দুঃসময়ের আবর্তে অস্ট্রেলিয়ার বেসরকারি স্বাস্থ্য বীমা

Australiaদেশের দুর্বল অর্থনীতির কারণে চরম দুঃসময় পার করছে অস্ট্রেলিয়ার বেসরকারি স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানিগুলো। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত ১২ মাসে দেশটির বেসরকারি স্বাস্থ্য বীমা পলিসি হোল্ডারদের অগ্রগতি কমে গেছে ২.৩ শতাংশ। ২০০৭ সালের মার্চ থেকে যা সর্বনিম্ন। যদিও এ সময়ে এক লাখ ৪৫ হাজার নতুন পলিসি হয়েছে বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান প্রুডেনশিয়াল রেগুলেশন অথোরিটি (এপিআরএ)। ক্রেডিট স্যুইস বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু অ্যাডামস বলেন, প্রবৃদ্ধি পরিসংখ্যান কমে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার দুর্বল অর্থনীতি, নিম্ন মজুরি বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক সম্পৃক্তি অবস্থায় পৌঁছানো কোন শিল্পের প্রতিফলন বলে আমরা বিশ্বাস করি। তথ্যের ভিত্তিতে স্পষ্ট প্রমাণ আছে যে, সক্ষমতার সমস্যা, অবনতিশীল মূল্য প্রস্তাব এবং কমিউনিটি রেটিং সিস্টেমের অনমনীয়তার কারণে বীমা শিল্পগুলো মাঝারি থেকে দীর্ঘমেয়াদী কাঠামোগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে বলেও জানান অ্যাডামস। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের জন্য এপিআরএ প্রকাশিত ওই শিল্প পরিসংখ্যানে দেখানো হয়, পেনেট্রেশন রেট অর্থাৎ নির্দিষ্ট বাজার বা এলাকায় কোম্পানির পণ্য বিক্রয় হার প্রতি বছর এক বেসিস পয়েন্ট কমে ৪৭.৩৪ শতাংশ হয়েছে। যেটা ছিল প্রতি প্রান্তিকে পাঁচ বেসিস পয়েন্ট কম। ২০০৫ সালের ডিসেম্বর থেকে পেনেট্রেশন রেটে সেটা ছিল প্রথম বার্ষিক হ্রাস। এপিআরএ’র তথ্যে আরো দেখা যায়, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত ১২ মাসে পলিসি হোল্ডার বৃদ্ধির ৫০ শতাংশই এসেছে ৬০ থেকে ৭৯ বছর বয়সীদের মধ্য থেকে। আর ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের বেসরকারি স্বাস্থ্য বীমা কাভারেজের সংখ্যা ১ শতাংশ কমেছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কমিউনিটি রেটিং পদ্ধতি অনুসারে, ছোট ব্যবহারকারীরা সাধারণত বড় ব্যবহারকারীদের ভর্তুকি দেয়। কিন্তু এই ধারা যদি পলিসি হোল্ডার বৃদ্ধিতে অব্যাহত থাকে তাহলে এটা মূল্য বৃদ্ধির প্রয়োজন বাড়াতে পারে। এছাড়াও এ বিষয়টি ছোট বীমাকারকদের জন্য বেসরকারি স্বাস্থ্য বীমার মূল্যবান প্রস্তাব ধীরে ধীরে ক্ষয় করবে এবং ক্ষতিকর পণ্য কমাতে ও মূল্য বৃদ্ধি চক্রের প্রধান কারণ হতে পারে, বলেন ক্রেডিট স্যুইস বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু অ্যাডামস। সর্বশেষ হিসাবে দেখা যায়, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ হারে। যা গত ২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। খনিজ উৎপাদন কমে যাওয়ায় নির্মাণ খাতে শ্লথ গতি অর্থনীতিকে দুর্বল করেছে। সেই সাথে রফতানি আয়ও কমে গেছে দেশটির। জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি চীনের চাহিদার সুবাদে ২০০১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার পণ্য রফতানি বৃদ্ধি পায়। এসময় খনি খাতে বিনিয়োগ বেড়ে যায় এবং সার্বিক বেকারত্বও কমে আসে। শুধু তাই নয় ২০০২ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় মাথাপিছু জাতীয় আয় ২২৪ শতাংশ বেড়ে ৬৫ হাজার ৪১০ ডলারে দাঁড়ায়। এছাড়াও শিথিল কর ব্যবস্থা ও সরকারের নানা ভাতা ও পেনশনের সুবাদে সাধারণ মানুষ প্রচুর ব্যয় করার সুযোগ পায়। আরো ব্যয়ের জন্য তারা ঋণ করা শুরু করলে ১৯৯১ সালের মন্দার তুলনায় দেশটির ঋণ ৩ গুণ বেড়ে যায়। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বহির্বিশ্বের পাওনা ১ ট্রিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করে জানিয়ে দিয়েছে উন্নত দেশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ঋণের পাল্লাই সবচেয়ে ভারী।