পেশা হিসেবে জীবন বীমা

আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং সুন্দর জীবন গড়ার আকাঙ্খা প্রতিটি মানুষের মাঝে থাকলেও, সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে অনেক সময় মানুষ ভুল পেশা নির্বাচন করে পরবর্তীতে অনুশোচনা করে। কাজেই, গভীরভাবে ভেবেচিন্তে পেশা নর্বাচন করা উচিত। চাকুরীর সীমাবদ্ধতা বিশেষ করে ভাল বেতনের চাকুরী বর্তমানে সোনার হরিণের মত  দুর্লভ একটি বস্তু। তদুপরি এটা বাস্তব যে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সৎ উপায়ে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা অর্জন চাকুরীর দ্বারা আদৌ সম্ভবপর নয়। একজন চাকুরীজীবিকে সর্বদাই তার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আদেশ তামিল করার জন্য ব্যস্ত থাকতে হয়। তার নিজস্ব কোন ব্যক্তিসত্ত্বা থাকে না। সে এতই পরাধীন যে, অনেক ক্ষেত্রে সে নিজের পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনের অসুস্থতায় বা মৃত্যুতে যখন তখন দেখতে যেতে পারেন না বা ছুটি পান না। গতানুগতিক উপার্জনে তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। স্বাধীনভাবে উপার্জনের কোন সুযোগ নেই। জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ এবং উচ্চাকাঙ্খা বাস্তবায়নের সুযোগ এখানে অত্যন্ত সীমিত। তাই, বর্তমানে উচ্চশিক্ষিত যুবক-যুবতীদের প্রবণতা দাঁড়িয়েছে স্বাধীন ও স্বেচ্ছামূলক পেশায় ,বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে এবং ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করা। <br />কিন্তু ব্যবসায় জড়ানোর সমস্যা হল প্রচুর অর্থ  ও মূলধনের যোগান দেয়া যা অনেকের পক্ষে সম্ভবপর নাও হতে পারে। উপরন্তু, বিভিন্ন উপায়ে মূলধন সংগ্রহ করা গেলেও  বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাবে এবং পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে মূলধন খোয়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে এবং ব্যবসা করতে গিয়ে অনেককে সর্বস্বান্ত হতেও দেখা গেছে। স্বাধীন পেশায় জড়িত হলেও বিভিন্ন  প্রকার ট্যাক্স ও চাঁদাবাজীর দৌরাত্মে ব্যবসায়ী সমাজ অতিষ্ঠ। হরতাল ধর্মঘট, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সুষ্ঠভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন। অথচ ব্যাংক বা অন্য কোন অর্থকারী প্রতিষ্ঠান থেকে আপনি যে মূলধন সংগ্রহ করেছেন তার কিস্তি বা সুদ আপনাকে পরিশোধ করতেই হবে। কাজেই ব্যবসার প্রতি যুবকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। চিকিৎসা বৃত্তি একটি স্বাধীন পেশা হলেও বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে একজন চিকিৎসক এতই ব্যস্ত থাকেন যে, তিনি তাঁর নিজের কাছে স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন, পরিবারের জন্য কোন সময়ই দিতে পারেন না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ভুল চিকিৎসার কারণে অনেক রোগীকে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। এছাড়া সব থেকে বড় কথা একজন চিকিৎসকের মক্কেল হল রোগী, সমাজের রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়েই তাকে সময় কাটাতে হয়। আইন পেশা একটি স্বাধীন পেশা হলেও সত্যিকার অর্থে একজন উকিলকে সর্বদায়ই সত্যকে মিথ্যা ও মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। এছাড়া একজন আইনজীবির মক্কেল হল সাধারণতঃ সমাজের দুস্কৃতিকারী, চোর, ডাকাত, সন্ত্রাসীরা। একজন উকিলকে এসব ব্যক্তিদের নিয়েই কাজ করতে হয়। দেশে আইন শৃঙখলার অবনতি হলে তার আয় বাড়ে।