হায়রে খাতির: ফাইল টেবিলে ওঠতেই হেমায়েতের সিইও পদ অনুমোদন
দাফতরিক প্রক্রিয়া পাস কাটিয়ে এক দিনের মধ্যে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফের মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগের অনুমোদন নেন হেমায়েত উল্লাহ। ফাইলটি যেদিন উত্থাপন সেই দিনই অনুমোদন পেয়ে যায়। ওই আবেদন একাই অনুমোদন করেন আইডিআরএ’র তখনকার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফজলুল করিম। এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি।
কোম্পানির নিয়োগ পাওয়া মূখ্য নির্বাহীর চাকুরির রেকর্ড, শিক্ষাসনদ সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে অন্তত কয়েকদিন সময় নেয়া যুক্তিযুক্ত। এ যাচাই বাছাইয়ের জন্য ১৫ দিন সময় দেয়া হয়েছে বীমা আইনে।
নানান অজুহাতে অনেকের আবেদন আড়াই -তিন বছর পড়ে রয়েছে আইডিআরএ, এমন অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, মোটা অংকের বেতন ভাতা ধরেই হেমায়েত উল্লাহর নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মূল বেতন ধরা হয় ২ লাখ টাকা। বাড়ি ভাড়া ১ লাখ ২০ হাজার, বিনোদন ২০ হাজার, চিকিৎসা ১৫ হাজার, দারোয়ান, মালি ও অন্যান্যের খাতে ব্যয় ২০ হাজার, পরিচারিকা ২০ হাজারসহ সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা।
জানা গেছে, ফজলুল করিম ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি বুধবার।পরদিন বৃহস্পতিবার অফিস করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে। ২ ফেব্রয়ারি রোববার হেমায়েত উল্লাহর মূখ্যনির্বাহী পদে নিয়োগ অনুমোদনের জন্য করা আবেদন উত্থাপন এবং ওই দিনই অনুমোদন দেন ফজলুল করিম।
অভিযোগ রয়েছে, হেমায়েত উল্লাহর মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগের অনুমোদন দেন ফজলুল করিম একা। এ সময়ে আইডিআরএর অপর একজন মাত্র সদস্য ছিলেন মো. কুদ্দুস খান। এ অনুমোদনে এ সদস্যের কোনো সম্মতি বা স্বাক্ষর নেয়া হয়নি। হেমায়েত উল্লাহর ফাইলটি অনুমোদনে স্বাক্ষর করেন ফজলুল করিম ও ৪ জন অস্থায়ী কর্মকর্তা।
বীমা খাতে গুজব রয়েছে, মোটা অংকের ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ অনুমোদন বাগিয়ে নেন হেমায়েত উল্লাহ।
আইডিআরএ’র বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী পদে হেমায়েত উল্লাহর অনুমোদন চাঞ্চল্যকর একটি ঘটনা। কোনো রকম যাছাই-বাছাই না করেই তার ফাইলটি অনুমোদন করা হয়।
আইডিআর সূত্রে জানা গেছে, যে কোন ফাইল অনুমোদন পেতে তা উত্থাপনের জন্য প্রথমে বোর্ডের অনুমোদন নিতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট ফাইলের কাগজপত্র যাচাই করবেন আইডিআরএ’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এরপর ফাইলটি সম্পর্কে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বোর্ডে উত্থাপন করে অনুমোদন অথবা চেয়ারম্যানসহ ৩ জন সদস্যের অনুমোদন নিতে হবে।
চেয়ারম্যানসহ ৩ সদস্য না থাকলে ফাইল অনুমোদন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে বলে জানান আইডিআরএ’র কর্মকর্তারা। এই দাফতরিক ধাপগুলোর কোনোটাই করা হয়নি হেমায়েত উল্লাহর অনুমোদনে।
এ ছাড়াও বীমা কোম্পানি (মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ) প্রবিধানমালা ২০১২ এর ধারা ৫ এর উপধারা ঘ শর্ত মোতাবেক হেমায়েতউল্লাহ ঋণ খেলাপি কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়ে বা অন্যভাবে সনদ নেয়া হয়নি।
বীমা আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রবিধানের গুরুত্বপূর্ণ এ ধারা লঙ্ঘন করে নিয়োগ অনুমোদন দেয়া হয়ে থাকলে তা বেআইনি হওয়ায় বাতিল হয়ে যাবে।
এ ছাড়া হেমায়েত উল্লাহ যেসব কাগজপত্র নিয়োগ অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছেন তার সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, রাতারাতি হেমায়েত উল্লাহর নিয়োগ অনুমোদন করার পিছনে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফের কতিপয় পরিচালক জোর লবিং করে। এম শেফাক আহমেদ চেয়ারম্যান হিসেবে ফিরে এলে তার অনুমোদন হবে না, এমনটা জেনেই শেফাক আহমেদ প্রথম মেয়াদ শেষে পদ ছেড়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুযোগটি নেন হেমায়েত। ফলে ফজলুল করিম ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পরের দিনই তারা এ অনুমোদন বাগিয়ে নেয়।
হেমায়েত উল্লাহ মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ অনুমোদন পাওয়ার পর বিভিন্নভাবে আর্থিক অনিয়মের সুযোগ করে দেন কোম্পানিটির মালিকপক্ষের জন্য। এতে ব্যাপকহারে আর্থিক লুটপাটে জড়িয়ে পড়ে তারা। লাইফ ফা- বন্ধক রেখে ঋণ নেয়া, নাম মাত্র প্রতিষ্ঠানের নামে অবৈধভাবে ঋণ দেয়া, মূল্য বেশী দেখিয়ে জমি কিনে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া, অবৈধ বিনিয়োগ, অবৈধ ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের অজুহাতে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটতে থাকে। হেমায়েত উল্লাহর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এসব ঘটে বলে কোম্পানির বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে ফজলুল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফাইল না দেখে কোনো কিছু বলা সম্ভব নয়। এছাড়া মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ যত তাড়াতাড়ি দেয়া যায় ততই ভালো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন তারা অনেক কিছুই বলবে। এ বিষয়ে বলার কিছু নেই। মিডিয়ায় তো তাদের নিয়েও নিউজ হচ্ছে।
বার বার চেষ্টা করেও হেমায়েত উল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সেল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর পরও কোন সাড়া দেননি তিনি।
হেমায়েত উল্লাহর নিয়োগ কতটা আইনসংগত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে, আইডিআর সূত্র জানায়।
তারিখ-২১ মে ২০১৫