অবৈধভাবে পদে আছেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যানসহ ৪ পরিচালক

 বীমা আইন অবজ্ঞা করে চেয়ারম্যানসহ ৪ পরিচালক পদ আঁকড়ে আছেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে। কোন ব্যাংকের পরিচালক থাকা অবস্থায় বীমা কোম্পানির পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছে না ফারইস্ট লাইফের এ ৪ পরিচালক। তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালক পদে রয়েছেন। কোম্পানিটির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনেও ওই ৪ পরিচালকের ব্যাংকের পরিচালক থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ অদৃশ্য কারণে  অবৈধভাবে পদে থাকা এ পরিচালকদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষও (আইডিআরএ) । এরা হলেন, কোম্পানিটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। তিনি মেঘনা ব্যাংকের পরিচালক। কে. এম খালেদ ও এম. এ খালেক দুইজনই প্রাইম ব্যাংকের পরিচালক ও ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান। পরিচালক হেলাল মিয়া মিডল্যান্ড ব্যাংকের পরিচালক। আইডিআরএকে ম্যানেজ করেই তারা পদে রয়েছেন, এমন অভিযোগ রয়েছে। একটি কোম্পানির চেয়ারম্যান আইন ভঙ্গ করে পদে রয়েছেন, আরও ৩ জন অবৈধভাবে পদ ধরে আছেন অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা কিছুই করছে না এটা শুধূ বাংলাদেশেই সম্ভব।এটা নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকি করার যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে বলে মন্তব্য বীমা সংশ্লিষ্টদের। চেয়ারম্যানসহ অবৈধ পরিচালকদের বিরুদ্ধে কোম্পানিটির টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে গোজামিল হিসেব দেখিয়ে ২ বছরে কোম্পানির গ্রাহকদের ৩৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে, এমন খবরও এসেছে পত্র-পত্রিকায়। এছাড়া বীমা দাবি পরিশোধ না করা, জমি কেনায় অতিরিক্ত দাম ও অবৈধ ব্যয় দেখিয়ে গ্রাহকের বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও ওঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। তাদের আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে আইডিআরএর কাছে তথ্য রয়েছে। শিগগিরই কোম্পানির আর্থিক অনিয়মম তদন্তে নিরিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে বলে আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে। বীমা আইন ২০১০ এর ৭৫ ধারায় বলা হয়েছে,‘আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহাই থাকুক না কেন, কোনো বীমা কোম্পানির পরিচালক একই শ্রেণীর বীমা ব্যবসার জন্য নিবন্ধীকৃত অন্য কোন বীমাকারীর বা কোন ব্যাংক কোম্পানির বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হইতে পারিবে না।’ এ আইনের প্রেক্ষিতে ২০১২ সালে ২৬ জানুয়ারি এক চিঠিতে যুগপৎভাবে থাকা পরিচালকদের পদ ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয় আইডিআরএ। পরিচালকদের পদত্যাগের সময় বেধে দেয়া হয় ২৯ ফেব্রুয়ারি। চিঠিতে বলা হয় , ‘আপনার প্রতিষ্ঠানের যে পরিচালকেরা বীমা আইন লঙ্ঘন করে অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যুগপৎভাবে পরিচালক পদে বহাল আছেন, তাঁদের ওই পদ পরিত্যাগ করতে হবে। কারণ, পরিচালকেরা ২০১০ সালের বীমা আইনের ৭৫ ধারা লঙ্ঘন করছেন।’ এ বিষয়ক যাবতীয় তথ্য দ্রুততম সময়ে আইডিআরএর কাছে পাঠানোর কথাও বলা হয়েছে চিঠিতে। ২৯ ফেব্রুয়ারির পর থেকে এই ধারা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ৫০ ও ১৩৪ ধারায় ব্যবস্থা নেয়ার হুমকিও দেয় আইডিআরএ। এদিকে,বীমা আইন ২০১০ এর ৫০ এর ১ উপধারা খ তে বলা হয়েছে,‘(খ) কর্তৃপক্ষের নিকট যদি এইরূপ বিশ্বাস করিবার কারণ থাকে যে, চেয়ারম্যান, কোন পরিচালক, উপদেষ্টা, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, যে নামেই অভিহিত হউক না কেন, তাহার পদে অধিষ্ঠিত থাকায় কোন আইনের বিধান লংঘিত হইয়াছে এবং অনুরূপ লংঘন এমন প্রকৃতির যে, বীমাকারীর সহিত তাহাদের জড়িত থাকা বীমাকারীর বা বীমা পলিসি গ্রাহকের স্বার্থে ক্ষতিকর বা স্বার্থের পরিপন্থী বা ক্ষতিকর হইতে পারে অথবা অন্য কোনভাবে অবাঞ্ছিত হয়, তবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান করিয়া তাহাদিগকে নিজ নিজ পদ হইতে অপসারণ করাঃ’ এছাড়াও কাজে বিরত রাখাসহ আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। অন্যদিকে ১৩৪ ধারা অনুযায়ী, আইন লঙ্ঘনকারীকে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার বিধান রয়েছে। লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে প্রতিদিনের দেরির জন্য বাড়তি জরিমানা গুনতে হবে ৫ হাজার টাকা। অবৈধভাবে পদে থাকা এসব পরিচালকদের পদ ছেড়ে দিতে নির্দেশ দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিলেও কার্যত কোন ব্যবস্থা নেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। মূলত বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ দেখতে হয়তো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না আইডিআরএ অভিযোগ বীমা সংশ্লিষ্টদের। এ বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. কুদ্দুস খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরিচালক নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি আমাদের এখতিয়ার ভুক্ত না। এ বিষয়ে জয়েন্ট স্টক কোম্পানির রেজিস্ট্রার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থা নিতে পারে। আপনারা তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। বক্তব্যটি হাস্যকর মন্তব্য করে বিশেজ্ঞরা বলেন, তাহলে আইডিআরএ এ বিষয়ে এর আগে পর পর ২ বার চিঠি দিয়েছে কেন? ২০১২ সালে অবৈধ পরিচালকদের পদে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলে অনেক কোম্পানির পরিচালকই পদ ছেড়ে দেন। পদে যদি থাকাই যেত তাহলে তারা পদ ছাড়তেন না। তাদের মতে, পরিচালক বিষয়ে বীমা আইন ও ব্যাংক আইনের জটিলতার কথা তোলার সুযোগ নেই।প্রশ্নটি বীমা কোম্পানির পরিচালক নিয়ে, ব্যাংকের পরিচালক নিয়ে নয়।এ ক্ষেত্রে বীমা আইন বলবৎ হবে। বীমা আইনে স্পষ্ট করেই উল্লেখ আছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা একই সঙ্গে বীমা কোম্পানির পরিচালক পদে থাকতে পারবে না। ব্যাংক আইনে যদি বীমা কোম্পানির কোন পরিচালক একই সঙ্গে কোন ব্যাংকের পরিচালক থাকতে পারে সে ব্যাংকের পরিচালক থাকুক। কিন্তু বীমা কোম্পানিতে পরিচালক থাকতে পারবে না। এই আইনের বলে অবৈধভাবে পদে থাকা পরিচালকদের বিষয়ে আইডিআরএ ব্যবস্থা নিতে পারে। অন্য কোনো আইনে কি আছে তা বিবেচনা করার বিষয় আইডিআরএর নয়। আইডিআরএর কাজ বীমা আইনের বাস্তবায়ন। তবে এ বিষয়ে কোম্পানি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেমায়েত উল্লাহর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের পাওযা যায়নি। এর আগেও ২০১১ সালের ২ অক্টোবর ব্যাংকের পরিচালকদের বীমা কোম্পানির পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইডিআরএ। কর্তৃপক্ষের তৎকালীন সদস্য মো. ফজলুল করিম স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বীমা আইন, ২০১০-এর ৭৫ ধারা অনুযায়ী, এখন থেকে কোনো বীমা কোম্পানির পরিচালক একই শ্রেণীর বীমা ব্যবসার জন্য নিবন্ধনকৃত অন্য কোনো বীমা কোম্পানি এবং ব্যাংক কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না। এখানে ব্যাংক কোম্পানি বলতে ব্যাংক আইন, ১৯৯১-এ সংজ্ঞায়িত ব্যাংক কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বলতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩-এ সংজ্ঞায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়েছে। তারিখ -১২ জানুয়ারি ২০১৫