বাতিল হয়ে গেলো স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের লাইসেন্স

দু’দফা স্থগিতের পর এবার চূড়ান্তভাবে বাতিল হয়ে গেলো স্ট্যান্ডার্ড ইনস্যুরেন্স কোম্পানির লাইসেন্স। ফলে আর কোন বীমা ব্যবসা করতে পারবে না কোম্পানিটি। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে গত সোমবার এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোন বীমা কোম্পানির ব্যবসা পরিচালনার লাইসেন্স হারানোর ঘটনা দেশের বীমা খাতের ইতিহাসে এটাই প্রথম। তবে, ইন্স্যুরেন্স কাভারেজের সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোম্পানিটি তাদের গ্রাহকদের সেবাদান অব্যাহত রাখতে পারবে। নন-লাইফ পণ্যের সময়-সীমা সাধারণত এক বছর। আইডিআরএ’র ৮৬তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামীকাল বৃহস্পতিবার স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সকে তাদের লাইসেন্স বাতিলের চিঠি পাঠানোর কথা রয়েছে। আইডিআরএ'র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় এর চার সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সন্তোষজনকভাবে পুনঃবীমা সম্পাদনে ব্যর্থ হওয়ায় গত ২১ জুন থেকে স্ট্যান্ডার্ড ইন্সুরেন্সের লাইসেন্স ৩ মাসের জন্য স্থগিত করে আইডিআরএ। একই সঙ্গে লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না ৩০ দিনের মধ্যে তার কারণ দর্শাতে বলা হয়। পাশাপাশি লাইসেন্স স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত কোন নতুন বীমা কাভারনোট, বীমা সার্টিফিকেট বা বীমা পলিসি জারি (ইস্যু) না করার নির্দেশ দেয়া হয়। তবে ২১ জুনের আগে জারিকৃত বীমা পলিসির কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সুযোগ রাখা হয়। পরে আরো দুমাস লাইসেন্স স্থগিতের সময় বাড়ানো হয়। এর আগে গত ৩১ মে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স আইডিআরএকে দেয়া এক চিঠিতে স্বীকার করে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ’র কিছু বীমা পলিসির ক্ষেত্রে মোট ৪৬ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকার ঝুঁকি পুনঃবিমা করা হয়নি। এরই প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ। বীমা কোম্পানির লাইসেন্স প্রদানের অন্যতম শর্ত হিসেবে ২০১০ সালের বীমা আইনের ৯ ধারায় পুনঃবীমা সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আইনের ১০ ধারায় সন্তোষজনকভাবে পুনঃবীমা সংক্রান্ত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানির নিবন্ধন সনদ বাতিল বা স্থগিত রাখার বিধান করা হয়েছে। লাইসেন্স স্থগিতের পর স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের পক্ষ থেকে দেয়া ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হওয়ায় বীমা আইন- ২০১০ এর ১০ (৫) ধারা অনুসারে কোম্পানিটির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা আরো বলছেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, কোম্পানিটি আমাদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। এদিকে, লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্তের ফলে বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারিরা, যারা স্ট্যান্ডার্ড ইনস্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার কিনেছেন। লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্তের খবরের পরই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ২ শতাংশ কমে যায়। কোম্পানিটির ২৯.৫৭ মিলিয়ন শেয়ার রয়েছে, যেগুলোর ফেসভেলু ১০ টাকা। স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স পুণঃবীমা সংক্রান্ত অনিয়মনটি করে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের পলিসিতে। ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর কোনাবাড়িতে গ্রুপটির বহুতল একটি ভবন আগুনে পুড়ে যায়। এরপর এই অগ্নিকান্ডের বীমা দাবির টাকা তুলতে অনিয়মের আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ উঠে গ্রুপটির বিরুদ্ধে। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে আইডিআরএ। ওই তদন্ত দলের প্রতিবেদনে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বীমা করপোরেশন ও ক্ষয়ক্ষতি জরিপকারী প্রতিষ্ঠাগুলোর পারস্পরিক যোগসাজশের চিত্র উঠে আসে।