স্থগিতই রয়ে গেল স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের লাইসেন্স

স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স’র লাইসেন্স স্থগিত সংক্রান্ত চেম্বার আদালতের আদেশ বহাল রেখেছে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৪ সদস্যের পূর্ণাঙ্গবেঞ্চ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে হাই কোটে রিট মামলাটি (নম্বর-৬৫৮০) নিস্পত্তি করতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। শুনানিতে আইডিআরএ’র পক্ষে ছিলেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল ইকরামুল হক। স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স’র পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। এর ফলে বীমা কোম্পানিটির লাইসেন্স স্থগিত করা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ( আইডিআরএ)’র নির্দেশনা বহাল থাকছে। এতে বীমা কোম্পানিটি আপাতত নতুন বীমা পলিসি বিক্রি করতে পারবে না। প্রসঙ্গত, সন্তোষজনকভাবে পুনঃবীমা ব্যবস্থাকার্য সম্পাদনে ব্যর্থ হওয়ায় আইডিআরএ কোম্পানিটির লাইসেন্স ৩ মাসের জন্য স্থগিত করলে তা চ্যালেঞ্জ করে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স হাই কোটে রিট (নম্বর-৬৫৮০) করে।২৯ জুন হাইকোর্ট বেঞ্চ আইডিআরএ’র আদেশ স্থগিত করে দেন।পরে এই আদেশের বিরুদ্ধে আইডিআরএ আপিল করলে ৬ জুলাই হাই কোটের আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। একই সঙ্গে ৪ সপ্তাহের মধ্যে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গবেঞ্জে যাওয়ার অনুমতি দেন। এরপর পূর্ণাঙ্গবেঞ্জে আপিল করলে আদালত ৩০ জুলাই শুনানীর দিন ধার্য করেন। ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল ইকরামুল হক জানান, হাই কোটের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছিলেন চেম্বার আদালত। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ চেম্বার আদালতের নির্দেশনা বহাল রেখেছেন। আর রিট মামলাটি হাইকোটে নিষ্পত্তি করতে বলেছেন। সন্তোষজনকভাবে পুনঃবীমা সম্পাদনে ব্যর্থ হওয়ায় গত ২১ জুন থেকে স্ট্যান্ডার্ড ইন্সুরেন্সের লাইসেন্স ৩ মাসের জন্য স্থগিত করে আইডিআরএ। একই সঙ্গে লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না ৩০ দিনের মধ্যে তার কারণ দর্শাতে বলা হয়। পাশাপাশি লাইসেন্স স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত কোন নতুন বীমা কাভারনোট, বীমা সার্টিফিকেট বা বীমা পলিসি জারি (ইস্যু) না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে ২১ জুনের আগে জারিকৃত বীমা পলিসির কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সুযোগ রাখা হয়। এর আগে গত ৩১ মে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স আইডিআরএকে দেওয়া এক চিঠিতে স্বীকার করে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ’র কিছু বীমা পলিসির ক্ষেত্রে মোট ৪৬ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকার ঝুঁকি পুনঃবিমা করা হয়নি। এরই প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ। এ বিষয়ে আইডিআরএ বলছে, পুনঃবিমা ব্যবস্থা হচ্ছে সাধারণ বীমার অন্যতম মূলনীতি।পুনঃবিমা ব্যবস্থায় কোন ব্যত্যয় হলে তা কোম্পানির মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। এ জন্য বীমা কোম্পানির লাইসেন্স প্রদানের অন্যতম শর্ত হিসেবে ২০১০ সালের বীমা আইনের ৯ ধারায় পুনঃবীমা সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আইনের ১০ ধারায় সন্তোষজনকভাবে পুনঃবীমা সংক্রান্ত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানির নিবন্ধন সনদ বাতিল বা স্থগিত রাখার বিধান করা হয়েছে। আইডিআরএ স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সকে জানিয়েছে, সন্তোষজনকভাবে পুনঃবীমা ব্যবস্থা গ্রহণে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ার দায়ে বীমা আইন, ২০১০ এর ১০(১)(ঝ) ধারার বিধান অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির সনদ বাতিল যোগ্য। কোম্পানি চাইলে নির্দেশের বিষয়ে বিধি মোতাবেক শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে পারে বলেও জানানো হয়। এরপর আইডিআরএ’র নির্দেশনাকে চ্যালেঞ্জ করে ২৯ জুন স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স হাই কোটে রিট দায়ের করে। স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স পুণঃবীমা সংক্রান্ত অনিয়মনটি করে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের পলিসিতে। ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর কোনাবাড়িতে গ্রুপটির বহুতল একটি ভবন আগুনে পুড়ে যায়। এরপর এই অগ্নিকান্ডের বীমা দাবির টাকা তুলতে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠে গ্রুপটির বিরুদ্ধে। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে আইডিআরএ। ওই তদন্ত দলের প্রতিবেদনে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বীমা করপোরেশন ও ক্ষয়ক্ষতি জরিপকারী প্রতিষ্ঠাগুলোর পারস্পরিক যোগসাজশের চিত্র উঠে আসে। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গবেঞ্চের রায়ের বিষয় মন্তব্য জানতে চাইলে আইডিআরএ’র সদস্য সুলতান উল আবেদিন মোল্লা বলেন, এখন আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।