ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবীমাকে এগিয়ে নিতে কর রেয়াত দিচ্ছে চীন সরকার

ব্যক্তি পর্যায়ের স্বাস্থ্যবীমা পলিসি কেনার ক্ষেত্রে কর রেয়াত দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীন সরকার।ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবীমা খাতকে চাঙা করে তুলতে এক পাইলট পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সরকারের সর্বশেষ এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশটির ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবীমায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ব্যবস্থায় কোন পলিসি ক্রেতার প্রিমিয়াম বছরে ২,৪০০ চীনা ইউয়ান বা ৩৯২ মার্কিন ডলারের কম হলে সে এ কর রেয়াত পাবে। সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অফ ফিন্যান্স অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স এর ডিন হাও ইয়ানসু বলেন, একজন ব্যক্তি যার মাসিক আয় ৫ হাজার চীনা ইউয়ান, এ কর রেয়াতের জন্য তার বছরে আয়কর কমে যাবে ১২০ ইউয়ান। জনগণকে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবীমা পলিসি কিনতে আগ্রহী করে তোলার জন্য প্রিমিয়াম পরিশোধে প্রাক-কর কমিয়ে দেয়ার পরীক্ষামূলক এ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে দেশটির সরকার।দেশটির রাষ্ট্রীয় পরিষদ তথা মন্ত্রীসভার নির্বাহী সভা শেষে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াঙ এতে সভাপতিত্ব করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়ামে কর রেয়াতের এ সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াঙ। এ পরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে বাণিজ্যিক স্বাস্থ্যবীমাকে এগিয়ে নেয়া যাতে জনগণকে আরও বেশী নিরাপত্তা দিতে সরকার পরিচালিত মৌলিক স্বাস্থ্যবীমা স্কিমে সহযোগী হিসেবে কাজ করতে পারে। ওষুধের দাম বাজারমূখী করার লক্ষ্যে অধিকাংশ ওষুধের দামে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের দীর্ঘদিনের নীতি তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরই এ ঘোষণা দিল চীন সরকার। ১ জুন থেকে এ ব্যবস্থা চালু হতে যাচ্ছে। ব্যক্তিগত চিকিৎসা বীমা কেনার প্রতি নাগরিকদের আগ্রহ বাড়াতে কর প্রণোদনার এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।ব্যক্তিগত চিকিৎসা বীমা এগিয়ে নিতে পারলে স্বাস্থ্য সেবা খাতের উন্নতি হবে। কর্মসংস্থান বাড়বে। চিকিৎসা সেবার মান বাড়বে এবং নাগরিক কল্যান মানেও আসবে উন্নয়ন। এ স্কিমের অধীনে স্বাস্থ্য বীমা ব্যবসায় কোম্পানিগুলোর সামনে উল্লেখযোগ্য উন্নতির সুযোগ আসবে। ইতোমধ্যে চায়না লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, পিঙ অ্যান ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি অফ চায়না, টাইক্যাঙ লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং সানশাইন ইন্স্যুরেন্স গ্রুপ বেসরকারী স্বাস্থ্যবীমা বাজারে নিজেদের উপস্থিতি আরও জোরদার করছে। চায়না ইন্স্যুরেন্স রেগুলেটরি কমিশন(সিআইআরসি)’র তথ্য অনুসারে এ বছরের প্রথম ৩ মাসে স্বাস্থ্যবীমায় রি-ইন্স্যুরেন্স করার আগে সরাসরি লিখিত প্রিমিয়ামের পরিমান ৬৫.২১ বিলিয়ন ইউয়ান।এটা আগের বছরের এ সময়ের তুলনায় ৩২.৬ শতাংশ বেশী। পিআইসিসি হেলথ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সঙ ফুক্সিং বলেন, ২০২০ সাল নাগাদ চীনের স্বাস্থ্য বীমা খাতে প্রিমিয়াম সংগ্রহ বছরে ৭০০ বিলিয়ন থেকে ১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান হয়ে দাঁড়াবে। উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ও জোরালো সম্ভাবনা থাকা সত্বেও চীনের ব্যক্তিগত হেলথ কেয়ার বাজার মার্কিন হেলথ কেয়ার বাজারের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে।চীনে গত বছর সংগৃহীত মোট প্রিমিয়ামের মাত্র ৮ শতাংশ স্বাস্থ্যবীমা খাত থেকে এসেছে। অথচ এ সময়ে মার্কিন বীমা বাজারে স্বাস্থ্য বীমা খাতের প্রিমিয়াম ৪০ শতাংশ।যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীন অবশ্যই অনেক নীচে রয়েছে। বর্তমানে চীনের বীমা বাজারে ক্ষুদ্র একটা অংশ দখল করে আছে চিকিৎসা বীমা। কর রেয়াত দেয়ার ফলে নাগরিকদের এক বিশাল অংশ যখন ব্যক্তিগত চিকিৎসা বীমা পলিসি কিনতে শুরু করবে তখন ব্যবসা পরিচালনায় নানা রকম সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে বীমাকারীদের। যদিও প্রিমিয়াম অনেক বেশী তার পরও এদের অধিকাংশই স্বাস্থ্যবীমা ব্যবসায় লোকসানের মূখে পড়বে। সিআইআরসি’র ভাইস-চেয়ারম্যান হুয়াঙ হঙ বলেন, বর্তমানে ব্যক্তিগতভাবে পরিশোধ করা মেডিক্যাল বিল তুলনামূলকভাবে খুব বেশি।এর কারণ বাণিজ্যিক স্বাস্থ্য বীমা কভারেজ স্বল্পতা। কাজেই পারিবারিক স্বাস্থ্যবীমা প্রসারে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। সংবাদ মাধ্যম জানায়, স্বাস্থ্যবীমাখাতকে আরও জোরদার করতে বেশকিছু পলিসি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন সরকার। তারিখ-১০ মে, ২০১৫