ভূমিকম্প: সুযোগ থাকলেও সম্পদ রক্ষা থেকে বঞ্চিত গ্রাহক

Earthquake Insuranceনিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বের সব দেশেই ভূমিকম্প ও প্রাকৃতিক দুর্যাগের আর্থিক ক্ষতি মোকাবেলা করছে বীমা খাত। অথচ বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ভূমিকম্পের ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও ভূমিকম্পের বীমা কভারেজ নিতে আগ্রহী নয় গ্রাহকরা। অন্যদিকে গ্রাহক সচেতনতা বাড়াতেও কোনো উদ্যোগ নেই বীমা কোম্পানিগুলোর। জানা গেছে, কোম্পানিগুলোতে যে পরিমাণ বীমা করা হয়। তার ১ থেকে ২ শতাংশ পলিসিতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি নেয়া থাকে । তাও বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অলরিক্স পলিসিতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি কভার করে। এছাড়া ছোট মাপের বীমা গ্রাহকরা এ বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখায় না। ইন্ডাস্টিয়াল অলরিক্স ও ফায়ার ইন্স্যুরেন্সের আ্ওতায় আলাদা করে প্রিমিয়াম দিয়ে ভূমিকম্পের ঝুঁকি নেয়া হয়। কিন্তু এদেশের  বীমা গ্রাহকরা বাধ্যতামুলক না হলে বীমা করতে চায় না। এছাড়া ভূমিকম্প ঝুঁকির প্রিমিয়াম হার বেশি হওয়াতেও গ্রাহকরা এ ধরণের বীমা করতে চায় না । উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক নেপালের ভূমিকম্পেও ভারতের রাষ্ট্রীয় বীমা কোম্পানি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন ১ হাজার কোটি রুপি দাবির মুখে পড়ে। এছাড়াও ভারতের ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স এবং ওরিয়েন্টাল ইন্স্যুরেন্সসহ অন্যান্য কোম্পানিকেও বীমা দাবি পরিশোধ করতে গুনতে হয় বড় অংকের রুপি। পাশাপাশি লাইফ খাতের সরকারী বীমাকারী লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশেন (এলআইসি) কেও আসতে হয় বীমা দাবি পরিশোধ করতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশে অহরহই ঘটে। রয়েছে ভূমিকম্প আঘাত হানার আশঙ্কাও। নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশকিছু ভবনে ফাটলও দেখা দিয়েছে। ভবিষ্যতে তীব্র মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে বলেও বহির্বিশ্ব থেকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। অথচ তা মোকাবেলায় গ্রাহক সচেতনতা বাড়াতে কোনো উদ্যোগ নেই দেশের বীমা শিল্পের। যদিও বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি বীমা কোম্পানিগুলো নিয়ে থাকে। উন্নত দেশগুলো বীমার দ্বারাই বিপর্যয়ে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতি মোকাবেলা করছে। বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকির বিষয়টি উঠে এসেছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনেও। প্রত্যক্ষ সমীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদন অনুযায়ী, মধুপুরে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকার ২৭ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।এর বেশির ভাগই উত্তর সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত। এতে ৫০ হাজার মানুষ নিহত ও দুই লাখ মানুষ আহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৫৭৩ কোটি ডলার বা ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এ বিষয়ে নিটল ইন্স্যুরেন্সের মূ্খ্য নির্বাহী এস এম মাহবুবুল করিম ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'কে জানান, এক থেকে ২ শতাংশ গ্রাহক ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিয়ে থাকে। বেশিরভাগ গ্রাহকই এ ধরণের ঝুঁকি নিতে চায় না। এছাড়া প্রিমিয়াম হার বেশি হয় বলেও গ্রাহকদের আগ্রহ কম দেখায়। তিনি বলেন, গ্রাহকদের মাঝে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সর মূখ্য নির্বাহী অরুন কুমার সাহা বলেন, খুব কম গ্রাহক এ ধরনের বীমা ঝুঁকি নেয়। তবে তা শতাংশের হারে কত সেটা হিসাব করে বলতে হবে। তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান অনেক বড় পলিসি করে তারা ভূমিকম্পের ঝুঁকি নেয়। কিন্তু ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো এ ভূমিকম্পের ঝুঁকির বীমা করে না বললেই চলে। এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কে এম সাইদুর রহমান ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'কে জানান, এদেশের বীমা গ্রাহকরা বাধ্য না হলে বীমা করে না। গ্রাহকরা চায় যত কম টাকায় পলিসিটি করা যায়। ফলে তারা ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিতে আলাদা করে প্রিমিয়াম দিতে আগ্রহী হয় না। অন্যদিকে গ্রাহককে বুঝিয়ে এ ধরনের পলিসির করা মতো মাঠ কর্মীর অভাব রয়েছে। যে পরিমাণ পলিসি ইস্যু করা হয় তার ১ শতাংশ পলিসিতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি নেয়া থাকে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী আমিনুল ইসলাম বলেন, যে সব বীমা গ্রাহক ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বাড়ি বা ফ্লাট কেনেন তারা ব্যাংকের চাপের কারণে ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিয়ে থাকেন। এছাড়া বড় বড় করপোরেট গ্রাহকরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অল রিকস পলিসির ক্ষেত্রে ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিয়ে থাকে। তবে অধিকাংশ গ্রাহকই তা নেন না। গ্রীণ ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী ফারজানা চৌধুরী ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'কে জানান, পাঁচ-সাত বছর আগে ভূমিকম্পের কভারেজ নিতই না। এখন তবু কিছুটা নিচ্ছে। তবে এর মধ্যে বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোই তা বেশি নিয়ে থাকে। তিনি আরো বলেন, দেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলেই এ কভারেজ নেয়ার একটা প্রবণতা আসে, পরে আবার তা থেমে যায়। এ বিষয়ে গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।