নজিরবিহীন অনিয়মের মাধ্যমে গ্রামীণ ফোনের ৭ হাজার কোটি টাকার বীমা করে আসছে বেসরকারি ননলাইফ বীমা কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদিত প্রিমিয়াম হারের চেয়ে কম হারে গ্রামীণ ফোনের অলরিকস পলিসিটি চালিয়ে যাচ্ছে কোম্পানিটি। এতে শুধু ২০১৪ সালেই প্রিমিয়াম বাবদ প্রায় দেড় কোটি টাকা ছাড় পেয়েছে গ্রামীণ ফোন। ফলে এই একটি পলিসিতেই ৩ বছরে ভ্যাট বাবদ প্রায় ৬৬ লাখ টাকা খোয়া গেছে সরকারের।
অথচ প্রিমিয়াম কম নেয়ার জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র কোনো অনুমোদন নেয়নি কোম্পানিটি। বীমা আইন অনুসারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ছাড়া প্রিমিয়াম কম নেয়া হলে সে পলিসি বাতিল করার বিধান রয়েছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ছাড়া প্রিমিয়াম হার কম নিয়ে বা বেশি নিয়ে পলিসি করা বেআইনি। অন্যদিকে প্রিমিয়াম হার কম বা বেশি করা মানিলন্ডারিং আইনেও সন্দেহজনক লেনদেন। অথচ আইডিআরএ’র অনুমোদন ছাড়া গত ৩ বছর ধরেই প্রিমিয়াম কম নিয়ে গ্রামীণ ফোন লিমিেেটডের পলিসি করে আসছে রিলায়্যান্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডে। এতে ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৩ বছরে প্রিমিয়াম কম নেয়া হয়েছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। এতে ৬৬ কোটি টাকা হারিয়েছে সরকার।
উল্লেখ্য প্রিমিয়ামের ওপর ১৫% ভ্যাট দিতে হয়। ভ্যাটের এ টাকা পরিশোধ করে বীমা গ্রাহক। তবে তা আদায় করে বীমা কোম্পানি।
গ্রামীন ফোন লিমিটেডের অল রিক্স পলিসিটি করে ২০১১ সালে। রিলায়্যান্স ইন্স্যুরেন্সের নেতৃত্বে সহবীমাকারি হিসেবে আছে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ইষ্টল্যা- ইন্স্যুরেন্স, রুপালী ই্ন্স্যুরেন্স। কিন্তু গ্রাহক যোগাযোগ সহ প্রিমিয়াম রেট নির্ধারণের দায়দায়িত্ব এককভাবে রিলায়্যান্স ইন্স্যুরেন্সের।
পলিসিট সর্বশেষ নবায়ন করা হয় ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। পলিসি নাম্বার- আরআইএল/এইচ-ও/আইএআর/ পি-০০০২৩/০৯/২০১৪। মেয়াদ ৩১ আগষ্ট ২০১৪ থেকে ৩১ আগষ্ট ২০১৫।
২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি গ্রামীণ ফোনের এই বীমা পলিসিটির প্রিমিয়াম হার ম্যাটেরিয়াল ড্যামেজ কাভারেজে ০.১২৭৯%, বিজনেস ইন্টারাপশন কাভারেজে ০.১২% নির্ধারণ করে দেয় সেন্ট্রাল রেটিং কমিটি (সিআরসি)। এরপর আর নতুন রেটের জন্য সিআরসির কাছে কোনো আবেদন করা হয় নি।
অথচ ২০১৪ সালে গ্রামীন ফোন লিমিটেডের ৭ হাজার ১৮৩ কোটি টাকার বীমা অংকের এ পলিসির নবায়নে প্রিমিয়াম নেয়া হয় ০.১০৮০% হারে। এ হিসেবে প্রিমিয়াম কম নেয়া হয় ০.০১৯৯%। অর্থাৎ প্রিমিয়াম কম নেয়া হয় ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ২০১২ এবং ২০১৩ সালেও একই ভাবে প্রিমিয়াম কম নিয়ে পলিসিটি চালানো হয়।
বীমা আইন ২০১০ এর ১৭ ধারা অনূসারে ননলাইফ বীমার প্রিমিয়াম নির্ধারণ করে সিআরসি। কোন পলিসি ইস্যু করতে রেটিং কমিটি থেকে প্রিমিয়াম হার অনুমোদন করিয়ে নিতে বীমা কোম্পানিগুলো বাধ্য।
আইন অনুসারে কোনো পলিসির প্রিমিয়াম হার পরিবর্তন করা হলে তার জন্য সিআরসি’র কাছে আবেদন করতে হয়। সিআরসি ভ্যাটিং করার পরই পলিসিটি ইস্যু করা হয়। সিআরসি ভ্যাটেট করার পর প্রভিশন দিয়ে পলিসি ইস্যু করা হয়।
এ বিষয়ে রিলায়্যান্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদ মামুন বলেন, কেউ যদি বলে থাকে এ পলিসিতে আন্ডার রেট করা হয়েছে, তা হলে মিথ্যা বলেছে। তিনি আরো বলেন, ফরেন রি-ইন্স্যুরারের কাছ থেকে রেট নিয়েই প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানো কোনোভাবেই আন্ডার রেট করা হয় নাই।
একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, সিআরসির কাছে আবেদন করার কিছু নেই। এর কারণ আদালতে মামলা থাকায় তারা কোনো রেট দিতে পারছে না। আমরা অনেক পলিসি করার ক্ষেত্রেই সিআরসি’র কাছে আবেদন করি কিন্তু তারা কোনো রেট দিতে পারে না। ফলে সিআরসি’র কাছে আবেদন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
তবে, গ্রামীণ ফোনের এ পলিসির বিষয়ে সিআরসি’র কাছে কোনো আবেদন করা হয়নি বলে স্বীকার করেন তিনি।
উল্লেখ্য, স্পেশাল রেট নিয়ে হাইকোর্টে রিট মামলা থাকায় নতুন করে প্রিমিয়াম হার দিতে পারছে না সিআরসি। ফলে ২০১১ সালে নির্ধারণ করে দেয়া হারই বহাল থাকছে। এতে বীমা কোম্পানিগুলোকে আগের হার মেনেই বীমা পলিসি ইস্যু করতে হয়।
গ্রামীণ ফোনের পলিসির প্রিমিয়াম রেট কমানো বিষয়ে সিআরসি জানায়, কোনো কোম্পানি রেট চেয়ে আবেদন করলে আদালতে মামলা থাকায় রেট দেয়া থেকে বিরত আছে একথা জানানো হয়। একই সঙ্গে ২০১১ সালে আবুল খায়ের মিল্ক প্রডাক্ট কোম্পানির মামলার আগের রেট অনুসারে প্রিমিয়াম নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।