বাংলাদেশের বীমা শিল্পকে আরো শক্তিশালী করতে এবং এ খাতের উন্নয়নে অর্থায়নের পরিকল্পনা করছে বিশ্বব্যাংক। বীমা শিল্প দেশের আর্থিক খাতগুলোর মধ্যে প্রধান একটি খাত হওয়া সত্বেও এখন পর্যন্ত এর সম্ভাব্য অগ্রগতি লাভ হয়নি। আর এ কারণেই বিশ্বব্যাংক নতুন এই পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
দেশের আর্থিক খাতগুলোর উন্নয়নে গত জুন মাসে বিশ্বব্যাংক ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ প্রায় ২ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮০ টাকা ধরে) অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ প্রায় ৬শ’ ৪০ কোটি টাকা বাংলাদেশের বীমা খাতের উন্নয়নে অর্থায়ন করার পরিকল্পনা করছে। এসব টাকা ৩০ বছরব্যাপী দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকের একটি টেকনিক্যাল টিম বাংলাদেশে পৌঁছেছে। তারা সরকারি কর্তৃপক্ষ ও বীমা-নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করছে। এরকম একটি বৈঠক চলতি মাসের ৪ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর গত ৮ নভেম্বর আইডিআরএ’র সঙ্গে বৈঠক করেছে। এছাড়াও আগামীতে আরো বৈঠক করবে বিশ্বব্যাংকের ওই টেকনিক্যাল টিম।
বিশ্বব্যাংক এবং অংশীদাররা কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতে অর্থায়ন করতে আগ্রহী। এ জন্য যে বিষয়গুলোকে তারা বিশেষ প্রাধান্য দিচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমিকে শক্তিশালীকরণ, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এর তথ্য প্রযু্ক্তি (আইটি) খাতকে শক্তিশালী করা, সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশনকে শক্তিশালী করা এবং বেসরকারি খাতে পেনশন স্কিম চালু করা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পেনশন স্কিম চালু থাকলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে তার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নেই। এর ফলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা পেনশন স্কিম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ জন্যই বীমা খাতের উন্নয়নে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পেনশন স্কিম চালু করতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত সূত্রগুলো গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, ব্রিটন উডস ইনসটিটিউশন তিরিশ বছর মেয়াদী ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল দিতে চায়। বিশ্বব্যাংকের তহবিল দেশের বীমা খাতকে জোরদার করতে নির্দেশ করে। এ খাতের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দীর্ঘমেয়াদী তহবিল প্রদান করা হয় বলেও কর্মকর্তারা জানান ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি সরকার পরিচালিত একটি বীমা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রয়োজনীয় অর্থ এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত রয়েছে। আধুনিক মানসম্মত বীমা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইআরডিএ) গত কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিকে আইডিআরএ’র কাছে হস্তান্তর করেনি।
বাংলাদেশের বীমা খাত মূলত ইন্স্যুরেন্স অ্যাক্ট, ১৯৩৮ এবং স্বাধীনতার পরে ইন্স্যুরেন্স অ্যাক্ট, ১৯৭৩ দ্বারা পরিচালিত হয়। ১৯৮৪ সালের পর বেশ কয়েকবার বীমা আইন সংশোধন করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১০ সালে বীমা আইন সংশোধন করা হয়। তবে ইন্স্যুরেন্স অ্যাক্ট, ২০১০ এর অনেক নিয়ম ও প্রবিধান এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। অধিকন্তু, আইডিআরএ এর পরিকল্পিত কাঠামোও বাস্তবায়ন করেনি।