প্রতারক চক্রের কূটকৌশলে ধরাশায়ী ভারতের বীমা ব্যবসায়ীরা
প্রতারক চক্রের নিত্য-নতুন কূটকৌশলে ধরাশায়ী ভারতের বীমা ব্যবসায়ীরা। এই চক্রের খপ্পরে পড়ে বিশাল অংকের লোকশান গুণতে হচ্ছে সেদেশের জীবন বীমা কোম্পানিগুলোকে। বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তার ও মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের কর্মচারী থেকে শুরু করে খোদ বীমা কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সমৃদ্ধ এই জালিয়াত চক্রের কৌশল দেখে হতবিহ্বল ভারতের বীমা ব্যবসায়ী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
প্রতারক চক্রটি প্রথমে দলিল-দস্তাবেজ জাল করে অনলাইনে বীমা করে। পরে ভুয়া প্রোফাইল, মেডিকেল রেকর্ড এবং মৃত্যুসনদ তৈরি করে বীমার টাকা উত্তোলন করে। অনলাইনে জীবন বীমা পলিসি গ্রহণের মাত্র দু’মাসের মধ্যে বেশ কয়েকটি নতুন বীমা পলিসি কাঠামোবদ্ধ এবং টাকা উত্তোলন করা হয়। এ ঘটনার পর বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলো পুলিশের দ্বারস্থ হলে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। মেইল অনলাইন ইনডিয়া এক খবরে এমনটাই জানিয়েছে।
পুলিশের ভাষ্য মতে, দিল্লি এবং ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিওনের (এনসিআর) পাশাপাশি উত্তরখণ্ড, গুজরাট এবং বিহারের মতো রাজ্যে অস্তিত্বহীন মানুষের নামে জীবন বীমা দাবির মামলা পাওয়া গেছে। উত্তর প্রদেশে স্পোশাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) একটি দল চক্রটিকে হাতে নাতে গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করছে। সন্দেহ করা হচ্ছে যে, ওই গ্রুপটি বীমা কোম্পানিগুলোর কর্মচারী, বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তার এবং মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে খুবই দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে।
স্পোশাল টাস্ক ফোর্সের দলটি এরকম ৮টি মামলা হাতে পেয়েছে। বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলো ১০ কোটি রুপির বেশি লোকসানের কারণে এসব মামলা দায়ের করেছে। প্রতারণার মাত্রা কতটা হতে পারে তা কেবল চক্রটি ধারা পড়ার পরই জানা সম্ভব। পুলিশের দাবি, প্রতারকদের যথেষ্ট তথ্য তাদের হাতে এসেছে এবং তারা নাগালের মধ্যেই রয়েছে। খুব শিগগিরই পুরো চক্রটি ধরা পড়বে।
প্রতারকরা জাল কাগজপত্র স্ক্যান করার পর অনলাইনে সংযুক্ত করে জীবন বীমা গ্রহণ করে। বিদ্যমান নেই এমন মানুষের নামে ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে জাল দলিল যেমন জন্ম সনদ, ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন এবং অন্যান প্রয়োজনী কাগজপত্র আপলোড করে। এমনটাই জানিয়েছেন, স্পোশাল টাস্ক ফোর্সের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ত্রিবেণী সিং। যিনি এই মামলার তদন্ত করছেন।
পুলিশের দাবি, ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশনের বা শারীরিক যাচাই পদ্ধতি খুবই দুর্বল। এ কারণে চক্রটি ধরা পড়েনি। পলিসি গ্রহণের পর চক্রটি কয়েক মাস অপেক্ষা করে এবং হাসপাতালের কর্মকতা-কর্মচারী ও ডাক্তারদের সহায়তায় ওই ভুয়া পলিসি গ্রহণকারীর জন্য একটি মেডিকেল হিস্টোরি বা চিকিৎসা ইতিহাস তৈরি করে।
পুলিশ সুপার ত্রিবেণী সিং বলেন, আমরা খুঁজে পেয়েছি যে, চক্রটি অস্তিত্বহীন ব্যক্তির জন্য মেডিকেল হিস্টোরি তৈরি করেছে। প্রতারকচক্রটি কাগজপত্রের মাধ্যমে দেখায় যে, বীমা গ্রহণকারী হার্টের রোগী অথবা তার কিছু গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা আছে। এমনকি তারা ডিসচার্জ লেটারের সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তির সনদ, অপারেশন এবং মেডিকেলের কাগজপত্র দাখিল করে।
পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চক্রটি যতটা সম্ভব শক্তিশালী মেডিকেল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে বীমা গ্রহণকারীকে মৃত ঘোষণা করে। মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের কর্মচারীদের সহায়তায় অস্তিত্বহীন ওই ব্যক্তির নামে মৃত্যুর সনদ সংগ্রহ করে।
তদন্তের সময় পুলিশ জানতে পারে, অপরাধীরা সেই সব ব্যক্তি যারা বীমা কোম্পানিতে কাজ করে এবং আইনের ফাঁকফোকর তারা খুব ভালো জানে। ভুয়া প্রোফাইল এবং মেডিকেল কাগজপত্র তৈরি করতে চক্রটি মিউনিসিপ্যাল ও হাসপাতালের নিম্ন শ্রেণির কর্মচারীদের সঙ্গে দৃঢ় বন্ধনে কাজ করে।
পুলিশ সুপার ত্রিবেণী সিং বলেন, আমরা চক্রটিকে গুঁড়িয়ে দিতে খুব কাছাকাছি চলে এসেছি এবং শিগগিরিই তাদের গ্রেফতার করতে অভিযান পরিচালনা করা হবে। বীমা কোম্পানী, ডাক্তার ও সরকারি কর্মচারীদের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে সন্দেহজনক এবং তারা গ্রেফতার হবে বলেও জানান ত্রিবেণী।