আবদুর রহমান: বীমামুখী হয়ে পড়ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি। আগামী নির্বাচনে কে বিজয়ী হবে তা নির্ভর করছে স্বাস্থ্যবীমার সর্বোচ্চ সুবিধা প্রদানের ওপর। অর্থাৎ মার্কিন নাগরিকদের স্বাস্থ্যবীমার সর্বোচ্চ সুবিধা দেয়ার ওপরই নির্ভর করছে নির্বাচনের ফলাফল। একারণে দেশের সর্বস্তরের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বীমা শিল্পকে কোন প্রার্থী কিভাবে কাজে লাগাবেন সেটাই এখন ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা নীতি ও পদ্ধতিতে বীমা শিল্পের ব্যবহারের চমক দেখিয়ে আমেরিকানদের মন জয় করেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা । এরপরই মার্কিন রাজনীতিতে বীমা শিল্পের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ওবামার গৃহীত স্বাস্থ্য বীমার এ নীতি পরিচিতি লাভ করে ‘ওবামাকেয়ার’ নামে । ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ওবামা তার নির্বাচনী ইশতেহারে স্বাস্থ্যসেবাকে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে এনে দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন।
এদিকে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায়ও সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে এই বীমা শিল্প। বর্তমানে ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে বীমা। ক্রমবর্ধমান ওষুধের দাম কমিয়ে স্বাস্থ্যসেবা সবার নাগালে পৌঁছে দিতে বীমা শিল্পের সহযোগিতা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। বলেছেন, আমাদের স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতিতে কিছু ভুল রয়েছে, যেটা সমাধান করা প্রয়োজন।
সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন একটি ভিডিও প্রচারণায় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন প্রেসক্রিপশন ড্রাগ বা ব্যবস্থাপত্রের ওষুধের ক্রমবর্ধমান মূল্যের নাগাল টেনে ধরার প্রস্তাব করেছেন। আর এ জন্য তিনি স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানিগুলোর সহযোগিতা নেয়ার কথা জানিয়েছেন।
নিউ হ্যাম্পশায়ার ও আইওয়াতে সম্প্রচারিত তিরিশ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে হিলারি ক্লিনটন আমেরিকানদের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন ও ওষুধের দাম কমাতে তার চেষ্টার ইতিহাস তুলে ধরেছেন। একইসঙ্গে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তার পরবর্তী সংগ্রামগুলোর মধ্যে অন্যতম হবে- বীমা কোম্পানিগুলোকে নিয়ে ওষুধের দাম কমানো।
নির্বাচনী বিতর্কের সময় অন্যান্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের সঙ্গে ক্লিনটনও তার দৃষ্টিকে ওষুধ প্রস্তুতকারিদের দিকে অনেকাংশে নিবন্ধিত করেন। বলেন, ভোক্তাদের জন্য ওষুধের দাম আরো কমানো প্রয়োজন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ ক্লিনটন এবং অন্যান্য ডেমোক্রেটসদের বীমা কোম্পানিগুলোর স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতির সমস্যায় পড়ার দীর্ঘ রেকর্ড রয়েছে।
ক্লিনটনের ‘ওষুধের খরচ প্রস্তাবনা’য় বিধান করা আছে যেগুলোর উদ্দেশ্য ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো। মূল্য কমানোর জন্য তাদের সঙ্গে দরাদরি করতে মেডিকেয়ারের অনুমতিও রয়েছে ওই প্রস্তাবনায়। এছাড়াও একটি সুরক্ষার আহবান জানিয়েছেন হিলারি, যেটি বীমা কোম্পানিগুলোর দ্বারা প্রস্তাব করা হবে।
সম্প্রতি টুরিং ফার্মাসিউটিক্যালস নামে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ ওষুধ প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান তাদের একটি এন্টি-প্যারাসিটিক ওষুধের দাম ১৩.৫০ ডলার থেকে ৭৫০ ডলার (বড়ি প্রতি) নির্ধারণ করেছে। ওই ওষুধটি এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ব্যবহৃত হয়। এ ঘটনার পর আমেরিকানদের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। আর এই মূল্য বৃদ্ধি কমাতে এবং দেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রার্থীরা বীমা কোম্পানিগুলোর দ্বারস্থ্য হচ্ছে।
হিলারি ও তার সহকর্মী ডেমোক্রেটস প্রতিযোগী বার্নি স্যান্ডার্স উভয় প্রেসক্রিপশন ওষুধের দামের রাশ টেনে ধরার আহবান জানিয়েছেন। ক্লিনটন তার নির্বাচনী প্রচারণার ওয়েবসাইটে ওষুধের দাম কমানোর আহবান জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০১৩ সালে প্রেসক্রিপশন ড্রাগের খরচ বেড়েছে ২.৫ শতাংশ। আর ২০১৪ সালে এসে সেটা বৃদ্ধি পেয়েছে ১২.৬ শতাংশ।
উল্লেখ্য, ‘ওবামাকেয়ার’ এর সরকারি নাম হলো- প্যাশেন্ট প্রোটেকশন অ্যান্ড অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার এক্ট (পিপিএসিএ), বা সংক্ষেপে অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার এক্ট (এসিএ)। স্বাস্থ্যসেবা শিল্প পুনর্গঠন করতে ২০১০ সালের ২৩ মার্চ প্রেসিডেন্ট ওবামার দ্বারা অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার এক্ট বা এসিএ আইনে পরিণত হয়। আর ২০১২ সালের ২৮ জুন সুপ্রীমকোট এটিকে স্বীকৃতি দেয়।
ওবামাকেয়ারের উদ্দেশ্য হলো- সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত স্বাস্থ্যবীমায় আমেরিকানদের আরো প্রবেশাধিকার দেয়া এবং দেশের স্বাস্থ্যসেবার ক্রমবর্ধমান খরচ কমানো। ভোক্তা সুরক্ষা, প্রবিধান, ভর্তুকি, কর, বীমা এক্সচেঞ্জ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য বীমার ক্রয়ক্ষমতা, মান এবং প্রাপ্যতা সম্প্রসারিত করে এই কেয়ার এক্ট।