সম্প্রতি ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা পানিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যায় কৃষকের ফসল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বড় ধরণের ক্ষয়-ক্ষতি হলেও বীমাখাতে এর ধকল পড়েছে সামান্য। বীমা কোম্পানিগুলোর কাছে দাবি এসেছে হাতে গোনা কয়েকটি। এ ছাড়া বেশির ভাগ কোম্পানিই রয়েছে দাবিমুক্ত। বন্যা উপদ্রুত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, ফেনী, নোয়াখালীতে ব্যবসা পরিচালনাকারী বিভিন্ন বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী ও শাখা অফিসে যোগাযোগ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বন্যা সংশ্লিষ্ট এলাকায় বেশিরভাগ বীমা কোম্পানির এরিয়া বা শাখা ব্যবস্থাপক জানান, এবারের বন্যায় কোম্পানিগুলোর গ্রাহকদের তেমন ক্ষতি হয়নি। আর এ কারণে গ্রাহকদের কাছ থেকে বীমা দাবি কম এসেছে।
প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখা ব্যবস্থাপক এম, এ হাসান বলেন, প্রগতি ইন্স্যুরেন্সে চট্টগ্রামে ৪টি শাখার মধ্যে শুধুমাত্র আগ্রাবাদ শাখায় বীমা দাবি এসেছে ৫টি। তবে ক্ষতির পরিমাণটা এখন বলা যাবে না। কারণ দাবিগুলোর যাচাই-বাছাই চলছে।
গ্রীনডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের চট্টগ্রাম প্রিন্সিপাল শাখার ম্যানেজার জাফর আহমদ বলেন, এখন পর্যন্ত গ্রীন ডেল্টা গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫ টি দাবি পাওয়া গেছে। এগুলোর সার্ভে কাজ চলছে।
বন্যায় চট্টগ্রাম এলাকায় ভালোই ক্ষতি হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এর বেশি জানতে হলে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এছাড়া গ্রীনডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে ভালো হয়।
দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহি কাজী মোকাররম দস্তগীর বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে ৪ টি দাবি এসেছে। আর আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। দাবি থাকলে আরো আগে আসতো বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের কক্সবাজার শাখার সহকারি ম্যানেজার এসএম ফকরুল ইসলাম জানান, আমাদের শাখায় এখন পর্যন্ত ২টি বীমা দাবির আবেদন পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে কোম্পানিটির চট্টগ্রাম খাতুনগঞ্জ শাখার ম্যানেজার অনিল কুমার দাস বলেন, এবারের বন্যায় খতুনগঞ্জে অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে পাইওনিয়ার কোম্পানির কোনো গ্রাহকদের কাছ থেকে এখনো কোনো দাবি আসেনি।
পিপল’স ইন্স্যুরেন্সের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক কাজী মঞ্জুরুল কাদের কিবরিয়া বলেন, তাদের শাখায় ১টি দাবি এসেছে।
অন্যদিকে, আগ্রাবাদ শাখার ডিজিএম আনোয়ারুল আজিম বলেন, তাদের শাখায় বীমা দাবি আসেনি।
বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহি আহমেদ সাইফুদ্দিন চৌধুরী বলেন, সর্বশেষ তথ্যমতে এবার বন্যায় ক্ষতি হিসেবে প্রায় ৮০ লাখ টাকার মতো দাবি এসেছে।
তিনি আরও বলেন, এবারের টানা বৃষ্টি ও উজানের পানিতে দেশের কিছু জায়গায় বন্যায় রুপ নেয়। বিশেষ করে চট্টগ্রাম এলাকাতে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে আমাদের গ্রাহকদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
আরও দাবি আসার সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ ক্ষতি হলেই গ্রাহকরা সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানিয়ে দেয়। তাছাড়া বন্যার ঘটনা আরো অনেক দিনের আগের। ফলে আর কোনো দাবি আসবে না বলে তিনি মনে করেন।
এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহি বিদ্যা ভূষণ চক্রবর্তী বলেন, আমাদের কোম্পানির গ্রাহকদের কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে নারায়নগঞ্জের গাউছিয়ায় একটি গাড়ির মাল অতি বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার দাবি ৬ লাখ টাকার মতো। এছাড়া বৃষ্টি বা বন্যায় আমাদের তেমন কোনো দাবি পাওয়া যায়নি।
অগ্রনী ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহি আনোয়ার হোসাইন বলেন, এবার বন্যায় অগ্রনী ইন্স্যুরেন্সের গ্রাহকদের কোনো ক্ষতি হয়নি।
তিনি বলেন, খাতুনগঞ্জ নিয়ে ভয় ছিলো কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানীতে কোনো গ্রাহকের ক্ষতি হয়নি।
রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের খাতুনগঞ্জ শাখার অফিস কর্মকর্তা মো. ইয়াহিয়া বলেন, খাতুনগঞ্জে এবার যে বন্যা হয়েছে তাতে ক্ষয়ক্ষতি হবে এটা স্বাভাবিক। তবে আমাদের কোম্পানির কোনো গ্রাহকের ক্ষতি হয়েছে কিনা বলতে পারবো না। কারণ আমাদের কাছে এখনো কোনো দাবি আসেনি।
ঢাকা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কিউ এম ওয়াহেদ আলী জানান, চিটাগাং এরিয়ায় আমাদের ২টি শাখা রয়েছে। আমার জানা মতে গ্রাহকদের কাছ থেকে এখনো কোনো দাবি আসেনি।
ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুণ পাটওয়ারী বলেন, চট্টগ্রামে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ৩টি শাখা আছে। এবারের বন্যায় গ্রাহদের ক্ষতি হয়েছে ঠিকই তবে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে এখনো কোনো দাবি পাওয়া যায়নি। প্রকত তথ্য জানতে আরো কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে, তিনি জানান।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স মূখ্য নির্বাহি মো. সানাউল্লাহ বলেন, বন্যায় এবার তেমন ক্ষতি হয়নি। গ্রাহকদের কাছ থেকে এবার কোনো দাবি আসেনি।
সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহি মো. জাহিদ আনোয়ার খান বলেন, বন্যা বা বৃষ্টি সংক্রান্ত কোনো পলিসি আমাদের নেই। এমনকি অনেক কোম্পানির ও এ পলিসিটা নেই।
তবে তিনি বলেন, দেশে প্রতিবছরই বন্যার মতো ঘটনা ঘটছে। যা আগামীতেও ঘটবে। দেশে যেভাবে বন্যাসহহ নানান দূর্যোগের ঘটনা ঘটছে তাতে সব ব্যবসায়ীদের বীমার আওতায় আসা দরকার।
তিনি বলেন, সম্প্রতি চট্টগ্রামে যে বন্যা হয়েছে তার কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা আমি অর্জন করেছি। ঘটনার সময় আমি খাতুনগঞ্জে ছিলাম। মাত্র এক ঘন্টার মধ্যে সিনেমা স্টাইলে দোকানগুলোতে হাটু পানি হয়। এতে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, এধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে সকল ব্যবসায়ীকে বীমার আওতায় আসা উচিত। কোম্পানির গুলোরও উচিত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানো।
প্রসঙ্গত, এ বছর অতি বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের বেশ কিছু জেলায় বন্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, ফেনী, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। চট্টগ্রাম নগরীর খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জোয়ারের পানিতে ভেসে যায়। এতে ব্যবসায়ীদের শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।