নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ও বীমা শিল্পের ভূমিকা বৃদ্ধির লক্ষে ২০১১ সালের এইদিনে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করে সরকার। সে সময় যুগপোযুগী বীমা আইন-২০১০ এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন-২০১০ এর মাধ্যমে একজন চেয়ারম্যান ও দুইজন সদস্য নিয়োগের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ এই দিনে যাত্রা শুরু করে। আজ বৃহস্পতিবার বীমা কর্তৃপক্ষের ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। অর্থাৎ আজ থেকে ৭ম বছওে পদার্পন করলো আইডিআরএ। এ উপলক্ষ্যে আজ বীমা কর্তৃপক্ষ এক মতবিনিময় সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। মতবিনিময় ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম. শেফাক আহমেদ, একচ্যুয়ারি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কর্তৃপক্ষের সদস্য জুবের আহমেদ খাঁন, সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা এবং মো. মুরশিদ আলম। সভায় সভাপতিত্ব করেন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. কুদ্দুস খান।
এছাড়া দেশের বীমা ব্যক্তিত্ব সাধারণ বীমা কর্পোরশেন ও জীবন বীমা কর্পোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. সোহরাব উদ্দিন, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম (সাবেক চেয়ারম্যান, ব্যাংকিং এবং ইন্স্যুরেন্স বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এবং জীবন বীমা কর্পোরেশনের বর্তমান চেয়ারম্যান ড. সেলিনা আফরোজ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট বি এম ইউসুফ আলীসহ সাধারণ বীমা ও জীবন বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় সূচনা বক্তব্যে মো. কুদ্দুস খান গত ছয় বছরের কর্তৃপক্ষের সাফল্য ও ব্যর্থতা তুলে ধরে বলেন, বীমা শিল্পের প্রসারে সকলের একসাথে কাজ করতে হবে। এ সময় তিনি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বীমা শিল্পের উন্নয়নের প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বীমা শিল্পে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সরকারের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বীমা শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিদেশগামী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক বীমা করার জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া বীমা শিল্পের উন্নয়নে এডিবি এবং বিশ্ব ব্যাংক (ডব্লিওবি) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিবিধ প্রজেক্ট কাজ করছে। ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমাতে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের কারণে এ শিল্পের ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমেছে ফলে পলিসি হোল্ডরসহ কোম্পানি সংশ্লিষ্ট সকলে তার সুফল পাচ্ছে। সরকারের নির্দেশে কর্তৃপক্ষ এবং বীমা কোম্পানি ও কর্পোরেশনের সহযোগীতার ফলে বীমা মেলা, ২০১৬ এবং উন্নয়ন মেলা ২০১৭ তে অংশগ্রহণ, বীমা দাবি নিষ্পত্তি, কর্তৃপক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তি গঠন ও তার কার্যক্রম পরিচালনার ফলে বীমা শিল্পের সুনাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম. শেফাক আহমেদ কর্তৃপক্ষের ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বীমা খাতের সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে বলেন, কোম্পানির উন্নততর প্রোডাক্ট নিয়ে আসা, বীমা দাবি নিষ্পত্তি করা, সুসাশন প্রতিষ্ঠা করার, ব্যাংক ইন্স্যুরেন্স করা, পলিসি হোল্ডারদের স্বার্থ অক্ষুন্ন রাখাতে হবে।
বিষয়ে সকলকে পরামর্শ দেন। গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে হবে এবং গ্রাহককে বীমামুখী করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে মাত্র শতকরা ৩ থেকে ৪ ভাগ মানুষ বীমার আওতাভূক্ত কিন্তু শুধুমাত্র ল্যাপস্ ও পেইড আপ এর গ্রাহক সংখ্যা ধরলে তা কয়েকগুন বৃদ্ধি পাবে। বীমামুখী হলে আমাদের পাশ্ববর্তী দেশগুলোর ন্যায় আমাদের বীমা পেনিটেশন অনেক বাড়বে। তিনি বলেন, বীমা কর্তৃপক্ষ ওঅওঝ এর সদস্য হয়েছে, প্রথম সার্ক রেগুলেটরস্ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ, মানি লনন্ডারিং নিয়ে কর্তৃপক্ষের গৃহীত উদ্যোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা এবং পরিচালনা পর্ষদদের নিয়ে সভা এবং নির্দেশনাসহ বীমা শিল্পের স্বার্থে অনেক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষে কর্তৃক গৃহীত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ব্যবস্থাপনা ব্যয় বিষয়ে ২০১২ সাল হতে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের কারণে লাইফ বীমা কোম্পানিসমূহের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় উল্লেখযোগ্যহারে কমে গেছে এবং অনেকের ক্ষেত্রে শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এ ব্যয় আরো কমে যবে ফলে বীমা গ্রহীতা এবং কোম্পানি ও কোম্পানির এমপ্লয়িরা উপকৃত হচ্ছে। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিসমূহের ব্যবস্থাপনা ব্যয় বিষয়ে অডিট করার জন্য কর্তৃপক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। এতে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য তিনি নন-লাইফ বীমা কোম্পানিসমূহের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদেও প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এর ফলে কোম্পানির প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে এবং কোম্পানি সংশোধনের সুযোগ পাবে।
তিনি বলেন, সকল বীমা কোম্পানি এবং কর্তৃপক্ষকে আইটি এর আওতায় আনার জন্য কাজ চলছে। বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় কর্তৃপক্ষের আইটি উন্নত করার কাজ চলছে এবং ধীরে ধীরে সকল বীমা কোম্পানিকে এর আওতায় আনা হবে মর্মে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়া মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্বের সাথে কাজ করার আহ্বান জানান।
বীমা ব্যক্তিত্ব ড. মো. সোহরাব উদ্দিন জানান, বীমা আইনকে আরো যুগপোযুগী করা, এই আইনের প্রণীত বিধি ও প্রবিধানসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নে উদ্যেগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, আইনের বাস্তবায়ন এবং তার সঠিক প্রয়োগই পারে বীমা শিল্পের স্থিতি অবস্থায় নিয়ে আসতে। এখনও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিধি ও প্রবিধানমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়নি। সেগুলো আসলে বীমা শিল্প আরও উন্নতি করবে মর্মে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান বলেন, এ শিল্প নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন একাডেমিক পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন এবং এ শিল্পের দক্ষ জনবল তৈরিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাংকিং এর পাশাপাশি ইন্স্যুরেন্স বিষয়ে বিভাগ চালু হয়। ইতোমধ্যে একচ্যুয়ারি বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স চালু হয়েছে এবং নন-লাইফ এর বিষয়ে কোর্স চালু করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া তিনি বলেন যে, বীমা শিল্পে দক্ষ জনবল এবং আইটি এর উন্নয়ন হলে দেশে এ শিল্পের প্রসারে ব্যাপক সম্ভাবনা আছে।
সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা জানান যে, কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার পর হতে কর্তৃপক্ষের জনবল সংকটের কারণে কর্তৃপক্ষে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক কার্যের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেননি। তবে এতটুকু সাফল্য এসেছে সকলের প্রচেষ্ঠার ফলে।
জুবের আহমেদ খাঁন বলেন, গত ছয় বছরে কর্তৃপক্ষ অনেক উন্নয়মূলক কাজ করেছে। বীমা শিল্পে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মহোদয়ের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং আরও উন্নয়নের জন্য সকলের সহযোগীতা কমনা করেন।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট বলেন, বীমা শিল্পের উন্নয়নে তার দৃঢ় মনোভাব সাময়িকভাবে বৈরি মনে হলেও পরবর্তীতে তা বীমা শিল্পের উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। ফলশ্রুতিতে লাইফ কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমেছে, বীমা শিল্পের নিন্মের টায়ারগুলো তিনস্তরে চলে এসেছে।
উল্লেখ্য, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের পক্ষে মো. হেমায়েত উল্লাহ, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুঃ কো. লি., জনাব পৃথ্বীশ কুমার রায়, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, রূপালী ইন্স্যুরেন্স কো. লি. এবং আহসানুল হক টিটু, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুঃ কোঃ লিঃ বক্তব্য রাখেন।