বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পাচ্ছে সাইবার ইন্স্যুরেন্স

Cyber Insuranceআবদুর রহমান: সাইবার হামলা চালিয়ে গত কয়েক বছরে বিপুল পরিমাণ তথ্য ফাঁস ও নষ্টের ঘটনায় ক্রমেই গুরুত্ব বাড়ছে সাইবার ইন্স্যুরেন্সের। ইন্টারনেট ভিত্তিক ঝুঁকি বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো ও কার্যক্রম সম্পর্কিত ঝুঁকি থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যকে রক্ষা করতে বিশ্বব্যাপী দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এই সাইবার ইন্স্যুরেন্স। তথ্যভাণ্ডারের সুরক্ষায় সাইবার ইন্স্যুরেন্স কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সে বিষয়টি অনুধাবন করতে শুরু করেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তিরা। এ কারণেই তারা তথ্যের সুরক্ষায় সাইবার ইন্স্যুরেন্সের আশ্রয় নিচ্ছেন। অন্যদিকে বাজারের চাহিদা পূরণ করতে অব্যাহতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সাইবার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো। সাইবার ইন্স্যুরেন্স মূলত অপেক্ষাকৃত একটি নতুন পণ্য। যা ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম বাজারে ছাড়া শুরু হয়। ২০১০ সালের দিকে বিষয়টি আরো বেশি গুরুত্ব পেতে শুরু করে এবং ব্যাপকভাবে আলোচনায় উঠে আসে। তবে এসময় খুব অল্প কিছু কোম্পানি ছিল যারা সাইবার ইন্স্যুরেন্স পলিসি প্রস্তাব করতো। বর্তমানে অর্ধশতাধিক কোম্পানি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে এবং ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের বীমা কাভারেজ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে আগামী ২০২০ সাল নাগাদ সাইবার ইন্স্যুরেন্সের বাজার তিন গুণ বেড়ে ৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে। সাইবার ইন্স্যুরেন্স এমন একটি বীমা পণ্য যা ব্যবসা-বাণিজ্যকে ইন্টারনেট ভিত্তিক ঝুঁকি বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো ও কার্যক্রম সম্পর্কিত ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। এই প্রকৃতির ঝুঁকি সাধারণত প্রথাগত বাণিজ্যিক সাধারণ দায় পলিসি থেকে ভিন্ন। সাইবার ইন্স্যুরেন্স পলিসির আওতায় ক্ষতির বিপরীতে ফার্স্ট পার্টি কভারেজ যেমন তথ্য ধ্বংস, চাঁদাবাজি, চুরি, হ্যাকিং ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্স বা দায় বীমা কাভারেজ অন্যান্য কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলোকে নিরাপত্তা বিধান করে। উদাহরণসরূপ, ত্রুটি ও বর্জন, তথ্য রক্ষা করতে ব্যর্থতা, মানহানি এবং অন্যান্য সুবিধাসহ নিয়মিত নিরাপত্তা পরিদর্শন, ঘটনা পরবর্তী জনসংযোগ ও অনুসন্ধানী খরচ ইত্যাদি। সাইবার ইন্স্যুরেন্স পলিসির দ্বারা বিভিন্ন ধরণের ঝুঁকি গ্রহণ করা হয়। এসব ঝুঁকি পলিসির ওপর ভিত্তি করে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন হতে পারে। সাধারণভাবে এসব ঝুঁকির মধ্যে যেগুলো থাকতে পারে তা হলো, দায়- যা প্রতিরক্ষা খরচ, ফায়সালা, আদালতের রায়কে অন্তর্ভুক্ত করবে। সঙ্কট ব্যবস্থাপনা- যার আওতায় জনসংযোগ, তথ্য চ্যুতির প্রজ্ঞাপন, ঋণ পর্যবেক্ষণ সেবা দেয়া হতে পারে। এছাড়া ব্যবসা প্রতিবন্ধকতায় সেবা প্রদান, ইলেক্ট্রনিক তথ্যের ক্ষতিগ্রস্ত বা প্রতিস্থাপন, সাইবার চাঁদাবাজির খরচ, নিয়ন্ত্রক প্রতিপালন খরচ ইত্যাদি। সাইবার ইন্স্যুরেন্স কভারেজ খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হতে পারে এবং প্রিমিয়াম সাধারণত একটি কোম্পানির নিরাপত্তা অনুশীলনের ওপর নির্ভরশীল। সাইবার ইন্স্যুরেন্স পরিবাহকরা ব্যবসার দ্বারা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রয়োগে আগ্রহী, শুধুমাত্র অ্যান্টিভাইরাস/ অ্যান্টিম্যালওয়্যার সফটওয়্যার সফটওয়ার বা ক্ষেত্রমত কোম্পানির ফায়ারওয়াল থাকলেই চলবে না। ইন্স্যুরেন্স পরিবাহকরা জানতে চায় যে, ব্যবসায় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা আছে কিনা, কর্মচারিরা কিভাবে তথ্য সন্নিবেশ ও উদ্ধার করে এবং ক্ষেত্রমত ব্যবসায় সাংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রণ আছে কিনা। যেগুলো প্রতারণা বা প্রতারণামূলক কার্যক্রমে বাধা দিতে সহযোগিতা করবে, যা তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটতে সুযোগ দেয়। গত বছর থেকে সাইবার ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম এবং অন্যান্য ফি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে কভারেজের পরিমাণ ১০০ মিলিয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করছে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো। উত্তর আমেরিকার একটি কোম্পানি একক বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম, আন্ডাররাইটিংয়ের পরিমাণ ৭৫০ ডলার থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত গ্রহণ করছে। কোম্পানিটি স্বাধীনভাবে কাজ করছে এমন প্রতিনিধি ও বীমা দালালদের দ্বারা সাইবার ইন্স্যুরেন্স পলিসি বিক্রি করছে। বিশ্বব্যাপী পরিচালিত “পিডব্লিউসি গ্লোবাল স্টেট অব ইনফরমেশন সিকিউরিটি সার্ভে ২০১৬”শীর্ষক জরিপে বলা হয়েছে, বীমা খাতের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত অগ্রগতি লাভ করছে সাইবার ইন্স্যুরেন্স। আশা করা হচ্ছে, আগামী ২০২০ সাল নাগাদ সাইবার ইন্স্যুরেন্সের বর্তমান বাজার ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭.৫ বিলয়নে পৌঁছতে পারে। ২০১৫ সালের ৭ মে থেকে ১২ জুন পর্যন্ত বিশ্বের ১২৭টি দেশে পরিচালিত ওই অনলাইন জরিপে বিভিন্ন কোম্পানির ১০ হাজার কর্তাব্যক্তি ই-মেইলের মাধ্যমে জবাব পাঠান।  প্রশ্নের জবাব দানকারিদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ ছিল উত্তর আমেরিকার, ৩০ শতাংশ ছিলেন ইউরোপের, ১৬ শতাংশ এশিয়া প্যাসিফিকের, ১৪ শতাংশ দক্ষিণ আমেরিকার এবং ৩ শতাংশ মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার।