সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা: দারিদ্র বিমোচনে স্বাস্থ্য বীমা চালুর সুপারিশ

7th 5 year plan image আবদুর রহমান: দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলে চরম দরিদ্র মানুষকে ঝুঁকি প্রবণ বিশেষ করে স্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রবণ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য বীমা চালুর সুপারিশ করা হয়েছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়। আর তা চালু করা যেতে পারে পাইলট বেসিসে। এ জন্য সরকার স্বাস্থ্য খাতে অর্থায়নকে প্রধান অগ্রাধিকার দিতে ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার মানব সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রেও সরকারের স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প সহযোগিতা করবে বলে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করা, কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ, পণ্য পরিবহন ও যানবাহনের সুরক্ষায় বীমার তাগিদ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জাতীয় সামাজিক বীমা প্রকল্পের (এনএসআইএস) অংশ হিসেবে বেকারত্ব, দুর্বলতা, মাতৃত্ব এবং দুর্ঘটনা বীমা সরবরাহের সম্ভাবনা বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে। সমালোচনা করা হয়েছে, ব্যাংকিং সেক্টরে ডিপোজিট বীমা না থাকারও। বর্তমানে বাংলাদেশে লাইফ এবং নন-লাইফ উভয় ধারায় মোট ৭৭টি বীমা কোম্পানি কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে বেসরকারি লাইফ বীমা কোম্পানি রয়েছে ৩০টি। আর জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি রয়েছে ৪৫টি। এছাড়াও সরকারি ও বিদেশি মালিকানাধীন দু’টি জীবন বীমা কোম্পানি রয়েছে। সেগুলো হলো- জীবন বীমা করপোরেশন (জেবিসি) ও আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি (আলিকো)। জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মধ্যে সাধারণ বীমা করপোরেশন (এসবিসি) সরকারি মালিকানাধীন। এসব কোম্পানি বাংলাদেশের বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) অনুমোদিত। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ব্যাকগ্রাউন্ড পেপারে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের গবেষক ড. আহসান এইচ মন্সুর বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানিয়েছেন, ২০১০ সালে বাংলাদেশের ফরমাল ফিনান্সিয়াল মার্কেটের মোট সম্পদের ৩ শতাংশ ছিল বীমা মার্কেটের। আর ২০১৩ সালের জিডিপি’তেও এই সম্পদের পরিমাণ ৩ শতাংশ। যেখানে ব্যাংকিং সেক্টরে এই সম্পদের পরিমাণ ৬৩ শতাংশ। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ওই ব্যাকগ্রাউন্ড পেপারে আরো বলা হয়েছে, প্রিমিয়াম আয় এবং প্রভাব বিস্তার উভয় দিক দিয়েই বাংলাদেশের বীমা খাত প্রতিবেশি দেশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১০ সালের একটি জরিপের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১.৫ শতাংশ জীবন বীমার আওতায় রয়েছে। যেখানে পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৪.৫ শতাংশ আর ভারতের ৭.৫ শতাংশ জীবন বীমার আওতায় রয়েছে। ইন্স্যুরেন্স মার্কেট সংস্কারের জন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ওই ব্যাকগ্রাউন্ড পেপারে কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে। যেগুলো এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশ সরকারকে দিয়েছে। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে-ইন্স্যুরেন্স অ্যাক্ট, ২০১০ অনুসারে সব বীমা কোম্পানির পূনর্মূলধনীকারণের জন্য একটি সময়সূচিতে সম্মত হওয়া। ইন্স্যুরেন্স অ্যাক্ট, ২০১০ এর অনুচ্ছেদ ৪১ অনুযায়ী বিনিয়োগ বিধি গঠন। এছাড়াও এই শ্বেতপত্রের বাস্তবায়ন শুরু করা এবং কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ ও আইডিআরএ ফান্ডের ব্যবস্থাপনা বিধির বাস্তবায় করা। খসড়া শ্বেতপত্র তৈরি করা হলেও মন্ত্রীসভা এর অনুমোদন করেনি। তবে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও নিয়োগ এবং আইডিআরএ তহবিলের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এরইমধ্যে পলিসি পেপার এবং বীমা বিধির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর ফিনান্সিয়াল এক্সেস সার্ভে অনুযায়ী, ২০০৫ সালে বাংলাদেশে বীমা কোম্পানির সংখ্যা ছিল ৬২টি। ২০১০ সাল পর্যন্ত এ সংখ্যা বৃদ্ধি না পেলেও ২০১৩ সাল নাগাদ বীমা কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৬টিতে। একইভাবে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ৩২ লাখ ৪৬ হাজার ১০৪ জন পলিসি হোল্ডারের পলিসি সংখ্যা ছিল ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৯০৭টি। আর ২০১০ সালে এসে পলিসি হোল্ডারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৭ লাখ ৩ হাজার ৭৩তে, যাদের পলিসির সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৫১ লাখ ১৪ হাজার ৮৪টি। Performaance Indicators of the Insurance Marketআইএমফ ‘র ওই জরিপে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশে বীমা পলিসি হোল্ডারের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৭০ লাখ ৯৮ হাজার ৩৬৪ জন। এসময় বীমা পলিসির সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৭৯ লাখ ৬৮ হাজার ৬১৬টি। এসব পলিসির মধ্যে ২০০৫ সালে লাইফ বীমা পলিসির সংখ্যা ৬৯ লাখ ৭৮ হাজার ২৯৯টি। আর নন-লাইফ বীমা পলিসির সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ১১ হাজার ৬০৮টি। ২০১০ সালে লাইফ বীমা পলিসির সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৩৮ লাখ ৬৩ হাজার ৭৭২টি। এসময় নন-লাইফ বীমা পলিসির সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৫০ হাজার ৩১২টি। ২০১৩ সালে লাইফ বীমার পলিসির সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৬৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬০৩টি। আর নন-লাইফ বীমা পলিসির সংখ্যা ১৪ লাখ ৭০ হাজার ১৩টি। আইএমএফ'র ফিনান্সিয়াল এক্সেস সার্ভে অনুযায়ী, ২০০৫ সালে ইন্স্যুরেন্স করপোরেশনের সংখ্যা ছিল ৩৮ হাজার ১২টি। প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০১০ এসে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৯ হাজার ১০৯টিতে। আর ২০১৩তে ইন্স্যুরেন্স করপোরেশনের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৭৩টি। লাইফ ইন্স্যুরেন্স টেকনিক্যাল রিজার্ভের পরিমাণ ২০০৫ সালে ছিল ৩২ হাজার ৬৪১। এসময় নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স টেকনিক্যাল রিজার্ভ ছিল ৫ হাজার ৩৭১। ২০১০ সালে লাইফ ইন্স্যুরেন্স টেকনিক্যাল রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯৮৫। আর নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স টেকনিক্যাল রিজার্ভ ছিল ৮ হাজার ১২৪। একইভাবে ২০১৩ সালে লাইফ ইন্স্যুরেন্স টেকনিক্যাল রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭২ হাজার ৫০। আর নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স টেকনিক্যাল রিজার্ভ ছিল ১০ হাজার ৯২৩।