মেটলাইফের মুনাফার দুই-তৃতীয় অংশ কেটে রাখা হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের একমাত্র বিদেশি জীবন বীমা কোম্পানি মেটলাইফের মালিকদের মুনাফার সম্পূর্ণ অংশ যুক্তরাষ্ট্রে তাদের প্রধান কার্যালয়ে পাঠাতে পারবে না। মোট মুনাফার মালিকদের অংশ থেকে ৩ ভাগের ২ ভাগ এদেশে রেখে বাকি ১ ভাগ টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর অনুমোদন দিবে বীমা উ্ন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রটি জানায়, ২০১৩ সালের মুনাফার অংশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর অনুমতি চেয়ে আইডিআরএ’কে চিঠি দেয় মেটলাইফ। এ চিঠি পাঠানো হয় ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর। তবে এখনো এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি আইডিআরএ। মেটলাইফের রিজিওনাল সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর আইডিআরএ’র কাছে মেটলাইফ ২০১৩ সালের একচ্যুরিয়াল মূল্যায়ন প্রতিবেদন পাঠায়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী বিমা আইন ২০১০’র ৮২ ধারা মোতাবেক মেটলাইফের উদ্বৃত্ত অংশে মালিকদের অংশ হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে ১২০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এই লভ্যাংশ থেকে ৫ শতাংশ অর্থাৎ ৬ কোটি ৩ লাখ টাকা বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০০৬ (২০১৩ সালে সংশোধিত) এর ২৩৪ ধারা এর উপধারা (১) এর দফা (খ) তে নির্দেশিত তহবিলে রাখা হবে। বাকি ১১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর অনুমতি চেয়েছে মেটলাইফ। সূত্রটি জানায়, বিদেশি এই বিমা কোম্পানিটি বাংলাদেশে কোনো বিনিয়োগ না করেই বছরের পর বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ মুনাফা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। তবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত হয়নি কোম্পানিটি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না থাকায় এটির ওপর বাংলাদেশের কোনো মালিকানাও নেই। তাই কোনো বিনিয়োগ না করেই প্রতি বছর কোটি ডলার মুনাফা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ২০১৩ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠায় আইডিআরএ। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মেটলাইফ ২০০০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে কার্যত কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই বাংলাদেশ থেকে পাঁচ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার ডলার (প্রায় ৫০০ কোটি টাকা) মুনাফা নিয়ে গেছে। কোম্পানিটি ২০১০ ও ২০১১ সালেও ভালো মুনাফা করে। এ দুই বছরের মোট মুনাফা থেকে ২ কোটি ২০ লাখ ডলার (প্রায় ১৮০ কোটি টাকা) যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর জন্য মেটলাইফ আইডিআরএ’র কাছে আবেদন করে। এ সময় ২০১০ সালের মুনাফার ৩০ কোটি টাকা কেটে রাখে আইডিআরএ। বিদেশি এই বিমা কোম্পানিটি বাংলাদেশে ১৯৫২ সাল থেকে ব্যবসা করছে। ২০১০ সালে সাড়ে ১৫ বিলিয়ন ডলারে কোম্পানিটি কিনে নেয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক জীবন বীমা কোম্পানি মেট্রোপলিটন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বা মেটলাইফ। তখন থেকে এর নতুন নামকরণ করা হয় মেটলাইফ আলিকো। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের শুরু থেকে বাংলাদেশে কোম্পানিটি নাম পরিবর্তন করে নামকরণ করে মেটলাইফ। আইডিআরএ সূত্র জানায়, মেটলাইফের বিষয়ে আইডিআরএ অর্থ মন্ত্রণালয়কে এক চিঠিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশে মেটলাইফ শুধুই তাদের পণ্য বিপণন করছে। বীমা খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে কোনো ভূমিকা রাখছে না এ কোম্পানি। কোম্পানিটি বাংলাদেশে বীমা ব্যবসা শুরু করতে এক পয়সাও এ দেশে নিয়ে আসেনি। অথচ কোটি কোটি ডলার মুনাফা অর্জন করে নিয়ে যাচ্ছে। সূত্রটি জানায়, দেশিয় কোম্পানিগুলো যথাযথভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে ব্যর্থতার পরিচয় দেয়ায় এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে তুলনামূলক ভালো ব্যবসা করেছে মেটলাইফ। কোম্পানিটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। প্রতিবেশি পাকিস্তানের পুঁজিবাজারেও তালিকাভুক্ত। অর্থাৎ এতে পাকিস্তানের মালিকানা রয়েছে। বাংলাদেশে মেটলাইফ বাংলাদেশের কোনো মালিকানা নেই। এ বিষয়টিও মন্ত্রনালয়কে জানিয়েছে আইডিআরএ।