২০১৫ সাল: বীমা জগতে নিকৃষ্ট ৯ কেলেঙ্কোরি

Insurance Fraud- 2015আবদুর রহমান: নানান ধরণের ঘটনার জন্ম দিয়েছে পেছনে ফেলে আসা ২০১৫ সাল। বছরজুড়ে বিশ্বব্যাপী বীমা খাতে অনেক ঘটনাই ঘটেছে। তবে “কোয়ালিশন এগেইন্সট ইন্স্যুরেন্স ফ্রড” ৯টি বীমা প্রতারণার ঘটনা প্রকাশ করেছে, যেগুলোকে বলা হয় ‘হল অব শেম’। অর্থাৎ বীমা জগতে এই ঘটনাগুলো হচ্ছে সবচেয়ে খারাপ, জঘন্য ও ন্যাক্কারজনক। কঠোর নিয়ম আর প্রযুক্তি নির্ভর মার্কিন মুল্লুকে এসব ঘটনার জন্ম দিয়েছে ৯ হোতা। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য ঘটনাগুলো তুলে ধরা হলো। জীবন বীমার টাকা পেতে ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা: আর্থিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বীমার টাকা পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত লাইবেরিয়ান নাগরিক কলিন্স। দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান কলিন্স। চাকরিহীন কলিন্সের ৭ সন্তানের খাওয়া-পড়া আর পোশাকের খরচ বহন করতে দিশেহারা অবস্থা। ৬৫ হাজার ডলারের শিক্ষা ঋণও ছিল কলিন্সের। এদিকে আদালত তাকে যেকোন ধরণের কাজ খুঁজে নিয়ে মাসে ৬ হাজার ডলার পরিশোধের আদেশ দিয়েছিলেন। কলিন্সের দু’টি জীবন বীমা পলিসি কেনা ছিল। যার মধ্যে একটি পলিসি কলিন্স ও তার সন্তানদের প্রত্যেকের জন্য ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত বীমা কাভারেজ ছিল। আর অন্য পলিসি শুধুমাত্র তার ছেলে বারওয়ের জন্য, যার মাধ্যমে ৩০ হাজার মার্কিন ডলার বীমা সুবিধা পাওয়া যাবে। এই পরিমাণ অর্থ পাওয়া গেলে কলিন্সের সংকট অনেকটাই কেটে যেতো। বারওয়ের মৃত্যুর আগে কলিন্স বীমা কোম্পানিকে এই পলিসির বিপরীতে ৫০ হাজার ডলার পরিশোধের দাবিও জানিয়েছিল। কিন্তু সংকট যখন চরমে তখন কলিন্স সিদ্ধান্ত নিল বারওয়েকে হত্যা করে তার জীবন বীমার টাকা উত্তোলন করবেন। তাই ১০ বছরের শিশু বারওয়েকে নির্দয়ভাবে মারপিটের পর গলাটিপে হত্যা করে মিসিসিপি নদীতে ফেলে দেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বারওয়ে নিখোঁজ হওয়ার আগে নিজের বাড়ির পাশে এসে স্কুলবাস থেকে নেমেছিলেন। এসময় বারওয়ে তার বাবার গাড়িতে ওঠার আগে বন্ধুদের বলেছিল, “ওইযে আমার বাবা”। মিসিসিপি নদীর যে স্থানে বারওয়ের লাশ পাওয়া যায় ঘটনার ৩০ দিন আগে কলিন্স সেই স্থানটি পরিদর্শন করেছিলেন বলে জানা যায়। এছাড়াও কলিন্সের আই ফোনের রেকর্ডে দেখা যায় ঘটনার আগে তিনি জীবন বীমা পলিসি খুঁজে ছিলেন। তদন্তের পর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশ পেলে কালিন্সকে আটক করা হয়। পরে আদালতে দাঁড়িয়ে কলিন্স বারওয়ের হত্যার কথা স্বীকার করেন। সব ঘটনা শোনার পর আদালত তাকে ৪০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। একপাল কুকুরকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা: গ্লোরিয়া লি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। পোষা কুকুর বিক্রি করতেন। লস ভেগাসে “প্রিন্স অ্যান্ড প্রিন্সেস পে বুটিক” নামে তাদের একটি দোকান রয়েছে। নানান কারণে লি ও তার ছেলে বন্ধু কার্ক বিলস দেউলিয়া হয়ে যাওয়ায় খুব অর্থ সংকটে ভুগছিলেন। একপর্যায়ে লি সিদ্ধান্ত নিলেন, খুব গোপনে তার বীমা করা দোকানটি পুড়িয়ে দেবেন। যেখানে দামি দামি একপাল পোষা কুকুর রয়েছে। পরে তিনি বীমা কোম্পানির কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করবেন। নিজের বিরাট অংকের ঋণ থেকে বাঁচতে একপাল কুকুরকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার এ হীন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন লি। সিদ্ধান্ত মোতাবেক তারা রাত একটার আগে দোকানের পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এসময় তারা কুকুরগুলো খাঁচা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তাদের এই ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যায় দোকানের সিকিউরিটি ক্যামেরার কারণে। লি ও তার বন্ধু যখন আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিল তখন তাদের সব কর্মকাণ্ড ওই ক্যামেরায় ধরা পড়ে। তবে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র স্প্রিংকলার পানি ছিটিয়ে বেশিরভাগ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং মর্মান্তিক মৃত্যুর হাত থেকে কুকুরগুলো রক্ষা পায়। ঘটনাটি ব্যাপকভাবে তোলপাড় সৃষ্টি করে। দেশটির প্রাণী অধিকার কর্মীরা ঘটনার বিচারের সময় আদালতের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করে। হটলাইনে হাজার হাজার মানুষ কুকুরগুলোকে পোষ্য গ্রহণের আগ্রহ দেখায়। পরে এ্যানিমাল ফাউন্ডেশন কুকুরগুলোর জন্য ২৫০ ডলার করে র‌্যাফেল টিকিট বিক্রি করে। এ ঘটনায় লি’র আট বছরের কারাদণ্ড হয়। রিচমন্ড হিল বিস্ফোরণ: ২০১২ সালের ১০ নভেম্বর রিচমন্ড হিলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে দু’জনের মৃত্যু হয় এবং ৫ মিলিয়ন মূল্যের সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইন্ডিয়ানাপোলিসে ওই বিস্ফোরণের মূল হোতা মার্ক লিওনার্ড এবং তার বান্ধবী মোনসেরাট শার্লি। তারা পাশাপাশি বাড়িতে বাস করতেন। বিস্ফোরণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল শার্লির বাড়ি। বিস্ফোরণে নিহতরা হলেন তাদের প্রতিবেশি জন ডিওন এবং তার স্ত্রী জেনিফার নিহত। এছাড়াও আরো ৩০ জন আহত হয়। এ ঘটনার বিচারে আদালত জানিয়েছেন, বীমা দাবির অর্থ আদায়ের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। অগ্নিসংযোগ করে হত্যার ঘটনায় শার্লিসহ আরো ৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এ ঘটনার প্রধান প্রত্যক্ষদর্শীকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্রের জন্য শার্লির বন্ধু মার্ক লিওনার্ডকে অভিযুক্ত করা হয়। ২০১৫ সালের জুনে মার্ক লিওনার্ড এর বিচার শুরু হয়। যা এখনো চলমান রয়েছে। ভুয়া চিকিৎসায় ডাক্তারের ৩২ মিলিয়ন ডলায় বীমা দাবি: দক্ষিণ-পূর্ব মিশিগান শহরের ডেট্রোয়েট এলাকায় চিকিৎসা সেবা প্রদান করতেন নিউরোসার্জন ডা. এরিয়া সাবিত। এলাকাটিতে গড়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান শিল্প কারখানা বিশেষ করে অটোমোবাইল শিল্প। দীর্ঘস্থায়ী পিঠের ব্যাথা নিয়ে দলে দলে রোগি আসতো ডা. সাবিতের কাছে। যাদের বেশিরভাগই স্বাস্থ্যবীমার আওতায় চিকিৎসা গ্রহণ করতো। চিকিৎসক হিসেবে তার যথেষ্ট সুনাম ছিল এবং রোগিরা তার সেবায় সন্তোষ প্রকাশ করতো। এই সুযোগে ডা. সাবিত বীমা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে স্বাস্থ্য সেবার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ঘটনাচক্রে তার প্রতারণার সব তথ্য ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) কর্মকর্তাদের কাছে ধরা পড়ে যায়। ডা. সাবিতকে আটকের পর তার হাসপাতালের এক কর্মচারী এফবিআই কর্মকার্তাদের সব ঘটনা ফাঁস করে দেন। তিনি জানান, ডা. সাবিত খুব দক্ষতার সঙ্গে বীমা কোম্পানি ও রোগিদের সঙ্গে প্রতারণা করতেন। তিনি অপ্রয়োজনেও রোগির সার্জারি করতেন এবং যার শরীরে কোন ডিভাইস স্থাপনের প্রয়োজন নেই অনেক সময় তার শরীরেও ডিভাইস স্থাপন করতেন। এ কারণে অনেক রোগিকে অযথা যন্ত্রণা ভোগ করতে হতো। ডা. সাবিত এভাবে কোম্পানিগুলোর কাছে বড় অংকের ভুয়া স্বাস্থ্যবীমা দাবি করতেন। পাশাপাশি তিনি ওষুধ এবং চিকিৎসা সেবায় ব্যবহৃত যন্ত্র প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ঘুষ নিতেন। এফবিআই এর পাওয়া তথ্য মতে, ডা. সাবিত ৩২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ভুয়া বীমা দাবি করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত চারজন রোগির তথ্যের ভিত্তিতে এফবিআই কর্মকর্তারা ডা. সাবিতকে আটক করে। আদালত দোষী সাব্যস্ত হলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কারাগারে তাকে ৯ বছর কাটাতে হতে পারে। বীমা নিষ্পত্তিতে ১.৯ মিলিয়ন ডলার চুরি করলেন আইনজীবী: বীমা দাবি নিষ্পত্তি করতে গিয়ে ১.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরি করেছেন ম্যানহাটানের অ্যাটর্নি স্টিফেন ক্রইটজ। প্রায় অর্ধশত সহজ-সরল মক্কেলের কাছ থেকে তিনি এসব টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বেশিরভাগ মক্কেল বীমা দাবির কোন অর্থ পাননি। যাদের মধ্যে কিছু নি:স্ব ব্যক্তিও ছিল। এমনকি স্টিফেন তার ৯৬ বছর বয়েসী নানীর কাছ থেকেও বীমা দাবির টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ১২ বছরের ফেডারেল কারাবাসের পূর্ব পর্যন্ত স্টিফেন এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। স্টিফেনের হাতে ক্ষতিগ্রস্ত মক্কেলদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন রবার্ট রাফ। ক্যান্সারে জর্জরিত হয়ে রবার্ট মৃত্যুশয্যা শায়িত। এর আগে গাড়ি দুর্ঘটনায় স্টিফেনের নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে গিয়ে তার ব্যবসা-বাণিজ্যও শেষ হয়ে যায়। এসময় রবার্টের এক লাখ ডলারের বীমা দাবি নিষ্পত্তি করেন তার ম্যানহাটান ভিত্তিক আইনজীবী স্টিফেন। কিন্তু রাফ সেই বীমা দাবির একটা কয়েনও নিজের চোখে কখনও দেখতে পারেনি। কারণ, রাফের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তার আইনজীবী তিন বছর ওই অর্থ লুকিয়ে রাখেন। রাফের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে স্টিফেন বীমার সব টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। ভুয়া মৃত্যুতে ৯ মিলিয়ন ডলার বীমা দাবি: জোসে লেন্টিগুয়ার মৃত্যু খুবই মর্মান্তিক। ভেনেজুয়েলায় অবকাশ কাটানোর সময় হৃদরোগে তার মৃত্যু হয়। ফ্লোরিডার জ্যাকসন ভিল্লের আসবাবপত্রের দোকানের মালিক জোসের পরিবার তার মৃত্যুর পর ৭টি জীবন বীমা কোম্পানির কাছ থেকে ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পেয়েছেন। অফিসিয়াল নথিপত্রে আপাতত দৃষ্টিতে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, ভেনেজুয়েলায় জোসের শবদাহ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, জোসে প্রতারণা করার জন্য ভুয়া মৃত্যুর কথা বলেছেন। এর মাধ্যমে তিনি জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়ে পাহাড়ে লুকিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিলাসী জীবন যাপন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার ভাগ্য তাকে দণ্ডিত করেছে। জোসের স্ত্রী দেফনি সিম্পসনও এই চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সিম্পসন একটি মর্মস্পর্শী এবং ভুয়া স্বরণসভা আয়োজন করেন। সেকানে দু’জন ধর্মযাজক বক্তব্য রাখেন। শোকার্ত গান “ইমাজিং গ্রেস” গাওয়া হয়। ‘সিলভার স্টার’ যুদ্ধ পদকপ্রাপ্ত হিসেবে জোসেকে প্রণাম জানাতে সামরিক গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। তবে কিছু জীবন বীমা কোম্পানি দাবি পরিশোধ করলেও জোসের মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ শেষ হয়নি। পরে অবশ্য তদন্ত করে সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়। জোসের শবদাহ নিয়েও সন্দেহ ছিল। কারণ, কেউই জোসের মৃত্যু নিশ্চিত করেনি। এমনকি তার শবদাহের আগে ময়নাতদন্তও করা হয়নি। ভেনেজুয়েলার একজন ডাক্তার ঘুষ নিয়ে একটি জাল মৃত্যু সনদে স্বাক্ষর করে এবং সরকারি আমলাও মিথ্যা শবদাহ নথি জারি করে। তদন্তে প্রতারণার সব তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর আদালত জোসেকে দোষী সাব্যস্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রীয় জেলখানায় তাকে এখন ১০ বছর পর্যন্ত ব্যয় করতে হবে। জোসে লেন্টিগুয়ার স্ত্রী দেফনি সিম্পসনকেও আদালত বীমা প্রতারণার জন্য অভিযুক্ত করে। প্রতারক চক্রের বেড়াজালে অটো ইন্স্যুরেন্স: বিগত বছরজুড়ে হাজার হাজার আহত গাড়ি চালক ও যাত্রীর নামে ভুয়া বীমা দাবির ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে। রাশিয়া ও আমেরিকান একটি চক্র অটো ইন্স্যুরেন্স ঘিরে প্রতারণার জাল ছড়িয়েছে। মিখাইল জেমলায়ানস্কি হচ্ছেন এই চক্রের মূল হোতা। এই চক্রটি প্রকৃত এবং ভুয়া গাড়ি দুর্ঘটনার মাধ্যমে ২৭৯ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বীমা দাবি আদায় করে। ফেডারেল প্রতিনিধিরা মিখাইল চক্রের সব অপরাধকাণ্ড ধরে ফেলে এবং চক্রটিকে ভেঙ্গে দেয়। এই চক্রের ৩৭ জন সদস্য ছিল। এর মধ্যে ১০ জন ডাক্তার এবং ৩ জন আইনজীবী ছিল, যারা এই চক্রের কাজে সহযোগিতা করতো। এদের মধ্যে ডাক্তারা চিকিৎসাসেবার ভুয়া কাগজপত্র প্রদান করতো এবং আইনজীবীরা অটো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোকে দাবি পরিশোধে হয়রানি করতো। ফেডারেল আদালত বিচারের রায় ঘোষণা করলে মিখাইলের ১০০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। অটো ইন্স্যুরেন্স নিয়ে প্রতারণাকারি বিশাল এই চক্রকে ধরার ঘটনাটি ফেডারেল এজেন্ট, নিউ ইয়র্ক পুলিশ, ন্যাশনাল ইনসিওরেন্স ক্রাইম ব্যুরো ও প্রধান বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে দলব্ধতার একটি উজ্জল উদাহরণ। বীমার টাকা আত্মসাতে নিউ ইয়র্ক পুলিশের আইন ভঙ্গ: নিউ ইয়র্ক পুলিশের সদস্য জোসে ইউরেনা। ইস্ট হারলেমের ২৫ নম্বর সেক্টরে কাজ করতেন তিনি। ৯ বছরের কর্মজীবনে বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করেছেন জোসে। তবে আইন সমুন্নত রাখার শপথ রক্ষার পরিবর্তে বারবার আইন ভঙ্গ করেন ইউরেনা। সামর্থ থাকার পরও কখনোই বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ হয়নি জোসের। যদিও তিনি অনেক গাড়ি কিনেছেন অথবা ইজারা নিয়েছেন। তবে তিনি তার বীমা কোম্পানিকে উচ্চ পেমেন্ট দেয়া থেকে পালিয়ে বাঁচতে বারবার প্রতারণা করেছেন। জোসের এই কেলেঙ্কারি শুরু হয় যখন তিনি মার্সিডিজ বেনজ এমএল৩৫০ গাড়ি ইজারা নেন। ইউরেনা তার গাড়ি বীমা কোম্পানিকে জানান, তার গাড়িটি কেউ একজন ভেঙ্গে দিয়েছে। বীমা কোম্পানি তাকে ৯৩০০ ডলার পরিশোধ করে। কিন্তু পরে তদন্ত করে সেটিকে ভুয়া দাবি হিসেবে প্রকাশ করে রাষ্ট্রীয় বীমা প্রতারণা বিভাগ। তারা জানায়, তার গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ ঘটনার আরো আগেই। এছাড়া আরো অনেক প্রতারণার ঘটনা রয়েছে ইউরেনার। ভুয়া স্বাস্থ্যবীমায় ২৮ মিলিয়ন ডলার প্রিমিয়াম চুরি: অর্থনৈতিক মন্দার সময় উদ্বিগ্ন আমেরিকানদের সহজে বীমা সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন উইলিয়াম অর্দি ও তার কর্মীবৃন্দ। তবে অর্দি গ্রাহকদের ভুয়া পলিসির কাগজপত্র সরবরাহ করেন। এভাবে ১৭ হাজার গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করেন অর্দি। এর মাধ্যমে তিনি ২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রিমিয়াম চুরি করেন। ২০০৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে যখন আমেরিকার অর্থনীতি মন্দার কবলে ঠিক তখনই অর্দি এসব ভুয়া স্বাস্থ্যবীমা দিয়ে প্রতারণা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় প্রতারণার ঘটনা। অর্দি প্রায়ই ছোট ছোট বীমা দাবি পরিশোধ করত, যা পলিসি হোল্ডারদের বীমা কাভারেজ প্রকৃত বলে বিশ্বাস করতে সহায়তা করতো। ওকলাহোমা রিয়েল এস্টেট এর প্রতিনিধি বব হারপার তার হৃত্স্পন্দন নিয়মিত রাখার জন্য কৃত্রিম বৈদ্যুতিক যন্ত্র পেসমেকার স্থাপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু মাত্র কয়েক দিন আগে তিনি জানতে পারেন তার স্বাস্থ্যবীমা মূল্যহীন। ওকলাহোমার আরেক বাসিন্দা গ্লেনডা হেই। তার শ্বাসকষ্ট এবং বুকের ব্যাথা ছিল। হাসপাতালে তার শারীরিক পরীক্ষার জন্য ৩২ হাজার মার্কিন ডলার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু অর্দি তা পরিশোধ করতে অস্বীকার করে। হিউস্টনের এক অধিবাসীর সার্জারি করার খুবই জরুরি ছিল বলে জানান তার স্ত্রী। কিন্তু অর্দি এক লাখ ৫ হাজার ডলার বিল পরিশোধ করতে অস্বীকার করেন। ভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সচেতন নিয়ন্ত্রক এবং ফেডারেল প্রসিকিউটর অর্দিকে আটক করে। দোষী সাব্যস্ত হলে অর্দিকে যুক্তরাষ্ট্রীয় জেলখানায় ২০ বছর পর্যন্ত ব্যয় করতে হতে পারে।