীবন বীমার প্রতিনিধিকে সভ্যতার অগ্রদূত বলা হয়ে থাকে।
এ তো গেল আদর্শগত দিক; এর বৈষয়িক দিকই কি কম? একজন সফল বীমা প্রতিনিধি মাসে যা আয় করেন এদেশে কোন কোন চাকুরীজীবির বার্ষিক আয় থেকে তা অধিক বৈ কম নয়।