শিগগির ভারতের এলআইসির চূড়ান্ত অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের বৃহত্তম জীবন বীমা কোম্পানি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এলআইসি) বাংলাদেশে বীমা ব্যবসা করার চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) থেকে চলতি মাসেই প্রতিষ্ঠানটিকে বাংলাদেশে ব্যবসা করার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হতে পারে বলে আইডিআরএ বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। ‘লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন (এলআইসি) অব বাংলাদেশ’ নামে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে বীমা ব্যবসা করবে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে উদ্যোক্তা হিসেবে থাকছে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড (এমটিবিএল) ও ওয়েস্টিন গ্রুপের অ্যাসেট মেনেজমেন্টে কোম্পানি এসিএমএল। এরমধ্যে এসিএমএ ‘র দখলে থাকছে উদ্যোক্তা অংশের ৭ শতাংশ এবং এমটিবিএল’র দখলে থাকবে ৩ শতাংশ। বাকি ৫০ শতাংশ থাকবে এলআইসি’র দখলে। প্রতিষ্ঠানটিতে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ভারতীয় নগরিক অরুপ দাস গুপ্ত। তিনি ভারতে এলআইসির একটি অংশের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের অংশ হিসেবে গত ৬ জুন ৮ শর্তে প্রতিষ্ঠানটিকে সনদ দেয়ার সম্মতিপত্র দেয় আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ। এলআইসিকে দেয়া ৮টি শর্তের মধ্যে দু’টি শর্ত প্রাথমিক সম্মতিপত্র পাওয়ার আগেই পূরণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ওই শর্ত দু’টি হলো ১০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনে যৌথ জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান করা এবং পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশ শেয়ার এলআইসি ধারণ করা। বাকি ৬টি শর্ত প্রাথমিক সম্মতিপত্র পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে পূরণ করে নিবন্ধন সনদ নেয়ার আহবান জানানো হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। এরমধ্যে ছিল পরিশোধিত মূলধনের বাকি ১০ শতাংশ বাংলাদেশের কোন উদ্যোক্তা ধারণ করবে। তবে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স উদ্যোক্তা হিসেবে থাকতে পারবে না। এই প্রতিষ্ঠানটির পরিবর্তে বাংলাদেশের যে কোন জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানকে উদ্যোক্তা হিসেবে রাখতে হবে। এর কারণ হিসেবে আইডিআরএ বলেছিল, ২০১০ সালের বীমা আইনের ১৩ ধারায় বলা আছে- সাধারণ বীমার জন্য নিবন্ধিত কোন কোম্পানি জীবন বীমার জন্য নিবন্ধিত হবে না। তাই পাইওনিয়ার সাধারণ বীমা কোম্পানির জন্য নিবন্ধিত হওয়ার কারণে জীবন বীমার জন্য নিবন্ধিত হতে পারবে না। এ শর্তের বিপরীতে এলআইসি বাংলাদেশ থেকে একটি ব্যাংক ও একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে অংশীদার হিসেবে রেখেছে। আডিআরএ’র শর্তে অন্য কোন জীবন বীমার কথা বলা হলেও ব্যাংক অথবা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অংশীদার হিসেবে থাকতে পারবে কি না সে বিষয়ে কিছু বলা ছিল না। প্রাথমিক সম্মতিপত্র দেয়ার সময় চূড়ান্ত নিবন্ধন সনদের জন্য বিদেশি ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ৬০ শতাংশ পরিশোধিত মূলধনের সমপরিমাণ ৬০ কোটি বাংলাদেশি টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে প্রমাণপত্র আইডিআরএ’র কাছে জমা দেয়ার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। তবে এ ৬০ কোটি টাকার মধ্যে বিদেশি উদ্যোক্তাদের অংশ বৈদেশিক মুদ্রায় জমা দিতে বলা হয়। মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে দেয়া শর্তে বলা হয়, কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী পদের জন্য যোগ্য ও উপযুক্ত ব্যক্তিকে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা, ২০১৩ সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইন, বিধি, প্রবিধান প্রতিপালনের মাধ্যমে মনোনিত করে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। আর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগ আইডিআরএ’র অনুমোদনের পর কার্যকর হবে। এদিকে বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ সংক্রান্ত প্রবিধানমালার ৫(ক) ধারায় বলা হয়েছে, কেউ বাংলাদেশের নাগরিক না হলে তিনি বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অযোগ্য হবেন। তবে লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন (এরআইসি) অব বাংলাদেশ’র প্রস্তাবিত মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা অরুপ দাস গুপ্ত বাংলাদেশের নাগরিক নন। অন্যান্য শর্তের মধ্যে ছিল, কোম্পানির এ সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা যথাযথ ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বাক্ষরে আইডিআরএ’র কাছে জমা দিতে হবে। প্রস্তাবিত কোম্পানির নিবন্ধন সনদ বীমা আইন ২০১০, বীমাকারীর নিবন্ধন প্রবিধানমালা ২০১৩ এবং বিদেশি উদ্যোক্তা কর্তৃক শেয়ার ক্রয় বিধিমালা ২০১৩ সহ সংশ্লিষ্ট আইন, বিধি-বিধান অনুসরন করে বিবেচনা করা হবে। আর শেষ শর্তটি ছিলো সম্মতিপত্র পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে হবে।