জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় গুরুত্ব বাড়ছে বীমা শিল্পের

april-19-droughtডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে শিল্পায়নের ফলে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে অতিমাত্রায়। ফলশ্রুতিতে জলবায়ুতে দেখা দিয়েছে বিপজ্জনক পরিবর্তন। আর এ কারণে ঝুঁকির মুখে পড়েছে বিশ্বের প্রায় সব অনুন্নত এবং উন্নত দেশ। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ঝুঁকিপ্রবণ দেশগুলো রক্ষায় পুরো বিশ্ব এখন একাট্টা। ক্ষতি থেকে বাঁচতে তারা কৌশল হিসেবে বেছে নিচ্ছে বীমা শিল্পকে। সম্প্রতি প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ ও এর জনগণকে রক্ষার জন্য বীমা শিল্পের ভূমিকা বাড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, বিশ্বকে আরো জলবায়ু নিরাপদ করতে বীমা, পুনর্বীমাকরণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সহযোগিতা করবে। আবহাওয়া এবং জলবায়ু সম্পর্কিত বিপর্যয়ের ক্ষতি বিশ্বের অনেক অঞ্চলকে ভাবিয়ে তুলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটা বাড়তে থাকলে অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাবে এবং আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে। এ কারণে ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে বীমা, পুনর্বীমা এবং ঝুঁকি সক্ষমতাকে কাজে লাগানো ক্রমেই জরুরি হয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্বনেতারা। প্যারিসে অনুষ্ঠিত পক্ষকালব্যাপী ‘কপ২১ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন’র উদ্দেশ্য ছিল কার্বন নির্গমন কমানো এবং উষ্ণতা ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো। বিশ্বের প্রায় ১৯৫টি দেশের সরকার প্রধান ও প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেয়। সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন এবং সংশ্লিষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়ের উপর আলোচনায় বীমা ও পুনর্বীমাকরণের বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে। সম্প্রতি লয়েডস অব লন্ডন পরবর্তী দশক জুড়ে জলবায়ু বিপর্যয়ের একটি আনুমানিক হিসাব দিয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, বীমার উদীয়মান বাজারে বীমার কভারেজ ও জলবায়ু বিপর্যরে ঝুঁকির ব্যবধানটি বিশাল। বীমার আওতার বাইরে জলবায়ু-সম্পর্কিত বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে প্রায় ৪.৫৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের সম্পদ। লয়েডস অব লন্ডন আরো জানিয়েছে, বিশ্বের মোট প্রিমিয়ামের মাত্র ১৬ শতাংশ আসছে এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার উদীয়মান বাজার থেকে।  অথচ বিশ্ব জিডিপিতে এই উদীয়মান বীমা বাজারের অবদান ৪০ শতাংশ।  এ অবস্থায় তাদের পরামর্শ হচ্ছে, এই অঞ্চলগুলোতে বীমার আওতা ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে। ওই সম্মেলনে অংশ নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন একটি উদ্যোগের কথা জানান। যা বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করবে। উদ্দেশ্য হলো, জলবায়ু ঝুঁকি কমাতে বিপদপূর্ব ব্যবস্থা গ্রহণ, ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা অর্জন এবং উন্নয়নের উদ্যোগুলোকে পুনর্গঠন করতে এসব দেশের ক্ষমতা আরো জোরদার করা। আর এই উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো বীমা এবং সামাজিক নিরাপত্তা ঝুঁকি গ্রহণ। জাতিসংঘ মহাসচিব তার উদ্যোগটিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, জলবায়ু স্থিতিস্থাপক উদ্যোগটি আফ্রিকা রিস্ক ক্যাপাসিটি (এআরসি), রিস্ক পুলিং এনিশিয়েটিভ’র মতো বর্তমান অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে। যার উদ্দেশ্য হলো এই অঞ্চলে বীমার ক্ষেত্র বিস্তার এবং খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা। বান কি মুনের এই উদ্যোগ আফ্রিকা রিস্ক ক্যাপাসিটি বা এআরসি’র অগ্রগতিতে সহযোগিতা করবে এবং আফ্রিকান দেশগুলোতে এর প্রভাব বৃদ্ধি করবে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে একটি জলবায়ু চুক্তি কার্যকর করা হবে। এর মধ্যে দিয়ে ৩০টিরও বেশি দেশ খরা, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের বিপরীতে ২ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ঝুঁকি গ্রহণের সহায়তা পাবে। এতে পরোক্ষভাবে বীমা সুবিধা পাবে ১৫০ মিলিয়ন আফ্রিকান নাগরিক।  পরবর্তী ১০ বছর ধরে ১০টি দেশে আরো ৫ লাখ কৃষককে এই কর্মসূচির আওতায় আনতে এআরসি’র লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হবে। বানকি মুন বলেন, পুনর্বীমা কোম্পানি সুইস রি’র সহযোগিতায় ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম ও অক্সফাম আমেরিকা এরইমধ্যে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস করার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে ৩১ হাজার গ্রামীণ পরিবারকে সাহায্য করেছে। এর মধ্যে মাইক্রোইন্স্যুরেন্স বা ক্ষুদ্রবীমাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। জাতিসংঘ ও বীমা শিল্পের মধ্যে বৃহত্তম সহযোগিতা হিসেবে পরিচিত ইউএনইপি’র প্রিন্সিপল ফর সাসটেইনেবল ইন্স্যুরেন্স (পিএসআই) বা টেকসই বীমা জন্য মূলনীতি’র প্রায় ১০০টি সংগঠনের আন্তর্জাতিক সদস্যপদ আছে। যেখানে বিশ্বের প্রিমিয়ামের ২০ শতাংশ এবং ১৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পদের প্রতিনিধিত্ব করছে বীমাকারকরা। জলবায়ু ও স্থায়িত্বের ঝুঁকি মোকাবেলায় বীমা নিয়ন্ত্রকদের দ্বারা আনুপাতিক হারে নীতি অগ্রগতির জন্য পিএসআই একটি টেকসই বীমা নীতি ফোরাম গঠন করবে বলেও জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। এদিকে প্যারিসের ওই জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জলবায়ু বিপর্যয়ের ক্ষতি থেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণদের রক্ষা করতে বীমা, পুনর্বীমা এবং ঝুঁকি সক্ষমতাকে কাজে লাগানো ক্রমেই জরুরি হয়ে পড়ছে বলে আভাস দিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উদ্ভূত অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ঝুঁকি এখন সামাল দিতে হবে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে মানুষ প্রয়োজনীয় কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। ওবামা সতর্ক করে বলেছেন, তাপমাত্রা কমানো না গেলে অদূর ভবিষ্যতে ভয়াবহ বিপদ হতে পারে। উল্লেখ্য, বিশ্বের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ৩০ শতাংশ আসে চীন থেকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ১৬ শতাংশ৷ এছাড়াও কার্বন নি:সরণকারি শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় ভারতের নামও রয়েছে।