ডেস্ক রিপোর্ট:
জনপ্রিয়তায় ধস ঠেকাতে নতুন শস্য বীমা প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। আগামী বছরের প্রথম দিকে এ প্রকল্পের কাজ শুরুর কথা রয়েছে। সম্প্রতি বিহারে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজেপি মহাজোট পরাজিত হওয়ার পর সামাজিক খাতের ওপর গুরুত্ব বাড়াতে এই কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। গ্রামীণ জনগণের কষ্ট লাঘবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এটি প্রধান পদক্ষেপ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, অসময়ে বৃষ্টি ও টানা দু’বছর খরা দেশটির কৃষি খাতকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যার প্রভাব পড়েছে ভারতের ১শ’ ২৫ কোটি জনগোষ্ঠির দুই-তৃতীয়াংশের ওপর, যারা গ্রামে বসবাস করে। আর এ কারণে মোদির জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ছে। যার কিছুটা আভাস পাওয়া গেছে গত মাসে বিহারে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে।
আবহাওয়ার খেয়ালীপনাসহ নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কিছু কৃষক ঋণের দায় পরিশোধ করতে না পেরে চলতি বছর আত্মহত্যা করেছেন- এমন তথ্য উল্লেখ করে দেশটির কৃষি ও কৃষক কল্যাণমন্ত্রী রাধা মোহন সিং শস্য বীমার দাবি পরিশোধে দীর্ঘসূত্রিতাকে “কৃষি পরিবার ধ্বংস করার সবচেয়ে বড় কারণ” বলে উল্লেখ করেছেন।
কৃষি উৎপাদন মূল্য ও শস্য বীমা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বুধবার দু’টি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন উদ্বোধন শেষে সিং আরো বলেন, আমি সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করি যে, নতুন বছরের শুরুতে আমরা কৃষকদের (একটি নতুন বীমা প্রকল্প) উপহার দেবো।
ওই নতুন বীমাপত্র কৃষকদেরকে খারাপ ঋণ ও খরার ভোগান্তি থেকে বাঁচতে সহযোগিতা করবে এবং যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিপূরণ প্রদান নিশ্চিত করবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী রাধা মোহন সিং। তিনি আরো বলেন, বর্তমান পদ্ধতিতে বীমা দাবি পরিশোধে অনেক বিলম্ব হয়। যার কারণে অনেক কৃষি পরিবার ধ্বংস হচ্ছে।
বীমা প্রকল্পের মতো সামাজিক উদ্যোগগুলোর ওপর গুরুত্ব বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৬ সালের বাজেটে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমন্বয় সাধন করবেন। পক্ষান্তরে ১৯ মাস আগে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে পরিকাঠামো ব্যয়কে সীমায়িত করে আসছে মোদি সরকার।
কৃষকদের পরিশোধিত বীমা প্রিমিয়ামের অংশ বর্তমান হার থেকে আরো ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমাবে মোদি সরকার। ভারতের আনুমানিক ২৬৩ মিলিয়ন কৃষকের প্রায় দশমাংশ শস্য বীমা বেছে নেয়ার এটা মূল কারণ বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা।
ফেডারেল এবং রাজ্য সরকার বাকি প্রিমিয়াম ব্যয় বহন করতে পারে বলে জানান সিং। তিনি আরো বলেন, দাবি পরিশোধ প্রক্রিয়ায় মানুষের হস্তক্ষেপ কমাতে এবং এটাকে আরো সহজ করতে ড্রোন এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোতে বীমা নীতির জন্য ফসলের ক্ষতি মূল্যায়ন করতে উপগ্রহ বা ড্রোন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ভারত এখন পর্যন্ত ভূমি রেকর্ড অফিসের কর্মকর্তাদের দিয়ে গ্রাম ঘুরে ফসলের ক্ষতি পরিদর্শনের মতো আদিম পদ্ধতির ওপর নির্ভর করছে।
এছাড়া ভারতে বীমা পরিশোধের মাত্রা সমৃদ্ধশালী কৃষক, যারা উন্নতমানে বীজ, সার এবং সরঞ্জাম ব্যবহার করে তাদের ক্ষতির পরিমাণের দ্বারা নির্ধারিত হতে থাকে। এর অর্থ হলো আবহাওয়ার খাম-খেয়ালির কারণে গরীব কৃষকরা খুব কম সৃবিধা পায় বরং আরো বেশি অসংরক্ষিত হয়।
ভারতে শস্য বীমা প্রদানকারী প্রধান কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে, এগ্রিকালচার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি অব ইনডিয়া, আইসিআইসিআই লোম্বার্ড, আইএফএফসিও-টোকিও, এইচডিএফসি-ইআরজিও, চোলামানদালাম-এমএস, টাটা-এআইজি, ফিউচার জেনারেলি ইনডিয়া, রিলায়েন্স, বাজাজ আলিয়াঞ্জ, এসবিআই এবং ইউনিভার্সাল সম্পো জেনারেল ইন্স্যুরেন্স।