ইসলামী বীমা ও প্রচলিত বীমার পার্থক্য কি কি

বীমা বিষয়ে একটি পাঠক সমাদৃত বই “ইসলামী জীবন বীমার জানা অজানা”। ২০১২ সালে প্রকাশিত বইটি লিখেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট (বিআইপিডি)’র মহাপরিচালক কাজী মো. মোরতুজা আলী। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭০ সালে ব্যাংক অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯৫ হতে ২০০২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সাত বছর তিনি বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন

কাজী মো. মোরতুজা আলী ইসলামিক ইকোনমিক্স রিসার্চ ব্যুরোর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ফেলো। পেশাগত দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে তিনি ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট, শিপিং এবং বীমার উপর উচ্চতর ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি নরওয়েজিয়ান শিপিং একাডেমির (অসলো) একজন ফেলো এবং চার্টার্ড ইন্স্যুরেন্স ইনস্টিটিউট লন্ডন এর এসোসিয়েট (এসিআইই) । এশিয়া প্যাসিফিক রিস্ক এন্ড ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন সিংগাপুর এবং বাংলাদেশ সোসাইটি অব ট্রেনিং এন্ড ডেভেলপমেন্টের সদস্য।

তার প্রকাশিত অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে- “ইসলামী জীবনবীমা বর্তমান প্রেক্ষিত”, “বিশ্বাস ও আত্মউন্নয়ন”, এবং “Introduction to Islamic Insurance”, “কুরআনের আলোয় আলোকিত মানুষ” ও “চলার পথে ইসলাম”। এছাড়া বেশ কিছু বই প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পাঠকদের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে কাজী মো. মোরতুজা আলী’র ইসলামী জীবন বীমার জানা অজানা’ বই থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হুবহু ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো। আজকের প্রশ্ন ও উত্তরপর্বে থাকছে-

ইসলামী বীমা ও প্রচলিত বীমার পার্থক্য কি কি?

উত্তর: জীবন বীমা পলিসি থেকে পারিবারিক তাকাফুল স্কিমের বিশেষ পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ঝুঁকি মোকাবেলার (কভার) জন্য পৃথক করে রাখা অংশ থেকে বিনিয়োগ অংশ আলাদা করা। অংশগ্রহণকারীর একাউন্টে থাকা তহবিলের বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত লাভ অংশগ্রহণকারী ও প্রতিষ্ঠান ভাভাভাগি করে করে নেয়। তাকাফুল ব্যবসার সবচেয়ে তাৎপর্যমণ্ডিত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে লভ্যাংশ ভাগাভাগি করে নেয়া। সুতরাং, তাকাফুল একাউন্টিং সিস্টেমের নির্ভুলতা ও স্বচ্ছতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

তাকাফুল স্কিমের অংশগ্রহণকারীকে স্কিমের বেনিফিটসমূহ গ্রহণ এবং তার মৃত্যুর পর তা তার উত্তসূরিদের মধ্যে ইসলামী উত্তরাধিকার আইন অনুসারে বণ্টন করে দেয়ার জন্য একজন নমিনি মনোনীত করতে হয়। নমিনি স্রেফ একজন ট্রাস্টি (জিম্মাদার) হিসেবে বেনিফিটসমূহ গ্রহণ করে থাকেন। নমিনি যদি অ-মুসলিম হয়ে থাকেন, তবে তিনি বেনিফিশিয়ারি সমূহের নিরঙ্কুশ মালিক হবেন। অবশ্য কোনো মুসলমান দান হিসেবে কাউকে হিবা (উপহার) হিসেবে স্কিমের বেনিফিটসমূহ দিয়ে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে দানগ্রহণকারী তাকাফুল বেনিফিটসমূহের নিরঙ্কুশ বেনিফিশিয়ানি হন।

প্রচলিত বা সনাতন জীবন বীমা পলিসিতে এজেন্সি কমিশন দেয়া হয় পলিসিহোল্ডারের প্রিমিয়াম থেকে অন্যদিকে তাকাফুল প্রতিষ্ঠান মনে করে এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাই এজেন্সি কমিশন শেয়ারহোল্ডারদের তহবিল থেকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদান করা প্রয়োজন। অবশ্য চুক্তির সময় প্রতিষ্ঠান ও অংশগ্রহণকারীর তহবিল থেকে পুরোপুরি কিংবা আংশিকভাবে এজেন্সি কমিশন প্রদান করা যেতে পারে। বিকল্প হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফিস ধার্য করা যেতে পারে।

প্রচলিত জীবন বীমা চুক্তিতে কোনো পলিসি সমর্পণ মূল্য (সারেন্ডার ভেল্যু) পলিসিহোল্ডারের প্রদান করা প্রকৃত চাঁদার চেয়ে অনেক কম হয়। কিন্তু তাকাফুল চুক্তিতে স্কীমের সমর্পণের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীর একাউন্টে (বিনিয়োগ অংশ) জমা হওয়া সকল অর্থ এবং বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত সকল লাভের অধিকারী হবে অংশগ্রহণকারী। তাবে ‘তাবাররু’ হিসেবে তিনি যে অংশটি দান করেছেন, তা ফেরত দেয়া হবে না।

তাকাফুল স্কিমে অংশগ্রহণকারীরা যে চাঁদা প্রদান করেন তা পুরোপুরি বাজেয়াপ্ত হয় না। যদি কিস্তি প্রদানে অংশগ্রহণকারী অনিয়মিত হয়ে পড়েন কিংবা সমর্পণ মূল্য দাবি করেন, সেক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীর একাউন্টে যেসব চাঁদা সঞ্চিত হয়েছে, তা লাভসহ ফেরত দেয়া হবে। অবশ্য তাকাফুল প্রতিষ্ঠান স্কিম থেকে প্রত্যাহারজনিত কারণে চার্জ হিসেবে একটি যৌক্তিক ফি নিতে পারেন।