বীমা প্রতারণা বাড়ছে কেনিয়ায়

পূর্ব আফ্র্রিকার দেশ কেনিয়ায় ক্রমেই বাড়ছে বীমা প্রতারণার ঘটনা। প্রতারণাপূর্ণ বীমা দাবি পরিশোধ করে গত এগার মাসে দেশটির বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকশান হয়েছে ৩২৪.৭ মিলিয়ন কেনিয়ান শিলিং। এর আগে ২০১৪ সালে এই লোকশানের পরিমাণ ছিল ১০২.৭ মিলিয়ন শিলিং। সেই হিসাবে গত বছরের তুলনায় এবার বীমা প্রতারণার ঘটনা বেড়েছে ২১৫ শতাংশ। ইন্স্যুরেন্স ফ্রড ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের (আইএফআইইউ) সর্বশেষ তথ্য মতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত বীমা সম্পর্কিত ৯৩টি প্রতারণার মামলা নথিভুক্ত করেছে আইএফআইইউ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ মামলা এসেছে বীমা প্রতিনিধিদের থেকে। যার পরিমাণ ছিল ২১টি। প্রতারণাপূর্ণ মটর দুর্ঘটনা দাবির নথিভুক্ত ১৭টি মামলা অনুসরণ করা হয়েছে, যাতে প্রায় ৫০ মিলিয়ন কেনিয়ান শিলিং ক্ষতি হয়েছে। বীমা কর্মীদের দ্বারা চুরিকৃত ভুয়া মেডিকেল দাবির ঘটনাও অনেক বেশি অনুসরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতারণা তদন্ত বিভাগ। আর ৩ বছর আগে আইএফআইইউ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৯২টি বীমা প্রতারণার মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। পুলিশের সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট ও ইন্স্যুরেন্স ফ্রড ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের হেড ব্রিজেট ক্যানেই জানান, সম্প্রতি ১১ সন্দেহভাজনকে বিচারের জন্য আদালতে হাজির করা হয়েছিল। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু জাল স্ট্যাম্প পাওয়া যায়। এর মধ্যে হাসপাতালের স্ট্যাম্প, পুলিশ এবং এমনকি হাইকোর্টের স্ট্যাম্পও ছিল। প্রতারক চক্রুটি ভুয়া দুর্ঘটনার বীমা দাবি পেতে এবং পুনর্বিক্রয়ের জন্য ওষুধ সংগ্রহ করতে তারা জাল পুলিশি নথি, প্রস্তুতকৃত মেডিকেল রেকর্ড ব্যবহার করতো। উদ্ধারকৃত এসব স্ট্যাম্প একটি রুমের মধ্যে পাওয়া যায় বলে জানান ক্যানেই। পুলিশের এই সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট আরো বলেন, আটকদের মধ্যে একজন ছিল পরিকল্পনাকারী, যার কাজ ওষুধ বিক্রি করা। আগা খান হাসপাতালের মতো হাসপাতালগুলো থেকে ভুয়া মেডিকেল কার্ড ও মেডিকেল রিপোর্ট তৈরি করতে সে সব ধরণের কাজ করতো এবং ফার্মেসি থেকে ওষুধ পেতে ভুয়া কার্ডে এই ব্যক্তির বিস্তারিত ব্যবহার করতো। বীমা প্রতারণার ঘটনা বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইন্স্যুরেন্স রেগুলেটরি অথরিটি (আইআরএ) এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যামি ম্যাকোভ কিছু চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন। এর মধ্যে রয়েছে, প্রতারণা সনাক্তকরণ, প্রতারণা সম্পর্কিত তথ্যের আদান-প্রদান, বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদানের ঘাটতি এবং জনসচেতনতার অভার। এছাড়াও তদন্ত করতে কোম্পানির ভীত অবস্থায় এবং তথ্য বিশ্লেষণের অপর্যাপ্ত ব্যবহার এর জন্য দায়ী। খুব শিগগিরই বীমা কোম্পানিগুলো ব্যাংকের মতো ক্রেডিট রেফারেন্স ব্যুরো’র অধীনে চলে আসেব বলেও জানান আইআরএ’র প্রধান নির্বাহী স্যামি ম্যাকোভ। উল্লেখ্য, বিচিত্র সংস্কৃতির দেশ কেনিয়া মালভূমি ও উঁচু পর্বতে পূর্ণ। এখানে বহু জাতির লোকের বাস। কেনিয়ার অর্থনীতি বাজারকেন্দ্রিক। তবে সেখানে সরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি স্বাধীন বিনিয়োগ ব্যবস্থাও বিদ্যমান। এই দেশটি মূলত পূর্ব এবং মধ্য আফ্রিকার বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং পরিবহনের জংশন হিসেবে কাজ করে থাকে।