ব্যাপকভাবে ধসের মুখে পড়েছে বিশ্বের প্রভাবশালী ও সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় বীমা কোম্পানি জুরিখ ইন্স্যুরেন্স গ্রুপ এজি। চীনের বন্দরনগরী তিয়ানজিনে বিস্ফোরণের ঘটনা ও উত্তর আমেরিকার অটো ও নির্মাণ দায় কাভার করতে মোটা অংকের অর্থ রিজার্ভে রাখতে গিয়ে এমন অবস্থায় পড়ে কোম্পানিটি। এছাড়াও স্টক্স ইউরোপ জুরিখ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের মূল্য কমেছে ১৫ শতাংশ। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে এসে ৭৯ শতাংশ মুনাফা কমেছে। আগের বছরেও কোম্পানিটির নেট ইনকাম ৯৬৬ মিলিয়ন ডলার থেকে ২০৭ মিলিয়নে নেমে আসে।
এদিকে ধস ঠেকাতে কোম্পানি পরিচালনায় ব্যয় সংকোচন নীতি অবলম্বনের পরিকল্পনা করছে ১৮৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত জুরিখ ইন্স্যুরেন্স। এরইমধ্যে কোম্পানিটির ৪৪০ জন কর্মীকে ছাঁটাই করার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাজ্য সাধারণ বীমা শাখা থেকে আগামী মার্চের শেষ নাগাদ এসব কর্মী ছাঁটাই করা হবে। এছাড়াও কোম্পানিটি তার সাংগঠনিক কাঠামোয় সংস্কার আনতে চাচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
জুরিখ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি জানিয়েছে, গত ১২ আগস্ট চীনের উত্তরাঞ্চলের বন্দরনগরী তিয়ানজিনে বিস্ফোরণের ঘটনায় ২৭৭ মিলিয়ন ডলার ক্ষতির মুখে পড়েছে কোম্পানি। একইসঙ্গে উত্তর আমেরিকার অটো ও নির্মাণ দায় কাভার করতে ৩৬৭ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ রিজার্ভের জন্য সরিয়ে রাখায় চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে এসে মুনাফা কমে গেছে ৭৯ শতাংশ। গত মে মাসে কোম্পানিটি জানিয়েছে, ২০১৮ সালের মধ্যে কোম্পানির খরচ এক বিলিয়ন ডলার কমিয়ে আনতে চায়।
চীন বিস্ফোরণে সাধারণ বীমা ব্যবসায় অনুমিত ক্ষতির পর বৃটিশ বীমা কোম্পানি আরএসএ ইন্স্যুরেন্স গ্রুপ পিএলসি’র জন্য প্রস্তাবিত নিলাম পরিত্যাগ করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অটো দায় এর জন্য রিজার্ভ বৃদ্ধি করে। এছাড়াও কোম্পানিটি নন-লাইফ শাখাকে গ্রোবাল লাইফের নবনিযুক্ত প্রধান ক্রিস্টোফের নিদের্শনায় রেখে দেয় এবং জানানো হয়, এর লাভজনকতার একটি পর্যালোচনা করা হবে।
গত ৫ নভেম্বর জুরিখ ইন্স্যুরেন্স জানায়, প্রাক্কলিত ৩ বিলিয়ন বাড়তি মূলধন নিয়ে কি পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে সে বিষয়ে আরো তথ্য আগামী ফেব্রুয়ারিতে জানানো হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, তারা আশা করছেন আরএসএর ‘নিলাম’ থেকে সরে আসার পর কোম্পানি টাকাটা পরিশোধ করে দেবে।
জুরিখ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ও গ্রোবাল লাইফে নবনিযুক্ত প্রধান ক্রিস্টোফ তেরিন ব্যবস্থাপনা টিমকে পুনর্গঠন করছেন এবং উত্তর আমেরিকায় কিছু ব্যবসায়িক লাইন থেকে বের হয়ে আসছেন। পাশাপাশি ওই শাখার জন্য পুন:বীমা কাভারেজ আরো বাড়ানোর কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে এবং কিছু পোর্টফোলিও সরিয়ে নেয়া হতে পারে।
অন্যদিকে কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্টিন সেন বলেছেন, ব্যয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডকে গতিময় করে তুলতে গ্লোবাল করপোরেট ও সাধারণ বীমা কেন্দ্রের জনবল হ্রাসের পরিকল্পনার কথা এরইমধ্যে আমাদের কর্মীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি ২০১৬ সালের মধ্যে মুনাফা অর্জনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি দেখতে পাবো।
উল্লেখ্য, চীনের উত্তরাঞ্চলের বন্দরনগরী তিয়ানজিনের একটি বাণিজ্যিক এলাকায় গত ১২ আগস্ট দু’দফা ভয়াবহ বিস্ফোরণে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বিস্ফোরণস্থলের আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা। পৃথিবীর দশম বৃহত্তম এই বন্দরে নোঙর করা বেশ কয়েকটি জাহাজের অনেক কনটেইনার দেশলাইয়ের কাঠির মতো দপ করে জ্বলে ওঠে। প্রায় ১০ হাজার নতুন গাড়ি পুড়ে যায়। পোড়া কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বন্দরের অনেক ভবন।