পদ্মা লাইফের প্রতারণার কাছে অসহায় আলী কদমের দরিদ্র মানুষ
কিস্তি-১
পদ্মা ইসলামী লাইফের প্রতারণার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে ফোরকান আরা আর কাশমিন নাহার সহ বান্দরবনের আলী কদম উপজেলার খুইল্যা মিয়া পাড়ার সাড়ে ৩’শ হতদরিদ্র বীমা গ্রাহক। বীমার নামে জমা টাকা ফেরত পেতে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্থানীয় প্রশাসন, সাংবাদিক সবার দুয়ারে ঘুরে ঘুরে হতাশ হয়ে পড়েছে তারা। কেউই তাদের সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেনি। এখন কেউ আর তাদের কাছে যোগাযোগও করে না। কোনো খোঁজও নেয় না বীমা কোম্পানিটির লোকজন। যে দালালের মাধ্যমে তারা পদ্মা লাইফের ডিপিএস নামে বীমা পলিসি কিনে সে দালালও পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এর মাঠ পর্যায়ে কোন নজরদারি না থাকায় বীমা কোম্পানিগুলো সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করতে সাহস পাচ্ছে, অভিযোগ বীমা সংশিøষ্টদের।
পদ্মা লাইফের বীমা গ্রাহকদের টাকা আত্মাসাতের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের পাশে দাঁড়ানো বীমা গ্রাহক ফোরকান আরা বলেন, ‘কোনো কিছুতেই তো কোনো কিছু হইল না। আমরা এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে দরখাস্ত করলাম। টিএনও স্যার বলেছিলেন ব্যবস্থা নিবেন। সাংবাদিক ভাইদের বললাম, কেউ কিছু করতে পারল না। এখন আমরা দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আর কার কাছে বিচার দিব?’
পদ্মা লাইফের প্রতারণার শিকার আলী কদমের গ্রাহকদের অভিযোগপত্র ধামাচাপা পড়ে আছে আইডিআরএ দফতরে। গত বছরে করা এ অভিযোগের বিষয়ে কোনো উদ্যোগও নেয়নি বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
এ সম্পর্কে ভুক্তভোগিরা বলেন, বীমা কোম্পানির প্রতারণার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও যদি কোন পদক্ষেপ না নেয় তা হলে কী নিয়ন্ত্রণ করে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ। বীমা কোম্পানির দুর্ণীতির বিচার করতে পারে না এ ধরণের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন আছে কি না ভেবে দেখার সময় এসেছে।
তবে আলী কদমের দরিদ্র বীমা গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিলেও সম্প্রতি ননলাইফ খাতের একটি কোম্পানিকে ৩ কোটি টাকা ও অপর একটি কোম্পানি সাময়িক বন্ধ করে দেয়ায় বেশ নাম কামিয়েছে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা। অন্যদিকে পদ্মা ইসলামী লাইফে মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ না দেয়ায় ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে আইডিআর। তবে পদ্মা লাইফকে এ ধরণের জরিমানা করার পিছনে প্রধান বীমা নিয়ন্ত্রকের বিশেষ উদ্দেশ্য আছে বলে গুজব রয়েছে।
বীমাখাত সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, মাঠ পর্যায়ে কোন নজরদারি করার কথা মাথায় নেই আইডিআরএ’র। বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বীমার নামে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে কোম্পানিগুলোকে। বীমাখাতের দুর্ণীতির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে এগিয়ে আসতে পারছে না আইডিআরএ।
অন্যদিকে, আইডিআরএ যারা চালায় তারা অদক্ষ, প্রচলিত আইন-কানুন ও অফিস কোরিসপনডন্স এ অজ্ঞ। ব্যক্তিহিংসার বশবর্তী হয়ে ও খেয়ালখুশি মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে যাচ্ছে একের পর এক, এমন অভিযোগ তাদের।
তা ছাড়া, আইডিআরএ চেয়ারম্যান একটি বীমা কোম্পানির এমডি এবং ২ সদস্য বীমা কোম্পানিতে ২য় পর্যায়ে চাকুরি করতেন। ফলে এ ধরণের প্রশাসনিক দপ্তর চালানোর অভিজ্ঞতা তাদের নেই। এ ছাড়া যেহেতু তারা বীমা কোম্পানিতে চাকুরি করতো স্বভাবতই কোম্পানিগুলোর কাছে নতজানু, মন্তব্য বীমা সংশ্লিষ্টদের।
২০০৭ সালে পদ্মা ইসলামী লাইফ হানা দেয় বান্দরবন জেলার আলী কদম উপজেলার দুর্গম এলাকা খূল্যা মিয়া পাড়ায়। স্থানীয় খেটে খাওয়া অসহায় সরল মানুষদের বেছে নেয় তারা। এ জন্য দালাল হিসেবে বেছে নেয় স্থানীয় মাদ্রাসা শিক্ষক আবু বকরকে। ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় প্রায় ৩ কোটি টাকা। বীমার নামে খেটে খাওয়া এসব নারীদের কাছ থেকে ১০ বছর পরে দ্বিগুন টাকা দেয়ার প্রলোভন দিয়ে প্রতি মাসে কিস্তি নেয়া হয় ১০০ টাকা করে। এই কিস্তি নেয়া হয় ডিপিএস পলিসির নামে। অথচ বীমা আইনে এ ধরণের পলিসি করানো কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানার পর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
২০০৭ সাল থেকে আলী কদমের গ্রাহকরা মাসিক কিস্তিতে পলিসির টাকা জমা দেয়া শুরু করেন। গ্রাহকরা তাদের কিস্তির টাকা জমা দিতেন স্থানীয় আবু বক্কর মাস্টারের কাছে। আবু বক্কর মাস্টার পলিসির টাকা তার ভগ্নিপতি, কক্সবাজার জোনাল হেড কোয়ার্টারের অধীন চকরিয়া ব্রাঞ্চের কমিশন এজেন্ট মো. কবির হোসেনের মাধ্যমে কোম্পানিতে জমা দিতেন। গত বছরের মে মাস পর্যন্ত গ্রাহকদের পলিসির টাকা জমা নেয়া হয়। গত বছরের জুন থেকে হঠাৎ আবু বক্কর মাস্টার গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া বন্ধ করে দেন। তখন থেকেই ওই গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনো টাকা নিচ্ছে না বীমা কোম্পানি। এমনকি কোম্পানিতে গ্রাহকদের জমা করা টাকা ফেরতও দিচ্ছে না।
এ ঘটনায় বীমা গ্রাহকদের পক্ষে ফোরকান আরা বেগম (পলিসি নম্বর-১৪১১০০৩৯৪০-২) ও কাশমিন নাহার (পলিসি নং- ১৪১১০০১২০০-৩) কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে অভিযোগ করেন। এ অভিযোগের অনুলিপি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান, বান্দরবান জেলা প্রশাসক, আলীকদম উপজেলার নির্বাহী অফিসার ও আলীকদম প্রেসক্লাবের সভাপতিকে দেয়া হয়।