আইডিআরএ’র মিউচুয়াল গেম: ভারপ্রাপ্ত মূখ্যনির্বাহীদের পদে রাখতে জরিমানার বিধান

বেসরকারী বীমা কোম্পানিতে দীর্ঘ দিন মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের  বহাল রাখতে মিউচুয়াল গেম খেলছে বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগসাজশে বীমা আইন অনুসারে প্রশাসক নিয়োগ না দিয়ে সামান্য জরিমানা ধরে দিয়েছে আইডিআরএ। সম্প্রতি পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত মূখ্য নির্বাহী ওয়াসি উদ্দিন পদে রাখতে মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত দৈনিক ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বীমা আইনে মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ না দেয়ার কারণে এ ধরণের কোন শাস্তির বিধান নেই। বীমা আইন ২০১০ এর ৮০ ধারার ৪ উপধারায় বলা আছে, ‘বীমা কোম্পানীর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ একাধারে ৩ (তিন) মাসের অধিক সময়ের জন্য শূন্য রাখা যাইবে নাঃ  তবে শর্ত থাকে যে, কর্তৃপক্ষ অপরিহার্য পরিস্থিতি বিবেচনায় উক্ত সময় সীমা আরো ৩ (তিন) মাস বর্ধিত করিতে পারিবে৷’ উপধারা ৫ এ বলা হয়েছে, ‘উপ-ধারা (৪) এ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোন বীমা কোম্পানীর মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ পূরণ করা না হইলে কর্তৃপক্ষ কোম্পানীর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের জন্য একজন প্রশাসক নিয়োগ করিতে পারিবে এবং কর্তৃপক্ষ যেইরূপ নির্ধারণ করিবে কোম্পানী তদানুযায়ী উক্ত প্রশাসকের বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদির যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করিবে৷’ আইডিআরএ’র নতুন বিধান অনুসারে মূখ্য নির্বাহী পদের অযোগ্য হওয়া সত্বেও দৈনিক ৫ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে পদ্মা লাইফে মূখ্য নির্বাহী পদে থাকতে পারবেন ওয়াসিউদ্দিন। এর আগে মূখ্য নির্বাহী পদে যোগ্যতার শর্তপুরণ না করায় তাকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা মূখ্য নির্বাহী পদে দায়িত্ব পালনের অনুমোদন বাতিল করলেও পদ্মা লাইফে মূখ্য নির্বাহী নিয়োগে আইডিআরএর সর্বশেষ নির্দেশে এ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আইডিআরএ’র নির্দেশ অনুসারে ১মে থেকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা দিলেই তিনি ওই পদে থাকতে পারবেন। পদ্মা ইসলামী লাইফে মূখ্য নির্বাহীর পদ শূন্য হয়েছে ২০১৪ সালে ১৯ মার্চ। ওই দিন থেকে ভারপ্রপ্ত মূখ্য নির্বাহী হিসেবে দায়িত্বে আছেন ওয়াসিউদ্দিন। গত ১ এপ্রিল পদ্মা লাইফের পরিচালনা পরিষদের সঙ্গে মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ দেয়া সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে ৫ হাজার টাকা জরিমানা দেয়ার অভিনব নির্দেশ দেয়া হয়। এতে বলা হয়, ১ মে থেকে মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ দেয়া না হলে পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। তবে দ্বীর্ঘদিন মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ না দেয়ার শাস্তি হিসেবে পরিচালনা পরিষেদের সকল সদস্যকে এক লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। বীমা সংশ্লিষ্টদের মতে, ৬ মাসের বেশি সময় মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ না দেয়ায় জন্য এ ধরনের কোনো শাস্তির বিধান বীমা আইনে নেই। এক্ষেত্রে প্রশাসক নিয়োগের বিধান রয়েছে। আইডিআরএর এ ধরনের নির্দেশ মূলত অযোগ্য ব্যক্তিদের মূখ্য নির্বাহী পদে থাকার একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের অজ্ঞ সিদ্ধান্তে দুর্নীতিবাজ অযোগ্যদের হাতে বীমা খাতের নেতৃত্ব থাকবে। যা খাতটির উন্নয়নে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করবে। বীমা আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের নির্দেশের পরে কোনো বীমা কোম্পানি দ্বীর্ঘদিন মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ না দিলে ওই কোম্পানির ‍বিরুদ্ধে আর কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সম্প্রতি ইন্স্যুরেন্সে এ্যাসোসিয়েশনেও এমন অভিমত দেন। এ্যাসোসিয়েশনের মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ জরিমানা আইন সম্মত নয়। আইন মেনে জরিমানা না করায় তা বীমা খাতে চরম বিশৃংখলার সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে, লাইফ ও ননলাইফ বীমা খাতে মিলে প্রায় ১৬টিরও বেশি বীমা কোম্পানি চলছে ভারপ্রাপ্ত মূখ্য নির্বাহী দিয়ে। এর মধ্যে রয়েছে-জেনিথ ইসলামী লাইফ, আলফা ইসলামী লাইফ, এনআরবি গ্লোবাল লাইফ, চার্ডার্ড লাইফ, গার্ডিয়ান লাইফ, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, স্ট্যার্ন্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স। তারিখ-২৬ এপ্রিল -২০১৫